নিজস্ব সংবাদদাতা: লোকসভা ভোটের মুখে ঝাড়গ্রাম লোকসভায় আদিবাসীদের সামাজিক সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের অন্যতম নেতা রবীন টুডুর স্ত্রী বীরবাহা টুডু সরেনকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস আর তারপর থেকেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল সংগঠনের একাংশ। রাজনৈতিক দলের আজ্ঞাবহ হয়ে পড়ার আভিযোগ তুলে সংগঠনের মধ্যে থাকা একাংশ বিদ্রোহ করে নেতৃত্বের প্রতি। অন্যদিকে রাজ্যে পালাবদলের পর নেতৃত্বের একাংশের শাসক প্রীতি বিভাজন আনে সংগঠনে। তৈরি হয় নতুন সংগঠন।
এরপরই মূল সংগঠনকে বাদ দিয়েই দলের এক গুচ্ছ নেতা নিজেদের মতো করে ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, ঘাটাল, কেশপুর প্রভৃতি এলাকায় স্থানীয় স্তরে নিজের মত করে আন্দোলন শুরু করেন বিক্ষুব্ধরা। অন্যদিকে মাহালের নেতৃত্বে রাজ্য জুড়ে একের পর এক চাক্কা বনধ ও অবরোধের মত কর্মসূচি নিয়ে বিব্রত করতে থাকে। এতে আদিবাসীর ঐক্যবদ্ধতা নষ্ট হচ্ছে দেখে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার উদ্যোগ ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল এর।
মঙ্গলবার এই লক্ষ্যে অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার এই সংগঠনের নেতা সদস্যরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি বৈঠকে বসেছিলেন।
মেদিনীপুর শহরের প্রান্তে রাঙ্গামাটিতে তারা এই বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন। যেখানে বিক্ষুব্ধ নেতৃত্ব দের ডেকে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল।তবে খড়গপুর ডেবরা সহ বেশ কয়েকটি এলাকার নেতৃত্বদের অপেক্ষা করলেও সারাদিন বসার পরেও এই সংগঠনের বহু নেতৃত্বই বৈঠকে হাজির হননি। তাই সংগঠনের পক্ষ থেকে নেতৃত্বরা সিদ্ধান্ত নেন সংগঠনের পুরনো দুই শীর্ষ নেতা রবিন টুডু ও নিত্যানন্দ হেমব্রম এর নেতৃত্বে সংগঠন এগিয়ে চলবে। সেইসঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের উদ্দেশ্যে খড়গপুর এলাকার আদিবাসী নেতা মন্টু সরেন বলেন-” অনেকেই সামাজিক সংগঠন কে বিচ্ছিন্ন করে আন্দোলনে নেমেছিলেন। তাদের ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা উপস্থিত না হয়ে সংগঠন কে বদনাম করার চেষ্টা করলেন। তাই আগামী দিনে আমাদের দুই পুরনো নেতার নির্দেশে সংগঠনটি পরিচালিত হবে। আদিবাসীদের সংগঠিত রাখার জন্য সর্বোত ভাবে লড়াই করবে আমাদের সামাজিক সংগঠনটি ৷
এদিন সংগঠনের পক্ষ থেকে অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার সংগঠনের আহ্বায়ক রবি মুর্মু বলেন -” সকলের কাছে অনুরোধ রাখব আদিবাসীদের মূল সামাজিক সংগঠন কে বিচ্ছিন্ন করে বদনাম করার চেষ্টা অনেক হয়েছে। সামনের দিনে আমরা নিজেদের মতো করে আদিবাসীদের মতামত নিয়ে এগোবো। তবে রাজ্য প্রশাসন আমাদের জন্য অনেক কিছুই করেছে। তাই পুরোপুরি তাদের দলের না যোগ দিলেও তাদের পাশে থাকবো আমরা।”
যদিও মুর্মুর এই অনুরোধকে আসলে শাসকের প্রতি সংগঠনকে বিলিয়ে দেওয়ারই প্রয়াস দাবি করে বিক্ষুব্ধ এক নেতা জানিয়েছেন, ”বিধানসভা নির্বাচনের মুখে ফের আদিবাসী জনসমাজকে নিজেদের পকেটে ঢোকাতে পরিকল্পনা করেছে শাসক দল । সেই শাসকদলের অনুগ্রহে পুষ্ট হওয়া কিছু নেতা নিজেদের বিক্রি করে আদিবাসীদের ভোট শাসকের ঝুলিতে ভরার চেষ্টা করছে। দিনের পর দিন এ রাজ্যে আদিবাসীদের জমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে, আদিবাসী কন্যা ধর্ষিতা হচ্ছে কিন্তু পুলিশ নীরব। এসব নিয়ে তাঁরা কোনও আন্দোলন করছেন না কেন? এই বিক্রি হয়ে যাওয়া নেতৃত্বের কথায় আদিবাসী সমাজ নাচবেনা। আমাদের আন্দোলন যেমন চলছে তেমনই চলবে।”