বিভূ কানুনগো : হ্যাটস অফ খড়গপুর, খড়গপুরই পারে! শহরের ১২টি সংগঠন মিলে শনিবার থেকে চালু করে দিল জেলার প্রথম বেসরকারি সেফ হোম। অক্সিজেন সরবরাহ সহ ওষুধ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পরিষেবা দেবে এই সেফ হোম কাম স্যাটেলাইট কেন্দ্রটি( Safe Home/ Satelite Facility/ Community based Isolation Center With Oxigen support for asymptommetic and mildly symptometic pateint)। খড়গপুর শহরের অধিবাসীদের এই করোনাকালের সঙ্কটজনক পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করার জন্য শক্তি জোগাবে এই পরিষেবা কেন্দ্র। বুধবার দুপুরে এই সেফহোমের উদ্বোধন করেন খড়গপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক দীপক সরকার। উপস্থিত ছিলেন মহকুমা শাসক আজমল হোসেন, খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখার্জী সহ বিভিন্ন আধিকারিক, সমাজসেবী ও ব্যবসায়ীরা।
ইন্দা কলেজের গার্লস হোস্টেল সালেহা খাতুন ছাত্রী নিবাসে আপাতত ২০টি শয্যা নিয়ে এই সেফহোম চালু হলেও দ্রুত এটিকে ৪০ শয্যায় রূপান্তরিত করা হবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘আমরা সেফহোম গড়ার মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই এগুচ্ছিলাম কিন্তু সরকার তখনো বেসরকারি উদ্যোগে এই ধরনের হোম গড়ার অনুমতি দেননি। সরকারি নীতি ঘোষিত হওয়ার সাথে সাথেই আমরা আবেদন করি এবং অনুমতি পেয়ে যাই।”
শহরের ১২টি সংগঠন এগিয়ে এসেছে এই মহৎ কর্মযজ্ঞে। নেতৃত্ব দিচ্ছে সেন্ট জনস আ্যম্বুলেন্স ব্রিগেড উইংসের খড়গপুর শাখা। সঙ্গে রয়েছে ইয়ং জেনারেশন ভবানীপুর, লাইফ ফাউন্ডেশন খড়গপুর, অনুগ্রহ মিনিস্ট্রি পাঁচবেড়িয়া, গরিব নওয়াজ ফাউন্ডেশন দেবলপুর, ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল খড়গপুর বোর্ড, খড়গপুর প্রেয়ার্স, উই উইনস খড়গপুর, বালাজি মন্দির কমিটি ওল্ড সেটেলমেন্ট, সিধু কানহু ফাউন্ডেশন খড়গপুর, হিয়া হার্ট ফাউন্ডেশন কলকাতা এবং সিদ্ধি বিনায়ক সেবা মন্দির। যদিও এখানেই শেষ নয় এই ১২টি সংগঠনের মিলিত সংগঠন ‘ খড়গপুর কোভিড ভলেটিয়ার’য়ে যুক্ত হতে পারেন যে কোনোও ব্যক্তি ও সংগঠন। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন ৫ লাখ মানুষের শহরের জন্য লড়াইটা সবে শুরু হল, দরকার প্রচুর মানুষ, সংগঠন এবং অর্থের কারন পুরোপুরি ভলেনটিয়ারদের সাহায্যেই শুরু হয়েছে এই লড়াই।
সেন্ট জনস আ্যম্বুলেন্স ব্রিগেডের খড়গপুর উইংস ব্রিগেডিয়ার রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত অসীম নাথ জানিয়েছেন, ” ১২ জন চিকিৎসক যুক্ত হয়েছেন এই পরিষেবায়। এখনও অবধি ৮জন নার্স এসেছেন আরও চারজন আসবেন। ডাক্তার ও নার্স আ্যসোশিয়েশন আমাদের অভূতপূর্ব সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা কৃতজ্ঞ তাঁদের প্রতি। কৃতজ্ঞ খড়গপুর মহকুমা শাসক স্যার আজমল হুসেনের প্রতি যাঁর প্রশাসনিক তৎপরতায় শুধু জেলা নয় সম্ভবতঃ রাজ্যে প্রথম কলকাতার বাইরে বেসরকারি সেফ হোম গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে।”
হোম কর্তৃপক্ষ বলেছেন, ” খড়গপুরবাসী একটা প্রচন্ড ভয়ভীতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, করোনা হলে কোথায় গেলে পরিষেবা পাওয়া যাবে এনিয়ে যেমন দুশ্চিন্তা রয়েছে তেমনই দুশ্চিন্তা অক্সিজেন সংকট নিয়ে। কেউ কেউ হয়ত আতঙ্কেই অর্ধেক শেষ হয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের সবার কাছেই আমরা জানাচ্ছি আর কোনও ভয় নেই, প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নেব আমরা। তারপর বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে পাঠানো হবে কোভিড হাসপাতালে। ২৪ঘন্টা চিকিৎসক ও নার্স থাকবেন। উপসর্গহীন ও মৃদু উপসর্গযুক্তদের জন্য এই সেফহোমে খাবার, ওষুধ, অক্সিজেন সবই পাওয়া যাবে বিনামূল্যে।”
অসীম নাথ আরও বলেছেন, “কেউ কেউ সপরিবারে আক্রান্ত হচ্ছেন। পুরো পরিবারকেই নিয়ে আসব আমরা। উপসর্গহীন, মৃদুউপসর্গ যুক্ত কেউ যদি বাড়িতে বসে চিকিৎসা পরিষেবা নিতে চান আমাদের ডাক্তারবাবুরা ভিডিও কলিং মারফৎ টেলিমেডিসিন পদ্ধতিতে চিকিৎসা করবেন। কেউ ভয় পাবেননা, আতঙ্কে ভুগবেননা। আমরা সবাই মিলে এই করোনা যুদ্ধ লড়ব।”
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেই এসে পড়েছে তৃতীয় ঢেউয়ের অশনি আর সেই দিকে তাকিয়ে শীঘ্রই ৪০শয্যায় রূপান্তরিত করা হচ্ছে এই সেফ হোমকে। এছাড়াও মালঞ্চ, তালবাগিচা এলাকায় যদি কোনও আবাসন পাওয়া যায় তবে সেখানেও একটি করে পৃথক সেফহোম খোলার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে খড়গপুর কোভিড ভলান্টিয়ার। অসীম নাথ জানিয়েছেন, ” শহরের সমস্ত সমাজসেবী সংগঠন উদ্যোগ নিন অথবা আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারেন। এখনো অবধি ১০০ স্বেচ্ছাসেবক যুক্ত হয়েছেন এই লড়াইতে।”
দ্য খড়গপুর পোষ্ট এই উদ্যোগকে সর্বাত্মক সাধুবাদ জানাচ্ছে। সাথে সাথে শহরের সমস্ত সম্পন্ন নাগরিকদের কাছে আবেদন জানাচ্ছে নিজেদের সাধ্যমত সহযোগিতা নিয়ে এই উদ্যোগের পাশে দাঁড়ান। আপনার সামান্যতম সাহায্যও এই লড়াইকে শক্তিশালী করবে। প্রয়োজনে সেন্ট জনস আ্যম্বুলেন্স ছাড়াও বাকি ১১টি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।