নিজস্ব সংবাদদাতা: গত কয়েকদিন আরটি/পিসিআর কিটস সংকটে ভুগছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা। ফলে পর্যাপ্ত আরটি/পিসিআর পরীক্ষাই করা যাচ্ছেনা। দেখা যাচ্ছে এরফলে জেলার সংক্রমন চিত্রটি পুরোপুরি উঠে আসছেনা। তারমধ্যেই যে চিত্রটা উঠে আসছে তাও কিছু কম বিপজ্জনক নয়। যেমন ৩রা এপ্রিল দেখা যাচ্ছে কেবলমাত্র শালবনী, আইআইটি খড়গপুর , ডেবরা এবং মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে খুবই সামান্য কিছু আরটি/পিসিআর পরীক্ষা হয়েছে। বেশকিছু পরীক্ষা হয়েছে রেলে। যা থেকে মনে হচ্ছে রেল বাদ দিলে বাকি সমস্ত জায়গাতেই আরটি/পিসিআর কিটসের মারাত্মক সঙ্কট রয়েছে। যেমন ঘাটাল মহকুমা থেকে এদিন কোনোও আরটি/পিসিআর পরীক্ষার ফলাফলই আসেনি। যদিও পরিস্থিতি সামাল দিতে আ্যন্টিজেন পরীক্ষার পরিমান বাড়ানো হয়েছে আর সেই পরীক্ষা বাড়াতেই ফের জেলার দৈনিক সংক্রমনের গ্রাফ উর্ধমুখী হতে শুরু করেছে।
৩ মে অর্থাৎ সোমবার জেলায় ৩৬৪ টি পজিটিভ পাওয়া গেছে তারমধ্যে মাত্র ১১০ টি আরটি/পিসিআর, ২১৯টি আ্যন্টিজেন এবং ৩৫ টি ট্রুনাট সূত্রে পাওয়া গেছে।
গত কয়েকদিনের মত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সর্বোচ্চ সংক্রমন পাওয়া গেছে খড়গপুর শহর থেকেই। সংখ্যাটি ১৫০ য়ের কাছাকাছি যার মধ্যে রেল পরিবার সূত্রেই আক্রান্ত ৮২জন। আইআইটি থেকে ৮ জন আক্রান্ত মিলেছে যারমধ্যে ৫ জন আইআইটি ক্যাম্পাসেরই বাসিন্দা।
যেহেতু প্রায় ১৫০ জন খড়গপুর শহরেই আক্রান্ত তাই ধরে নেওয়া যেতেই পারে যে সমগ্র খড়গপুর শহরেই সংক্রমন পাওয়া গেছে এবং যে ৮২ জন রেলকর্মী অথবা তাঁদের পরিবার আক্রান্ত হয়েছে তাঁরা শহরের বিস্তৃত এলাকা জুড়ে থাকা রেল আবাসন ও তার বাইরে নিজ নিজ বাড়ি অথবা ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন। তাই এককথায় বলা যায় শহরের সমস্ত প্রান্ত থেকেই সংক্রমনের সঙ্কেত পাওয়া গেছে। তারমধ্যেও যদি হিসাব করা যায় তবে বলতে হয় এদিনও ইন্দা এলাকা থেকেই সর্বোচ্চ পাওয়া গেছে, ন্যূনতম ১৪জন। ইন্দা ছাড়াও বাকি স্থানগুলি হল বিদ্যাসাগরপুর যেখানে অন্ততঃ ৫জন আক্রান্ত। ১টি আবাসন সহ ইন্দায় ৫জন আক্রান্ত। এছাড়া সারদাপল্লীতে ৩জন ও বামুনপাড়ায় ১ আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। ৬ জন করে সংক্রমনের আওতায় এসেছেন ভবানীপুর ও ঝাপেটাপুর এলাকা থেকে। ৫জন করে সংক্রমিত হয়েছেন সুভাষপল্লী, বুলবুলচটি, চণ্ডীপুর সহ মালঞ্চ, রাজগ্রাম সহ খরিদায়। নিউ সেটেলমেন্ট, কৌশল্যা,নিমপুরা, প্রেমবাজার ও দেবলপুর সুকান্তপল্লী, মায়াপুর ডিভিসি, পীরবাবা থেকে ৩ জন করে আক্রান্ত পাওয়া গেছে।
