নিজস্ব সংবাদদাতা: কুখ্যাত সেই জ্ঞানেশ্বরী কান্ড! জনসাধারণের কমিটি সহায়তা নিয়ে মাওবাদীরা সেদিন জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে শিশু নারী সহ ১৫০জন যাত্রীর প্রাণ নিয়েছিল। এক যুগ আগে ঘুমন্ত নিরীহ মানুষগুলোর সেই নিষ্ঠুর পরিণতি স্তম্ভিত করেছিল জঙ্গলমহল সহ সারা দেশকে। কিন্তু তাকেই ব্যবহার করে নিজের দাদা কে মৃত সাজিয়ে ক্ষতিপূরণ নেওয়ার পাশাপাশি চাকরি আদায় করে বহাল তবিয়তে রয়েছে বোন। এমন ঘটনা নজরে আসায় স্তম্ভিত ভারতীয় রেলের কর্তারা। আর এই নিপুণ জালিয়াতি করতে ব্যবহার করা হয়েছে জাল ডি.এন.এ রিপোর্ট। এমনটাই জানা যাচ্ছে এখনও অবধি। ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারি সংস্থা সিবিআই(CBI). তাঁরা হেফাজতে নিয়েছে ‘মৃত’ ব্যক্তি ও তাঁর বাবাকে।
১১ বছর আগের সেই ঘটনায় রেলের পক্ষ থেকে মৃতের পরিবারকে টাকা এবং এবং একজনকে চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করে রেল। সেই বাবদ ৪লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও চাকরি পেয়েছিলেন কলকাতার জোড়াবাগান এলাকার এক মহিলা মহুয়া পাঠক । মহুয়ার দাবি ছিল
সেই দুর্ঘটনায় অভিশপ্ত জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের যাত্রী ছিলেন তাঁর দাদা অমৃতাভ চৌধুরী। জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান অনেকেই। দুর্ঘটনার অভিঘাতে দলা পাকিয়ে যাওয়া বহু মৃতদেহ শনাক্ত করা যায়নি। ঠিক যেমনটা চেনা যায়নি অমৃতাভ চৌধুরীর দেহও। এক্ষেত্রে মৃতদেহ গুলির ডি.এন.এর সাথে দাবি করা পরিবারগুলির ডি.এন.এ মিলিয়ে ক্ষতিপূরনের ব্যবস্থা করা হয়।
‘মৃত’ অমৃতাভর পরিবার যে ডি.এন.এ রিপোর্ট দিয়েছিল তাতে অমৃতাভর ডি.এন.এ মিলে যায়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ দক্ষিণ-পূর্ব রেল নগদ ৪ লক্ষ টাকা দেয়। অমৃতাভর বিবাহিত বোন মহুয়া পাঠককেও রেলে চাকরি দেওয়া হয় বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। গত ১০বছর ধরে চাকরিও করছেন মহুয়া। একসাথে এতটা নগদ অর্থ ও বিবাহিত বোনের চাকরি হাতে আসায় অমৃতাভ জীবিত থাকার খবর ঘুণাক্ষরেও প্রকাশ করেনি পরিবার । মহুয়া দেবী পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনে চাকরি করে যাচ্ছেন। তাঁর চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় স্বভাবতই দাদার মৃত্যুর কারনে চাকরি পাওয়ার বিষয়টিও জানাজানি হয়।
মৃত দাদার ক্ষতিপূরণ নিয়ে যে তিনি চাকরি করছেন এটা জানার পর অনেকের সন্দেহ হয়, বিশেষ করে কেউ কেউ হয়ত ব্যক্তি গত স্তরে বিষয়টি খতিয়ে দেখেনও। এঁদেরই কেউ দক্ষিণ পূর্ব রেলের ভিজিল্যান্সকে বিষয়টি জানায়।ভিজিল্যান্স প্রাথমিক সত্যতা যাচাই করে সিবিআইকে আবেদন করে তদন্ত শুরু করার এবং তখনই প্রকাশ হয় রেলের খাতায় মৃত অমৃতাভ চৌধুরী জীবিত রয়েছেন। তৎক্ষণাৎ সিবিআই অমৃতাভ চৌধুরী এবং তাঁর বাবা মিহির চৌধুরীকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়টি স্পষ্ট হয়। তবে বিষয়টি গুরুতর হলেও রেলের গাফিলতির কথাও উঠে আসছে তদন্তে।
মৃতদেহ শনাক্ত না হওয়ায় ক্ষতিপূরণ এবং চাকরি উভয়ই ডিএনএ রিপোর্টের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছিল। রেল আরও জানিয়েছে, ডি.এন.এ সরবারহ করে রাজ্য পুলিশ। এটি তাদের একতিয়ারভুক্ত নয়।দক্ষিণ পূর্ব রেলের সিপিআরও জানান “মামলাটি বহু পুরনো তাই খতিয়ে দেখা হবে।” সিবিআই সূত্রে খবর প্রয়োজনে মহুয়া দেবীকেও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সিনেমার স্ক্রিপ্ট যে বাস্তবেও দেখা যেতে পারে তার প্রমান এই ঘটনায়। যদিও ঘটনায় রেল এবং রাজ্য দু’তরফেই কেউ না কেউ জড়িয়ে থাকার সম্ভবনা রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। তাঁদের মতে ভেতরের লোক ছাড়া এই জালিয়াতি সম্ভব নয়।