নিজস্ব সংবাদদাতা: শুধুমাত্র ১দিনেই ২০জন আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ফের করোনা কার্ফু জারি হল আইআইটি খড়গপুর (IIT Kharagpur)য়ে। করোনাকালে ৯ মাসের মধ্যেই দ্বিতীয় দফার এই করোনা কার্ফু ঘোষণা করা হয়েছে ১৪-২৩ শে মে অবধি। এই সময়ের মধ্যে পুরোপুরি সিল করে দেওয়া হয়েছে আইআইটি খড়গপুরের আ্যকাডেমিক ক্যাম্পাসটি। এছাড়া আইআইটির রেসিডেন্সিয়াল ক্যাম্পাসের জন্য আগের মতই চালু হয়েছে একগুচ্ছ কড়া নির্দেশিকা। সমস্ত আবাসিককে নিজের ঘরে অথবা ছাত্রাবাসেই থাকতে বলা হয়েছে। আক্রান্ত কিছু পড়ুয়াকে সরানো হয়েছে নির্দিষ্ট নিভৃতবাসে। আপাতত আইআইটি ক্যাম্পাসে কোনও অতিথি ঢুকতে পারবেননা বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।উল্লেখ্য গত একমাস ধরেই করোনার প্রকোপ মাথা চাড়া দিচ্ছিল আইআইটি ক্যাম্পাসে। আইআইটি ক্যাম্পাসে অবস্থিত বি.সি.রায় হাসপাতালে সংগৃহিত নমুনা থেকে সর্বোচ্চ ১৩জন অবধি পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছিল। দ্বিতীয় পর্যায়ের করোনা কালে এই আক্রান্তের সংখ্যা ১৫০ জনের কাছাকাছি। যদিও এঁদের সবাই যে ক্যাম্পাসের বাসিন্দা এমনটা নয়। কেউ কেউ বাইরেও বসবাস করেন। ক্যাম্পাসের পাশাপাশি আক্রান্তের পরিমান বাড়ছিল ক্যাম্পাস সংলগ্ন তালবাগিচা, রবীন্দ্রপল্লী, হিজলী-কোঅপারেটিভ কিংবা প্রেমবাজার ছাড়িয়েও খড়গপুর শহরের নানা অংশের বাসিন্দাদের মধ্যে যাঁরা কোনও না কোনও ভাবে আইআইটির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু সপ্তাহ খানেক আগের একটি রিপোর্টে একই সাথে ১৩জনের আক্রান্তের খবর আসে যার মধ্যে ১১জনই ক্যাম্পাসের বাসিন্দা ছিলেন।
সেই ঘটনার পরই একটি জরুরি ভার্চুয়াল মিটিং করেন ক্যাম্পাসে অবস্থিত পড়ুয়াদের সঙ্গে। বলা হয় করোনা প্রটোকল মেনে যেন চলেন সবাই। এরই মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল আইআইটি ছাত্রাবাস কর্মী ৫৩ বছরের তপন দের। তারপরও মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল আইআইটি। কিন্তু ১১ই মে সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়ে আইআইটি সূত্রে আক্রান্ত হন ২০জন এবং তারমধ্যে ১৭জনই ক্যাম্পাসের বাসিন্দা এবং তার মধ্যে আবার অধিকাংশই গবেষক পড়ুয়া।
১১ই মের এই রিপোর্ট রীতিমত চমকে দিয়েছে আইআইটিকে। আক্রান্ত ১৭জনের ১৫ জনই ৩৮ বছরের নিচে। ২জন ৩০বছর বয়সী আর ৩০ বছরের নিচে ২৪ বছর পর্যন্ত রয়েছেন ৯জন। আক্রান্তদের মধ্যে ২জনের বয়স ১৭ এবং ১৮বছর। আক্রান্ত ১৭জনের মধ্যে ৫জন মহিলা। স্বাভাবিক ভাবেই দেখা যাচ্ছে গবেষক পড়ুয়ারাই আক্রান্ত হয়েছেন বেশি। স্বাভাবিক ভাবেই আর কোনও ঝুঁকি নেননি আইআইটির ডিরেক্টর অধ্যাপক ভি.কে. তেওয়ারি। তড়িঘড়ি লকডাউন শুরু করার প্রক্রিয়া শুরু করে দেন। যদিও আইআইটির তরফে এই প্রক্রিয়াকে লকডাউন বা করোনা কার্ফু বলা হচ্ছেনা। বলা হচ্ছে করোনা শৃঙ্খল ভাঙার প্রক্রিয়া।
উল্লেখ্য গতবছর আগস্ট মাসে একছাত্রের শরীরে প্রথম করোনার জীবাণু পাওয়া যাওয়ায় ঠিক এই ভাবেই লকডাউন ঘোষণা করে আইআইটি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকায় নতুন করে শুধুমাত্র গবেষক পড়ুয়াদের জন্য ল্যাব খোলা হয়। প্রায় ৪৫০ গবেষক পড়ুয়া বা রিসার্চ স্কলার ফেরৎ আসেন ক্যাম্পাসে। আইআইটির বিভিন্ন ছাত্রাবাসে তারা থাকতে শুরু করেন। জানা যাচ্ছে আম্বেদকার এবং ভিএসআরসি ছাত্রাবাসেই সংক্রমনের হার বেশি। আক্রান্তদের নিবিড় নজরদারিতে একটি গেষ্ট হাউসে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা চলছে।
বর্তমান নির্দেশিকায় আইআইটি ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে সমস্ত পার্লার, জিমখানা, সুইমিংপুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
রাজ্যসরকারের নিয়ম মেনেই মুদি, ওষুধ ইত্যাদি প্রয়োজনীয় দোকান ছাড়া বাজার খোলা থাকবে দিনের ৫ঘন্টা। বাজারে যাওয়ার জন্য মাস্ক এবং আইডেন্টিটি কার্ড রাখতে বলা হয়েছে ক্যাম্পাসের বাসিন্দাদের। জরুরি পরিষেবা এবং হোম ডেলিভারি ছাড়া কেউই ক্যাম্পাসে ঘোরা ফেরা করতে পারবেননা। বাজারগুলি নিয়মিত পরিদর্শনের জন্য কেবল বাজার কমিটির সদস্যরাই ক্যাম্পাসে ঘুরতে পারেন। ক্যাম্পাসের বাইরে ও ভেতরে যাওয়া আসা কর্তৃপক্ষের
অনুমতি স্বাপেক্ষেই করতে হবে। ১লা মে থেকে ১৬ই মে অবধি এমনিতেই প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের জন্য সেমিস্টার ব্রেক ঘোষণা করা হয়েছিল। বাতিল করা হয়েছিল পঠনপাঠন ও পরীক্ষা। তারই মধ্যে ঘোষিত হয়ে গেল এই লকডাউন।