নিজস্ব সংবাদদাতা: শেয়ালের উৎপাত থেকে গোয়াল ঘরে আশ্রয় হাঁসের কিন্তু সে হাঁস গেল অজগরের পেটে! এমনটাই ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশিয়াড়ী থানা এলাকায়। সোমবার কাক ভোরে এক গৃহস্থের গোয়ালঘর থেকে উদ্ধার হওয়া অজগর সাপকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। বনদপ্তরের কর্মীরা সোমবার ঘটনাস্থলে যখন সাপটিকে উদ্ধার করেন ততক্ষনে দু’দুটি হাঁস গিলে ডিনার শেষ করে লম্বা ঘুম শেষ করে বোধহয় সকালের ব্রেকফাস্ট খুঁজছিল।
সাপটি উদ্ধার হয়েছে কেশিয়াড়ী পঞ্চায়েত সমিতির খাজরা গ্রাম পঞ্চায়েতের বাগডিয়াশোল গ্রামের এক গৃহস্থ দুলাল চন্দ্র দুয়ার গোয়াল ঘর থেকে। দুলাল বাবু জানিয়েছেন, “সম্ভবত রাতের দিকে অজগর সাপটি গোয়াল ঘরে ঢুকেছিল। রাতের দিকে বাড়ির আশেপাশে কিছু কুকুর তারস্বরে চিৎকার করছিল বটে কিন্ত তখন ভেবেছিলাম শেয়াল টেয়াল এসেছে। অনেক সময় হাঁস-মুরগি কিংবা ছোট ছাগলছানা ধরতে শেয়াল, কটাস হানা দেয়। তারজন্য পাড়ার কুকুররাই যথেষ্ট। তাছাড়া গোয়ালঘর যথেষ্ট শক্তপোক্ত। সেখানে শেয়াল ঢুকতে পারবেনা বলেই হাঁসগুলো নিরাপদ আছে বলে কুকুরের চিৎকারে কান দেইনি। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি যে ওই অজগরটার জন্যই কুকুরগুলো চিৎকার করছিল।”
সোমবার ভোরবেলায় হাঁসগুলিকে খাবার দিয়ে জলাশয়ে ছাড়ার জন্য পরিবারের এক গৃহবধূ গোয়ালঘরে ঢুকে প্রথমে হাঁসগুলি দেখতে না পেয়ে গোয়ালঘরের প্রতিটি কোনায় খুঁজতে গিয়ে সাপটিকে লক্ষ্য করে আঁতকে ওঠেন। তাঁরই ডাকাডাকিতে ছুটে আসেন বাড়ির কর্তা এবং একে একে গ্রামবাসীরা। কেলেঘাই নদী আর জঙ্গল লাগোয়া এই অঞ্চলে অজগর সাপ কোনোও নতুন বিষয় নয়। বিষহীন সাপটির লেজ ধরে
সন্তর্পনে এলাকারই কয়েকজন সাপটিকে ধরে বাইরে বের করে আনেন। ততক্ষনে খবর চাউর হতেই ভিড় জমান আশেপাশের গ্রামের মানুষরাও। খবর দেওয়া হয় বনদপ্তর কে, পার্শ্ববর্তী খাজরা বনদপ্তরের কর্মীরা এসে সাপ টিকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
বন দপ্তরের কর্মীরা জানিয়েছেন ফুট দশেক লম্বা তরুণ এই অজগরটির ওজন ২৭/২৮ কেজির মত হবে। আরও একটু বড় হলে অনায়াসে ছাগল কিংবা বাছুর গিলে ফেলতে পারে এরা। বনদপ্তরের ওই কর্মী আরও জানিয়েছেন, অজগর তার নিজের ক্ষমতা বুঝেই শিকার ধরে। তবে বয়সে তরুণ হলেও এলাকার মানুষের বক্তব্য এত বড় অজগর সাপ ওই এলাকায় কেউই আগে দেখেনি। বন কর্মীরা মনে করছেন জঙ্গলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া, ঝোপঝাড় কেটে দেওয়া, এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার না থাকায় অজগরগুলি হানা দিচ্ছে লোকালয়ে।
খাজরা বিটের পক্ষ থেকে সাপটিকে আনার পর তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে খড়গপুর বনবিভাগে। সেখানে পর্যবেক্ষণ ও শুশ্রসা কেন্দ্র রয়েছে উদ্ধার হওয়া বন্য পশু পাখিদের জন্য। রয়েছেন পশু চিকিৎসক। সেখানেই পর্যবেক্ষনের পর ঠিক করা হবে কোন জঙ্গলে ফের ছাড়া হবে অজগরটিকে। প্রচ্ছদ চিত্র:নেট দুনিয়া