২জন করে আক্রান্ত পাওয়া গেছে রবীন্দ্রপল্লী, তলঝুলি, গোলবাজার, গোলখুলি ট্রাফিক এলাকা থেকে। বাকি আক্রান্তরা হলেন রেল হাসপাতাল, পুরাতনবাজার, সাঁজোয়াল, ছোট আয়মা, ওল্ড সেটেলমেন্ট, সোনামুখী, চাঁদমারি, বারোবেটিয়া ও তালবাগিচায়। মনে রাখতে হবে এলাকা ভিত্তিক এই আক্রান্তের সংখ্যা ন্যূনতম। এর বাইরে আরও আক্রান্ত থাকতে পারে যাঁদের পূর্ন ঠিকানা দেওয়া হয়নি। শুধু খড়গপুর শহর বলে জানানো হয়েছে জেলা স্বাস্থ্যদপ্তরের নথিতে। গ্রামীণ খড়গপুরের গোকুলপুর, পূর্ব পাথরি, চাঙ্গুয়াল, গোপীনাথপুর ও রাঙাদীঘি বেনাপুর থেকে আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে।
মেদিনীপুর শহরে এদিন প্রায় ৭৭ জন আক্রান্ত মিলেছে। শহরের নির্দিষ্ট ঠিকানা উল্লেখ নেই ৫ জনের। সর্বোচ্চ ৫ জন করে আক্রান্ত হয়েছেন শরৎপল্লী ও তাঁতিগেড়িয়া থেকে। সিপাহীবাজার ও মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আক্রান্ত ৫ জন করে। তোলাপাড়া, নিমতলা, কুইকোটা, ক্ষুদিরাম নগর, ৩জন করে আক্রান্ত পাওয়া গেছে। ধর্মা, তলকুই, বল্লভপুর, দ্বারিবাঁধে ২জন করে আক্রান্ত। এছাড়া ছোটবাজার, হাতারমাঠ, হসপিটাল রোড,স্টেশন রোড, বিধাননগর, আবাস, পাটনাবাজার, নিবেদিতা পল্লী, মহাতাপপুর, বৈশাখীপল্লী, কোতবাজার, কর্নেলগোলা, রবীন্দ্রনগরে ১জন করে আক্রান্ত পাওয়া গেছে। মেদিনীপুর সদরে বেলিয়া, ডুমুরকোটা, খয়েরউল্লাচক, হরিশপুর, জামকুন্ডা, বেঙ্গাই থেকে আক্রান্ত পাওয়া গেছে।
শালবনী থানার শালবনী সদরে ৫ জন ছাড়াও মিরগা, ওসিএল ও ট্যাঁকশাল কলোনী থেকে আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। গড়বেতার চন্দ্রকোনা রোড, বড়ডাবচা, দ্বারিগেড়িয়া, কলাবনী, রসকুন্ডু,ওড়গাঁজা, অপর্নাপল্লী, ভেঙ্গাডাহা, প্রতাপপুর, আমলাগোড়া, কদমাশোল, লাপুরিয়া, ফুলমনিপুর, হুমগড়, পানিকোটর, বড়মুড়া, হলদিনালাতে অনেকেই আক্রান্ত। গোয়ালতোড়ের গোয়ালতোড়, পাটাশোলে ২জন আক্রান্ত। কেশপুর থানার কেশপুরে একজন আক্রান্ত।
ডেবরায় আক্রান্ত ২৬ জন। এরমধ্যে শুধু ডেবরা ঠিকানায় আক্রান্ত ১৫জন। বাকিরা পশ্চিম বেগুনি, করন্দা, ডিঙল, নিজপাপন, বালিমান্দা, চককুমার, পসঙ, বরাগড়, শ্রীরামপুর এলাকার। পিংলার পিংলা, মালিগ্রাম, রাতরাপুর, গোবর্ধনপুর, কুসুমদায় আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে নতুন করে। সবংয়ের কসবায় আক্রান্ত ১জন। মোহনপুর থানার বাগদা,তনুয়া, পলাশী, কাশিদা, সিঙ্গারুই, নিলদায় আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। দাঁতন থানার রসূলপুর তুরকা, তালদা, গাজীপুর কিসমৎ ও খন্ডরুই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আক্রান্ত ১জন করে এবং বেলদার বেলদা নবোদয়পল্লীতে ২জন, সুশিন্দায় ৩জন, ত্রিকোনপল্লী, দেউলি, ঠাকুরচক ও কেদার সাবড়ায় আক্রান্ত পাওয়া গেছে।
ঘাটাল মহকুমার চন্দ্রকোনা থানার গাজীপুর, মদনমোহনপুর, বাবুরবেড়, ভগবন্তপুর, কইগেড়িয়া, দক্ষিণবাজার, রাধাবলভপুর, খিরাটি, কড়াসিয়া, কঙ্কাবতী, লক্ষ্মীপুর, নিশানচক ছাড়া ৬জন আক্রান্ত ক্ষীরপাই থেকেই। ঘাটাল থানার শালিকা, মংরুল, দেওয়ানচক, আগড়, হরিশনগর, দরিঅযোধ্যা, রামচন্দ্রপুর, দুবরাজপুর, চাউলি থেকে আক্রান্ত পাওয়া গেছে। দাসপুর থানার সোনাখালি, চকমাদারিয়া, জয়রামচকে আক্রান্ত পাওয়া গেছে।