নিজস্ব সংবাদদাতা: করোনার তৃতীয় ঢেউ কী আসছে? ভারতের প্রখ্যাত মহামারি গবেষক এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক হেল্থ (Indian Institute of Public Health)-এর অধ্যাপক গিরিধর বাবু জানিয়েছেন, সর্বাধিক সম্ভবনা রয়েছে যে শীতকালেই এই ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে। অধ্যাপক বাবু করোনা (Coronavirus) মোকাবিলায় জাতীয় দলের (National Covid 19 Task Force) সদস্য এবং কর্ণাটক সরকারের উপদেষ্টাও বটে। বাবু এটাও দাবি করেছেন যে, এখন থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে যে কোনও সময় এই তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে।”
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলছেন, কোভিডের (Covid) তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট বেশি কারন আমরা দেখতে পাচ্ছি, ৪৫% টিকাকরন সম্পন্ন হওয়া স্বত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় ঢেউ মারাত্মক ভাবে আছড়ে পড়েছে। করোনার তৃতীয় ঢেউ আসছে ধরে নিয়েই বিভিন্ন রাজ্যগুলি তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে চলেছে। পিছিয়ে নেই পশ্চিম বাংলাও। রাজ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধ্বংসলীলা এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। তৃতীয় ঢেউ রুখতে আগেভাগেই প্রস্তুতি সেরে রাখতে চাইছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ওই সময়ের মধ্যে রাজ্যে অন্তত ২৩০০ ক্রিটিক্যাল কেয়ার বেড বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে। এর মধ্যে নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (নিকু), পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (পিকু) এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের বেড রয়েছে। এছাড়া ২৬০০০ কোভিড বেড তো আছেই। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সমস্ত প্রস্তুতি শেষ করে ফেলতে চাইছে তারা৷ বোঝাই যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই তৃতীয় ঢেউয়ের বিরুদ্ধে যে প্রস্তুতি নিচ্ছে তাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে শিশু নিরাপত্তাকেই। কারন কোনও কোনও মহলের ধারণা তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুরাই আক্রান্ত হতে পারে বেশি।
তবে শুধু রাজ্য নয়, সারা দেশই আতঙ্কে রয়েছে তৃতীয় ঢেউ নিয়ে৷ বিশেষজ্ঞদের মতানুযায়ী, ‘করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা প্রভাব ফেলবে অল্পবয়সীদের উপর। করোনার (Covid) তৃতীয় ঢেউ রুখতে এখনই পদক্ষেপ করুক কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্য। না হলে বিপদ। এই মর্মে দেশের বিরোধী দলগুলিকে কিছুদিন আগেই চিঠি দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু, ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব, রোমিলা থাপার সহ ১৮৫ জন বিশিষ্টজন। তাঁদের অনুরোধ, বিরোধী দলগুলি তাদের প্রভাব খাটিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলিকে বলুক, এখন থেকেই প্রস্তুত থাকতে। যাতে করোনা মোকাবিলায় সময় থাকতে পদক্ষেপ করা যায়। তৃতীয় ঢেউয়ের জন্য কেন্দ্রকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট৷ দেশের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য কর্মীদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এমবিবিএস সম্পন্ন করা এবং পিজি কোর্স ভর্তির অপেক্ষা করা চিকিৎসকদের কেও করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ময়দানে নামানোর পরামর্শ দিয়েছে।
মনে রাখা দরকার যে, প্রথম ঢেউয়ের চাইতে দ্বিতীয় ঢেউয়ের দাপট মারাত্মক বেশি ছিল। দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন বাংলায় সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণ হয়েছিল ১৪ মে। সেদিন রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ২০ হাজার ৮৪৬ জন। তবে সেখান থেকে পরিস্থিতি অনেকটাই সামাল দেওয়া গিয়েছে। শনিবার স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে চার হাজারেরও কম আক্রান্ত হয়েছে করোনায়৷