নিউজ ডেস্ক: বিয়ের পর প্রথম ভালোবাসা দিবস অর্থাৎ ভ্যালেন্টাইনস ডে তে শোকের কালো ছায়া নেমে এসেছিল তার জীবনে। সুখী দাম্পত্যের স্বপ্নে বিভোর দুচোখে সেদিন শুধুর বারিধারা। শহীদ বিভূতিশঙ্কর ধুন্ধিয়ালের স্ত্রী নিকিতা ধুন্ধিয়ালের সঙ্গে কেঁদেছিল গোটা দেশ। সেদিন থেকেই নিকিতার মনে চেপে বসেছিল অদম্য জেদ, ভালোবাসার মানুষের মৃত্যুর বদলা নেওয়ার। শহীদ অফিসারকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির মান রাখলেন নিকিতা, যোগ দিলেন সেনায়।
২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামা হামলায় শহীদ হন বিভূতিশঙ্কর। তাকে সৌরচক্র সম্মান দিয়েছিল সেনা। সেদিন স্বামীর মৃত্যু কিছুইতে মেনে নিতে পারছিলেন না নিকিতা। সম্ভব বা কিভাবে? মাত্র নয় মাস আগে যে মানুষটার সঙ্গে সারা জীবন কাটাবার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন সেই মানুষটাই হঠাৎ একা করে দিয়ে চলে যায়।
মেজরের লড়াই ব্যর্থ হয়নি। বদলা নেওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেন নিকিতা। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, তিনি সেনায় যোগ দেবেন। পুলওয়ামা হামলায় স্বামীকে হারানোর ছয় মাসের মধ্যে সিভিল সার্ভিস কমিশন পরীক্ষার ফর্ম ফিল আপ করেন। পাশ করেন সিভিল সার্ভিস। পাশ করেন সার্ভিস সিলেকশন বোর্ডের ইন্টারভিউ। দ্রুতই মেলে অফিসার ট্রেনিং একাডেমীতে কাজের সুযোগ। চেন্নাইয়ে হয় ট্রেনিং। আজ ২৯ মে ২০২১ তিনি লেফটেন্যান্ট পদে যোগদান করলেন সেনায়।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি। সেনা জওয়ানদের নিয়ে ট্রাক বহর যাচ্ছিল জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার লেথোপোড়া দিয়ে। অবন্তীপোড়ার কাছে জম্মু শ্রীনগর জাতীয় সড়ক একটি গাড়ি এসে ধাক্কা মারে ট্রাকে। প্রচন্ড বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে ভূস্বর্গ। আত্মঘাতী হামলার শিকার হন ৪০ জন কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনীর জওয়ানেরা। একদিকে সারা দেশ ভালবাসা দিবস উদযাপন করতে ব্যস্ত ছিল, অপরদিকে সন্ত্রাসীদের কুটিল হামলার শিকার হন। থেঁতলে এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে তাদের দেহ। লাল হয় কাশ্মীরের মাটি। দেশ রক্ষা করতে গিয়ে নিজেদের জীবনটাই বিসর্জন দিয়ে দেন তাঁরা।
এই হামলার পর তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল জাতীয় তদন্ত সংস্থাকে। তাদের ১২ জন সদস্যের দল পাঠানো হয়েছিল। তারা জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের সাথে কাজ করেছিল। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছিল আত্মঘাতী গাড়িটি ৮০ কিলোগ্রাম আরডিএক্স এবং অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটসহ ৩০০ কিলোগ্রামের বেশি বিস্ফোরক বহন করছিল। তদন্তে এও জানা গিয়েছিল হামলাকারী ছিল পুলওয়ামা জেলার স্থানীয় আদিল আহমদ দার। সে জইশ-ই-মহাম্মদের সদস্য ছিল।