নিউজ ডেস্ক: রাজ্যে বেড়েছে লকডাউনের মেয়াদ। এই লকডাউনে কার্যত খুচরো দোকানকে আংশিক ছাড় দেওয়ার কথা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, বেলা ১২টা থেকে দুপুর ৩ টে পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে খুচরো দোকানগুলি । অর্থাৎ পাড়ার মধ্যে থাকা ছোটখাটো দোকানগুলি খোলা রাখা যাবে।
একই সঙ্গে বাজারের মধ্যেও অবস্থিত শাড়ি, জামা-কাপড় আর গহনার দোকান দুপুর ১২ টা থেকে ৩টা অবধি খোলা রাখা যাবে বলে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেইসঙ্গে তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থার ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ কর্মী নিয়ে কাজে ছাড় দেওয়া হল। টিকাকরণের পর নির্মাণ শিল্পের কর্মীদের কাজে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত রাজ্যে কড়া বিধিনিষেধের ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে তা কিছুটা লাঘব করলো রাজ্য সরকার। সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে ছাড়ের আবেদন জানানো হয়েছিল। সেইমতো কয়েকটি ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, যেহেতু ১৫ তারিখ পর্যন্ত বিধিনিষেধ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তাই কয়েকটি ক্ষেত্র থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। সেইমতো বইয়ের দোকান, পাড়ার মুদির দোকান-সহ খোলা রাখা হবে। আর বিধি নিষেধের বাইরে গিয়ে শাড়ি এবং গহনার দোকান খোলা রাখা যাবে দুপুর ১২টা থেকে ৩টা অবধি।
এর আগে,প্রথম দফায় ১৬ মে থেকে ৩০ মে পর্যন্ত কার্যত লকডাউন ঘোষণা করেছিল নবান্ন। এরপর তা বাড়িয়ে ১৫ জুন পর্যন্ত করা হয়।তবে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, এটাকে লকডাউন বলা উচিত না। এগুলো বিধি নিষেধ। উল্লেখ্য, গত ৩০ এপ্রিল করোনা প্রতিরোধে রাজ্যজুড়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। রেস্তোরাঁ, বার, শপিং মল বন্ধের ওবাজারের সময় কমানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। জরুরী সমস্ত পরিষেবাকে ছাড় দেওয়া ও বেশ কিছু দোকান খোলা রাখা হয়েছিল।
লোকাল ট্রেনের পাশাপাশি বাস, মেট্রো, ফেরি সহ সমস্ত গণ পরিবহন ৩০ মে পর্যন্ত বন্ধ রাখার কথা জানানো হয়। জরুরী পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ও অনলাইন ডেলিভারির সঙ্গে যুক্ত হলে তবেই যাতায়াতের ছাড়পত্র থাকছে। তবে সেক্ষেত্রেও লাগবে ই-পাস। রাত ৯টা থেকে ভোর ৫ টা পর্যন্ত একান্ত জরুরী পরিষেবার সঙ্গে যুক্তরা ছাড়া মানুষ বা যানবাহনের চলাচলে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা। সমস্ত স্কুল, কলেজ ইউনিভার্সিটি থেকে জরুরী পরিষেবার সঙ্গে যুক্তরা ছাড়া সমস্ত সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত।
আংশিক লকডাউনের মতোই শপিং মল, রেস্তোরাঁ, বার, স্পোর্টস কমপ্লেক্স, জিম, সুইমিং পুল বন্ধই থাকছে। পাশাপাশি পার্ক, চিড়িয়াখানা, অভয়ারণ্যও বন্ধ থাকবে।
বাজারের সময়েও করা হয়েছে পরিবর্তন। আংশিক লকডাউনে সকালের পাশাপাশি বিকেলেও কয়েক ঘণ্টার জন্য বাজার-হাট খোলা হচ্ছিল।সোমবার থেকে শুধুমাত্র সকাল ৭টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত বাজার-হাট খোলা থাকবে।
পাশাপাশি মুদিখানা, মাংসের দোকান, ডিমের দোকান, পাউরুটি ও দুধের দোকানও আগামী ১৫ দিন সকালের এই তিন ঘণ্টার (৭টা থেকে ১০টা) জন্যই খোলা থাকবে। মিষ্টির দোকান খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। গহনার দোকান দুপুর ১২টা তেকে ৩ টে পর্যন্ত। ওষুধের দোকান ও চশমার দোকান অবশ্য কড়াকড়ির আওতার বাইরে। এইধরণের দোকানগুলি সারাদিন খোলা থাকবে। এরপর ২৭ মে এই বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও এক দফায় ১৫ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র জুটমিলগুলিতে কর্মী সংখ্যা ৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করা হয়েছিল। এদিন খুচরো দোকানগুলিকে আংশিক ছাড়ের কথা জানানো হল।
এছাড়াও,হাসপাতাল, নার্সিং হোম, ডায়াগনিস্টিক সেন্টার, টিকা নেওয়ার জন্য, বিমানবন্দর ও সংবাদমাধ্যম প্রয়োজন ছাড়া প্রাইবেট গাড়ি, অটো-রিক্সা চলবে না আগামী ১৫ দিনের জন্য।খাদ্যদ্রব্য, ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী ছাড়া রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না কোনও গাড়ি।৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে চা-বাগান ও ৩০ শতাংশ কর্মী নিয়ে জুট-মিল চালাতে হবে। ব্যাঙ্ক খোলা থাকবে সকাল ১০ টা থেকে ২ টো পর্যন্ত। এটিএম লকডাউনের কড়াকড়ির বাইরে।ই-কমার্স ও অনলাইন ডেলিভারির ক্ষেত্রে লকডাউনের কড়াকড়ি প্রযোজ্য নয়। বিয়েতে সর্বোচ্চ ৫০ জন আমন্ত্রিত। সৎকারে সর্বোচ্চ ২০ জনকে থাকার ছাড়পত্র।পেট্রোল পাম্প, গাড়ি সারানোর দোকান, গ্যাসের দোকান লকডাউনের কড়াকড়ির বাইরে।
মুখ্যমন্ত্রী আবারও জানিয়েছেন, রাজ্যে জারি হওয়া বিধিনিষেধের সুফল যে মিলছে। রাজ্যের দৈনিক করোনা (Coronavirus) আক্রান্তের সংখ্যা যে অনেকটাই কমেছে। উল্লেখ্য, রবিবার রাজ্যে দৈনিক আক্রান্ত হয়েছিলেন ১১ হাজার ২৮৪ জন। বর্তমানে রাজ্যে অ্যাকটিভ কেস ৯৪ হাজার ৮৯৮ জন। এখনও পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১২ লক্ষ ৫৫ হাজার ৯৩২ জন। সুস্থতার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯১.৯৩ শতাংশ। যা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। বিধিনিষেধের ফলে রাজ্যবাসী করোনার কবল থেকে মুক্তি পাবেন বলেও আশাবাদী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়া রাজ্যে টিকাকরণের কাজও যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে তাও জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।