নিজস্ব সংবাদদাতা: ২দিনের টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ড এবং ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির ২টি গ্রামপঞ্চায়েতের অসংখ্য গ্রাম। সব মিলিয়ে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ জলবন্দী হয়ে পড়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামতে হয়েছে NDRF বা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে। ঘাটাল পৌরসভা ও সেচদপ্তরের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি নৌকা নামানো হয়েছে। জলের তলায় পানীয়জলের উৎস ফলে বিভিন্ন জায়গায় পানীয়জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
এদিকে ঘরের মধ্যে জল ঢুকে পড়ায় বহু জায়গাতেই মানুষকে দেখা গিয়েছে বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিতে। ছাদেই রান্নাবান্না করতে হচ্ছে মানুষকে। আর এরই মধ্যে খবর এসেছে অন্ততঃ তিনটি ব্যারেজ থেকে জল ছাড়তে চলেছে ডিভিসি(DVC)। ফলে আরও জল ঢুকে পরিস্থিতি ঘোরালো করতে চলেছে এই আশঙ্কায় ঘাটালবাসী। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে বুধ এবং বৃহস্পতিবার দক্ষিণবঙ্গে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং হয়েই চলেছে। এরফলে ঘাটালের নিজস্ব জল ছাড়াও উচ্চ অববাহিকা বিশেষ করে বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর এলাকার জল হুহু করে নামছে খাল বিল ভরিয়ে ঝুমি এবং শিলাবতী নদীতে। এই দুটি নদী কার্যত ঘাটালকে বেষ্টন করে রেখেছে।
দুই নদীতে জলস্তর এতটাই বেড়েছে যে নদীর বাঁধ উপচে ঘাটাল পুরসভার ১৭টি ওয়ার্ডের ১২টি ওয়ার্ডেই জল ঢুকে পড়েছে, প্লাবিত হয়েছে মনসুকা ১ এবং ২ গ্রামপঞ্চায়েতের গ্রামের পর গ্রাম। ওই পৌর এলাকার রাস্তাঘাট প্রায় হাঁটু থেকে কোমর জলের মধ্যে রয়েছে। বহু মানুষকেই ওপর তলায় কিংবা বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিতে হয়েছে। যাঁদের সেই উপায় নেই তাঁদেরকে উদ্ধার করে স্কুল বা আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে হয়েছে। পুরসভা জানিয়েছে সাধারণভাবে এই জল দু’তিনদিনের মধ্যেই নেমে যাওয়ার কথা কিন্তু এখনও বৃষ্টি হচ্ছে তার সঙ্গে বিপদ হিসাবে দেখা দিয়েছে ডিভিসির জলছাড়ার ঘটনা। জানা গেছে ডিভিসি তাদের মাইথন থেকে এই মুহূর্তে ১৪৩০০একর ফিট জল ছাড়ছে। একইভাবে পাঞ্চেত থেকে ২২৬৪৩একর ফিট জল ছাড়া হচ্ছে। উপরের দুই জলাধার থেকে থেকে জল ছাড়ার পর দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকেও বিপুল পরিমান জল ছাড়া শুরু হয়েছে। এই মুহূর্তে দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে ৩৯ হাজার ৯০০ কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে।
এই জল দ্বারকেশ্বর ও কাঁসাইনদী দিয়ে বয়ে ফের শিলাবতী ও ঝুমি নদীর গর্ভকে আরও ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুলবে ফলে আরও বিস্তীর্ণ এলাকা জলের তলায় চলে যাবে পাশাপাশি ইতিমধ্যেই জলমগ্ন হয়ে থাকা এলাকায় জলস্তর বাড়তে শুরু করবে। সঙ্গে কাঁসাই ও রূপনারায়ন সূত্রে দাসপুর এলাকার মানুষের বিপদ বাড়বে। সেচ দপ্তরের কর্তারা জানিয়েছেন এখনও কোথাও বাঁধ ভাঙার খবর না থাকলেও বেশকিছু এলাকায় নদী বাঁধ উপচে জল ঢুকছে। সেই এলাকায় যাতে বাঁধের ক্ষতি না হয় তার জন্য নজর রাখছে সেচ দপ্তর। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৈরি আছেন তাঁরা।
অন্যদিকে ঘাটাল শহর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া গ্রামগুলির অধিবাসীরা যাতে জরুরী প্রয়োজনে শহরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন সে কারণে বেশ কিছু নৌকা নামানো হয়েছে। ঘাটাল পৌর এলাকায় নৌকা নামিয়েছে পুর প্রশাসন। ঘাটালের কিছু অধিবাসী নিজস্ব ডোঙা ও ডিঙি ব্যবহার করছেন বাজার হাট করার জন্য। গ্রামগুলিতে পানীয়জল সরবারহ করার জন্য ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রামপঞ্চায়েত উদ্যোগ নিয়েছে।