নিজস্ব সংবাদদাতা: ওডিশার ভদ্রক জেলার ধামরা বন্দরের কাছে আর কয়েকঘন্টার মধ্যেই ল্যান্ডফল করতে চলেছে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। তারই অভিঘাতে ফুঁসছে সমুদ্র। আর তারই সাথে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতই যুক্ত হয়েছে পূর্ণিমার কোটাল। সেই জোড়া ফলায় উত্তাল হয়ে উঠেছে দিঘা সহ পুরো সমুদ্র উপকূল। সকাল থেকেই দিঘার জলোচ্ছ্বাস চোখে পড়ছিল যা বেলা বাড়ার সাথে সাথেই প্রবল আকার ধারন করে এবং গার্ড ওয়াল টপকে জল ঢুকতে শুরু করে বিভিন্ন গ্রামে। দিঘার পাশাপাশি চাঁদপুর, শংকরপুর, জলধা ইত্যাদি এলাকার গ্রামগুলোতে জল ঢুকতে শুরু করেছে।
এই ব্যাপক জলোচ্ছ্বাসের মুখে দাঁড়িয়ে ৪লক্ষ মানুষকে আশ্রয় শিবিরে আনার কাজ শুরু করে দিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। এরই মধ্যে সাড়ে ৩ লক্ষ ১৮ হাজার মানুষকে ইতিমধ্যেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ২লক্ষ ১২হাজার মানুষকে আশ্রয় শিবিরে এবং ১লক্ষ ৬হাজার মানুষকে পার্শ্ববর্তী পড়শির শক্তপোক্ত বাড়িতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাকিদের সরিয়ে নেওয়া হবে মঙ্গলবার রাতের মধ্যেই। অন্যদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জেলায় ৫০০টি গাছ কাটার দল ১৫০টি বিদ্যুৎ বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে মোতায়েন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর ৫০জনের একটি দল তদারকি করবে সামগ্রিক জেলার বড়সড় বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার কাজে।
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ওড়িশার ধামাসে ল্যান্ডফল হওয়ার আগে
এদিকে সমুদ্রের মধ্যে ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শক্তি সঞ্চয় করে তা পরিণত হবে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। ওডিশার পারাদ্বীপ ও পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপের মাঝখান দিয়ে স্থলভাগে ঢুকবে ইয়াস। ওড়িশার কেন্দ্রপাড়া, ভদ্রক, জগৎসিংহপুর ও বালাসোরের পাশাপাশি ঝড়ের পৃষ্টদেশের মধ্যেই অবস্থান করবে মোহনপুর, দাঁতন, বেলদা, কেশিয়াড়ী, নারায়নগড়, ডেবরা, পিংলা, খড়গপুর গ্রামীন, খড়গপুর শহর, সবং সহ পুরো খড়গপুর মহকুমাই। স্থান বিশেষে ঝড়ের তারতম্য হলেও ভারী বৃষ্টিপাত হতে চলেছে পুরো মহকুমা জুড়েই। ফলে খড়গপুর মহকুমার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে মঙ্গলবার গভীর রাত অথবা বুধবার ভোর থেকেই ঝড়ো হওয়ার সাথে তুমুল বৃষ্টিপাত হতে চলেছে। যারফলে জলমগ্ন হয়ে পড়তে পারে বিভিন্ন নিচু এলাকা। পরিস্থিতি সামাল দিতে দাঁতন, কেশিয়াড়ী, মোহনপুর, নারায়নগড়, পিংলা ইত্যাদি থানায় আশ্রয় শিবির খোলা হয়েছে এবং সরানো হচ্ছে মানুষজনকে। জেলার প্রায় ১০৫০আশ্রয় শিবিরের ৯০০ রয়েছে শুধু খড়গপুর মহকুমায় যেখানে প্রায় ৬হাজার পরিবারের ৯৫ হাজার মানুষকে সরানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে।
অন্যদিকে ঝাড়গ্রাম জেলার দশটি ব্লকই ঢুকে পড়তে চলেছে যশের বৃষ্টি বলয়ে। ওড়িশা এবং ঝাড়খণ্ডের জামসেদপুরের গা ঘেঁষে যাওয়া যশের প্রভাবে ঝড়ো হওয়ার সাথে ভারী বৃষ্টিতে ভাসতে চলেছে পুরো ঝাড়গ্রাম জেলাই। তবে সর্বাধিক প্রভাব পড়বে নয়াগ্রাম, সাঁকরাইল, দুই গোপী বল্লভপুর , জামবনী এলাকায় যে কারনে জেলার মধ্যে সর্বাধিক মানুষকে ওই চারটি এলাকা থেকে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে নয়াগ্রামে ১০০টি, সাঁকরাইলে ৪০, গোপীবল্লভপুর ১ এবং ২ তে ৩৫ ও ৪৮ এবং জামবনীতে ৪২টি আশ্রয় শিবিরে ইতিমধ্যেই কয়েক হাজার মানুষকে সরিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া বেলপাহাড়ীতে ২২, ঝাড়গ্রাম ব্লকে ২৫, ঝাড়গ্রাম পুরসভায় ২৩ ও বিনপুর ১ ব্লকে ২০টি আশ্রয় শিবিরে ২০হাজার মানুষকে সরিয়ে আনা হচ্ছে। দুর্গতদের মোকাবিলায় কুইক রেসপন্স টিম, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।