নিউজ ডেস্ক: এখনও দিঘা থেকে ৬৩০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে এই যশ কিন্তু এরই মধ্যে হালকা বৃষ্টি শুরু হয়েছে দিঘা এবং সন্নিহিত ওড়িশা উপকূলের জেলা গুলিতে। আজ অর্থাৎ সোমবার সকাল ১০টা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়ে ফেলেছে যশ। এমনটাই জানিয়েছে দিল্লির মৌসম ভবন। মঙ্গলবারই অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে ‘যশ’ যা বুধবার আছড়ে পড়তে পারে স্থলভূমিতে। মঙ্গলবার উপকূল এলাকায় ভারি বৃষ্টি যা কিনা পরের দিন বুধবার, কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামে শুরু হওয়ার কথা। বৃষ্টি হবে উত্তরবঙ্গেও। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুরোপুরি তৈরি ভারতীয় বায়ু সেনা এবং সেনাবাহিনী।
ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রস্তুতির অংশ হিসাবে ১১ টি পরিবহণ বিমান এবং ২৫ টি হেলিকপ্টার প্রস্তুত করেছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিনটি সি -৩০০ টি, চারটি এএন -৩২ বিমান এবং দুটি ডর্নিয়ার বিমান সহ ১১ টি পরিবহণ বিমান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। অতিরিক্তভাবে, ১১ টি এমআই -১৭ ভি ৫, দুটি চেতক, তিনটি চিতা এবং সাতটি এমআই -১৭ হেলিকপ্টার সহ প্রায় ২৫ টি হেলিকপ্টারও যেকোন ঘটনার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এয়ারওয়েজের মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য জায়গায় উদ্ধার ও ত্রাণ দল পাঠানো হচ্ছে। প্রতিরক্ষা বিমান এবং নৌ-জাহাজকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বাংলার জন্য তৈরি ৮ কলাম সেনা ও ইঞ্জিনিয়ারের টাস্ক ফোর্স। বাংলা ও ওড়িশা উপকূলে প্রস্তুত ৮টি উদ্ধারকারী দল। দ্রুত উদ্ধারে প্রস্তুত নৌবাহিনীর ৯টি বিমান, ২৫টি হেলিকপ্টার। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বিশেষ দায়িত্বে কলকাতা পুলিশ। সৌমেন মিত্রর নেতৃত্বে এনডিআরএফ, বিএসএনএল, সইএসসি-র আধিকারিকদের নিয়ে তৈরি বিশেষ টিম। কেএমসি-র তরফেও প্রতি বরোতে থাকবে পৃথক দল। দিঘা, তাজপুরে মোতায়েন এনডিআরএফ, এসডিআরএফ। উড়ছে ড্রোন, নজর রাখছে কপ্টার। সুন্দরবন, বকখালি, ফ্রেজারগঞ্জে চলছে নজরদারি।
তৈরি রাখা হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী বা এনডিআরএফকে। সেইসঙ্গে সমুদ্র তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সাগরেও একইরকমভাবে সতর্ক পুলিশ-প্রশাসন। মাইকে চলছে প্রচার। প্রস্তুত বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। তাজপুরে সমুদ্রবাঁধ নির্মাণের কাজ অসমাপ্ত থাকায় আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা। প্রশাসন সূত্রে খবর, করোনাকালে শ্রমিক পেতে সমস্যা হচ্ছে। এর পাশাপাশি, কার্যত লকডাউন পরিস্থিতিতে থমকে রয়েছে সমুদ্রবাঁধ তৈরির কাজ।
পূর্ব রেল ২৪ মে থেকে ২৯ মে’র মধ্যে ২৫ টি ট্রেন বাতিল করেছে। এই সিদ্ধান্তের জন্য রেলওয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, পাশাপাশি ২৫ টি বাতিল ট্রেনের একটি তালিকাও প্রকাশ করেছে। দক্ষিণপূর্ব রেল শনিবার ৪৮টি ট্রেন বাতিল করেছিল রবিবার আরও প্রায় ৭৮টি ট্রেন বাতিল করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় তৈরি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি প্রশাসনকে আগের থেকে সমস্ত প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন। সমুদ্রে যাওয়ার থেকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে মৎস্যজীবীদের। পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার, পানীয় জল, ওষুধ মজুত রাখতে বলা হয়েছে।এছাড়াও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে উপকূলবর্তী সাইক্লোন সেন্টারগুলি ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরকে।
আবহাওয়া অধিদফতর (আইএমডি) বলেছে যে, বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপটি ২৬ শে মে এটি ‘খুব মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়’ হিসাবে পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশা উপকূলকে অতিক্রম করবে। বুধবার ‘যশ’ ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলে কড়া নাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এর এক সপ্তাহ আগে পশ্চিম উপকূলে আসা ‘তউকত’ ঘূর্ণিঝড়টি ধ্বংসের কাহিনী ছেড়ে গেছে। দেশ জুড়ে যশ মোকাবিলায় জোর কদমে চলছে প্রস্তুতি পর্ব। উল্লেখ্য গতবছরের ২০ মে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের ওপর আছড়ে পড়েছিল ‘আমফান।’এর ২০০৯-এর ২৫ মে সব কিছু লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল আয়লা। আর সেই মে মাসেই এবার আগমন ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’এর।’যশ’ নামটি ওমানের দেওয়া। ‘যশ’-এর অর্থ হল হতাশা। আবহাওয়া দফতর প্রতি মুহূর্তেই ‘যশ’ এর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানা গেছে। প্রতীকি চিত্র, সৌজন্যে নেট দুনিয়া।