নিজস্ব সংবাদদাতা: রাতে ভিতে পুকুরে জাল ফেলে মাছ চুরি করে নেয় চোরের দল। সেই মাছ চুরি আটকাতে পুকুরে কাঁটা ফেলে রাখে অনেকেই কিন্তু সেই কাঁটাই মৃত্যুর কারণ হল আট বছরের এক বালিকার। শুক্রবার এমন মর্মান্তিক ঘটনাই ঘটে গেল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর থানার নন্দনপুর ২ গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার ধর্মা গ্রামে। ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো গ্রামেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে মৃত ওই ৮ বছরের বালিকার নাম মনি দোলাই। ওই পাড়ায় আরও একজনের নাম মনি থাকায় এলাকার মানুষরা তাকে ছোট মনি বলেই ডাকত। দিনমজুর স্বপন দোলাইয়ের মেয়ে মনি। পাশেই একটি প্রাথমিক স্কুলে ক্লাশ থ্রি’র ছাত্রী ছিল সে। বাবা-মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে মেজো ছিল মনি। তার ওপরে দিদি এবং পরে ভাই রয়েছে। তাদের বাবা মা দুজনেই ১০০দিনের কাজে বাড়ির বাইরে ছিল।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে বাবা-মা দুজনেই কাজে গেলে সংসারের কাজ সামলাতে হয় দুই বোনকেই, যেমনটা গরিব পরিবার গুলিতে সাধারণভাবে হয়ে থাকে। শুক্রবারও মনির বড়দি ভাত চাপিয়েছিল। ছোট ভাইকে দেখ ভাল করছিল মনি। ভাত হওয়ার পর ছোট ভাইকে দিদির কাছে দিয়ে নিজে স্নানের জন্য গ্রামেরই একটি পুকুরে গিয়েছিল সে। আর ফেরেনি। ভাই আর সংসারের অন্য কাজে ব্যস্ত দিদিও খেয়াল করেনি যে বোন ঘরে ফেরেনি।
ওদিকে একশ দিনের কাজ শেষ করে বেলা ১১টা বাড়ি ফেরে বাবা-মা। খোঁজ নেয় মনি কোথায়? বড় মেয়ে জানায়, স্নানে গেছে। আরও একটু অপেক্ষা করার পর মেয়ে না ফেরায় সন্দেহ হয় বাবা-মার। কারন অত্যন্ত শান্ত শিষ্ট ও বাধ্য ছিল মেয়ে। অযথা সময় নষ্ট করা বা দীর্ঘক্ষণ বাড়ির বাইরে থাকতনা সে। বাবা-মা দুজনেই খোঁজ করতে করতে পুকুরের কাছে যান কিন্তু কিছুই দেখতে পাননি। পাড়ার কোথাও খোঁজ পাওয়া যায়নি তার। এরপরই পাড়ে গামছা নজরে পড়তেই অঘটনের আশঙ্কা পেয়ে বসে পরিবারকে।
পাড়ারই কিছু মানুষ এদিক ওদিক খোঁজ করার পর পুকুরের ঘাট থেকে সামান্য কিছুটা গভীরেই ঠাওর পায় একটি শিশুদেহের। তার পরনের ফ্রক আটকে বাঁশের কাঁটায়। সেই কাঁটা মুক্ত করে জলের ওপরে আনার পরই দেখা যায় সেই ছোট্ট মনিকে। জল খেয়ে দম বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে তার। প্রায় ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা অবধি ওভাবেই আটকে ছিল সে। পাড়ার লোকেরা জানিয়েছে সাঁতার জানত মনি। সাঁতার কেটেই সে হয়ত গিয়েছিল জলের গভীরতায় কিন্তু ফিরে আসা হয়নি তার।