নিজস্ব সংবাদদাতা: অবশেষে নন্দীগ্রাম সংলগ্ন হলদি নদী থেকেই উদ্ধার হল ৩টি দেহ। শনিবার রাত ১১টা নাগাদ নন্দীগ্রামের কেন্দামারি জালপাই গ্রাম পঞ্চায়েতের গঙ্গামেলার ঘাটে নোঙর করার সময় উল্টে গিয়ে ডুবে গিয়েছিল মা করুনাময়ী ট্রলারটি। ১৪জন মৎসজীবীর মধ্যে ৯জন সাঁতরে পাড়ে উঠতে পারলেও ৫জনের হদিস মেলেনি। রবিবার ভোর বেলায় ট্রলারের ভেতর থেকে ২জনকে পাওয়া যায় যার মধ্যে মৃত অবস্থায় মেলে চালকের দেহ। অপরজন হাসপাতালে সুস্থ হয়ে ওঠেন।
বাকি ৩জনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলনা। সোমবার সেই তিনটি দেহ উদ্ধার করল NDRF বা জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। টানা ৩৬ঘন্টার লড়াই চালিয়ে একে একে দেহ গুলি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে নন্দীগ্রামে হলদি নদীর যে অংশে ট্রলারডুবি ঘটনা ঘটেছিল সেই কেন্দামারি-জালপাইয়ের গঙ্গামেলার ঘাট থেকে ৬কিলোমিটার দূরে জেলিংহাম এলাকায় প্রথমে ২জনের দেহ খুঁজে পায় NDRF। এই দুজন হলেন রূপেশ খাঁড়া (২০) এবং কাশীনাথ শিট (৪২)। আরও কিছু পরে ওই জায়গা থেকেই কিছুটা দুরে উদ্ধার হয় নিখোঁজ মাঝ বয়সী বিষ্টুপদ মাইতির দেহ।
উল্লেখ্য ঘটনা ঘটার পরই প্রথম তল্লাশি অভিযানে নেমেছিল ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী। হুভার ক্র্যাফট ও এয়ার ক্র্যাফট দিয়ে জল এবং আকাশ পথে তল্লাশি চালায় তারা। রবিবার বেলার দিকে র্যাফ্ট নিয়ে আরও নিবিড় তল্লাশিতে নামে NDRF। অবশেষে সাফল্য আসে সোমবার ভোরে।
পুলিশ জানিয়েছে রবিবার রাতে করুনাময়ী ডুবে যাওয়ার সময় নদীতে ভাটার প্রচন্ড টান থাকায় অতি দ্রুত দেহগুলি ভেসে গেছিল মোহানার দিকে। যদিও প্রশ্ন উঠে এসেছে মৎসজীবীদের নিরাপত্তা নিয়ে কারন এঁদের শরীরে লাইফ জ্যাকেট মেলেনি যা সমুদ্র যাত্রার ক্ষেত্রে অতি আবশ্যক। যদি লাইফ জ্যাকেট থাকত তাহলে এঁদের মৃত্যুর সম্ভবনা অনেকটাই কম থাকত। বিষয়টিও তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।
এদিকে ক্ষীণ আশা টিকে থাকলেও মৃতদেহগুলি উদ্ধারের পর পরিবারের উপার্জনক্ষম সদস্যের মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েছে মৎসজীবী পরিবারগুলি। সমুদ্র যাত্রার দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ১৫ই জুন থেকেই শুরু হচ্ছে সমুদ্রে মৎস্য শিকারের কাল। হাজার হাজার ট্রলার তারই প্রস্তুতি নিচ্ছিল। হিসাব মত ১৫ই জুনই সমুদ্রে পড়ত মা করুনাময়ী ট্রলারটি। মৎসজীবীদের সমবৎসরের আয় এই সমুদ্র যাত্রাই। কিন্তু তার আগেই মৃত্যু এসে নিঃস্ব করে দিয়ে গেল পরিবারগুলিকে।