নিজস্ব সংবাদদাতা: ফিরে আসার কথা ছিলনা। ফিরে কী আসে সব? কত লিটিল ম্যাগাজিনই তো হারিয়ে যায় উজ্জ্বল আলো ছড়িয়ে ধূমকেতুর মত। কিন্তু তিনি ফিরিয়ে এনেছিলেন একটা নয়, দুটো পত্রিকাকে। ২০১৬ সালে একটি পথদুর্ঘটনায় মারাত্মক জখম হওয়ার পর বন্ধ হয়ে গেছিল, ‘আবার এসেছি ফিরে’ আর ‘এবং পুনশ্চ’। গত মার্চেই দুটিকে ফিরিয়ে আনলেন কবি এবাদুল হক। শুধু তাই নয়, বাড়তি লেখা পাঠিয়ে দিলেন ছাপাখানায়। হয়ত করোনা কাল কাটিয়েই প্রকাশ হত সেগুলি কিন্তু তাঁর আগেই চলে গেলেন কবি কাম সম্পাদক। গত কয়েকদিন ধরেই ভর্তি ছিলেন একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে, ভর্তি তাঁর স্ত্রী এবং ছেলেও। চূড়ান্ত মনের জোর আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে বন্ধুদের জানিয়েছিলেন, ভালো হয়ে উঠছি, শীঘ্রই ফিরছি। কিন্ত ফেরা হলনা। দুই বাংলার অত্যন্ত প্রিয় কবি, কবিদের আপনজন এবাদুল চলে গেলেন সোমবার। বয়স মাত্র ৬২।
১৯৯২-৯৩ পর পর দুবার সারা বাংলা লিটল ম্যাগাজিন পুরস্কার, ২০১২ সালে বাংলা একাডেমির লিটল ম্যাগ পুরস্কার। ২০১৬ সালে সারা ভারত লিটল ম্যাগ প্রতিযোগিতায় সাদাত মন্টো পুরস্কার। আরও কত পুরস্কার তাঁর ঝুলিতে ছিল ঠিক নেই। কিন্ত তারও চেয়ে বড় পুরস্কার পেয়েছেন মফঃস্বল বাংলার নবীন প্রবীণ আপামর কবি সাহিত্যিকদের অমলিন ভালোবাসা। এবং তা এপার ওপার দুই বাংলা থেকেই। মফঃস্বল কথাটা সচেতন ভাবেই বলা এই কারনে যে মহানাগরিক সাহিত্য তো আর সহজে কলকে দেয়না!
১৯৬০ সালে জন্ম এবাদুলের সাহিত্য প্রেম নাটক লেখা দিয়েই। মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলার এই শিক্ষক শুধু নাটক লেখাই নয় সঙ্গে দল গড়ে করতেন অভিনয়। একাংক আর পূর্ণাঙ্গ মিলিয়ে প্রায় ২০টি নাটক লিখেছেন। এরপর তাঁর কবিতা বিচরণ। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ সূর্যাস্তের আগে ও পরে, নাগকেশর, অগ্নিজল কিংবা পলাতক ছায়া চিনিয়ে দিয়েছে তাঁর কবিতার জাতকে। লিখেছেন বেশকিছু গল্পও। তাঁর সবচেয়ে বড় গুন ছিল তরুণদের উৎসাহিত করা, উদীপ্ত করা। কখনও কোনও হতাশা ছিলনা ‘সওদাগরের’হাতে ফুল পাননি বলে।
বাংলার প্রতিটি জেলায় এবাদুল হকের উজ্জ্বল বিচরণ। তাই তাঁর মৃত্যুর খবরে শোক আছড়ে পড়েছে জেলায় জেলায়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কবি জয়শ্রী সরকার বলেছেন, “অসুস্থ জেনে ফোন করেছিলাম। বললেন , ” না, না , তেমন কিছু নয় । সাধারণ জ্বর । ঠিক হ’য়ে যাবে ! কিন্ত করোনা কাউকেই আর ঠিক থাকতে দিলো না।এবাদুলদা যেখানেই থাকুন শান্তিতে থাকুন ।” শোকার্ত কবি প্রাবন্ধিক ভবেশ বসু খবরটি শোনা মাত্রই প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “হায়, হায়! সব শেষ হয়ে গেল।” কবি সুনীল মাজীর কথায়, “কবি ও সম্পাদক এবাদুল হকের মৃত্যু আমাদের ভেঙে দিয়েছে। সাহিত্য জগত এলোমেলো। আমরা যেন শ্মশানবন্ধু হয়ে বসে আছি শুধু প্রিয়জনের শবানুগমনের জন্য!”
মঙ্গলবার সকালেই শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুর খবরে আঁতকে উঠেছে বাংলা। যদিও তিনি করোনায় মারা যাননি তবুও এই কালো সময়েই তাঁর চলে যাওয়া। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে চলে গেছেন বাঙালির বিবেক শঙ্খ ঘোষ। আর এইতো সেদিন অনীশ দেব। তবুও দুঃসংবাদ এখানেই থেমে নেই। বাংলা সাহিত্য দুনিয়ার আরও একটি আশঙ্কার খবর এসেছে।করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভরতি কবি জয় গোস্বামী। রবিবার তাঁকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভরতি করা হয়। অবস্থার সামান্য অবনতি হওয়ায় সিসিইউ-তে পরে স্থানান্তরিত করা হয় জয় গোস্বামীকে।
বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল সূত্রের খবর, চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে সিসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। সামান্য আচ্ছন্ন ভাব আছে। অক্সিজেনের সাহায্যে রয়েছেন কবি। দিন কয়েক ধরে অসুস্থ ছিলেন এই কবি। কয়েক বার বমি করেন। পাশাপাশি পেটের সমস্যা চলছিল, গায়ে জ্বরও ছিল। এমন অবস্থায় তড়িঘড়ি তাঁকে বেলেঘাটা আইডিতে নিয়ে যায় পরিবার। আর তারপরই তাঁর করোনা ধরে পড়ে। যদিও কবি পত্নী কাবেরী করোনা নেগেটিভ হয়েছেন।