নিজস্ব সংবাদদাতা: লোকে লাইন দিয়ে চর্বি ছাড়া ৭০০টাকা আর চর্বি যুক্ত ৬০০ টাকা প্রতি কেজি খাসির মাংস কিনছে কিন্ত ৭০টাকা কেজিতে নেমেও মাছি তাড়াচ্ছে ব্রয়লার মুরগি বিক্রেতা। গরীবের ঘরে সস্তায় প্রোটিন যোগানো, হার্ট ও অন্যান্য রুগীর নিরাপদ খাদ্য ব্রয়লারের এই দুরবস্থায় দোলের দিনের ছবিটা দেখে অনেকেই হাসাহাসি করছিলেন কিন্তু ভয়ংকর সত্যিটা হয়ত অনেকেই উপলব্ধি করেননি যে করোনার সাথে ব্রয়লার মুরগিকে জুড়ে যে মিথ্যা প্রচার সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে চলেছে সেই অন্তঃসারশূন্য প্রচারের জেরে রাজ্যে এবং দেশে লক্ষ লক্ষ পরিবার সর্বনাশের মুখে দাঁড়িয়ে। আর সম্ভবত ‘নোটবন্দী’র পর ক্ষুদ্র শিল্পে এতবড় আঘাত আসেনি। সর্বৈব মিথ্যা এই প্রচারে করোনা আতঙ্কে ডুবতে বসেছে রাজ্যের পোলট্রি শিল্প। গত তিন সপ্তাহে কমপক্ষে সাড়ে চারশো কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে এই রাজ্যে।
সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারে করোনা আতঙ্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ক্রমশ নিম্নগামী হতে থাকে ব্রয়লার মুরগির দাম। কমতে কমতে সোমবার খুচরো মূল্য নেমে গিয়েছে ৭০ টাকায়। ওয়েস্ট বেঙ্গল পোল্ট্রি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মদন মোহন মাইতি বলেন, “যেখানে কিলোপ্রতি পাইকারি দাম থাকে ৮০-৮৫টাকা। সেই দামে খুচরো বিক্রি হচ্ছে! পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৩২-৩৫টাকা প্রতি কেজি। ক্ষতির পরিমাণ ক্রমশ বেড়ে চলেছে। সারা ভারতে ব্যবসা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।”
পরিসংখ্যান বলছে সারা দেশে প্রায় ৫০ লক্ষ পোল্ট্রি ফার্ম রয়েছে। এ রাজ্যে রয়েছে ৫ লক্ষ। ফেডারেশন মনে করছে, এরপর আর মুরগি চাষ করার সাহস থাকবে না। থাকবে না অর্থও। বাড়তি অর্থ সাহায্য না করলে তিন লক্ষ কৃষক মুরগি পালন করা ছেড়ে দেবে। শেষ অবধি ক্ষতির পরিমাণ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে কেউ জানেনা।
বর্তমানে দেশজুড়ে ব্রয়লার শিল্পে বার্ষিক লেনদেনের অঙ্ক বছরে ১ কোটি ৪০ লক্ষ কোটি টাকায়। আর রাজ্যে সেটা বছরে ১৬-১৭হাজার কোটি টাকা। মদন মোহনবাবু বলেন, “সপ্তাহে উৎপাদন মূল্যের ৬০ শতাংশ ক্ষতিতে মুরগি বিক্রি হচ্ছে। সেই হিসাবে সপ্তাহে গড় ক্ষতির পরিমাণ ২০০ কোটি টাকা। তিন সপ্তাহে ৬০০ কোটি টাকা। আমাদের হিসাবে কমপক্ষে এই তিন সপ্তাহে সাড়ে চারশো কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে থেকেই বুঝি করোনা আতঙ্কে ক্ষতি শুরু হয়েছে।”
অথচ চিকিৎসক থেকে বিশেষজ্ঞ কেউই দাবি করছেন না যে ব্রয়লার মুরগির মাংস খেলে করোনা আক্রমণের সম্ভবনা আছে। তবু সোশাল মিডিয়ায় এমনভাবে প্রচার করা হয়েছে যে মুরগির মাংসের প্রতি আতঙ্ক জন্মেছে সাধারণ মানুষের। হুহু করে নেমে গিয়েছে মুরগির মাংসের দাম। কেন এভাবে প্রচার করা হল তা নিয়ে সরকারের তদন্ত করা প্রয়োজন। এর পিছনে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট মহলের। আর ঘটনা এটাও যে সোশ্যাল মিডিয়ার এই বিকৃত প্রচারকে রুখতে সরকারের তরফেও তেমন কোনও পাল্টা প্রচারও করা হয়নি ব্রয়লারের সমর্থনে। ফলে শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিচারে গিলেছে সোশ্যাল মিডিয়ার অপপ্রচার।