নিজস্ব সংবাদদাতা: সবার আগে মাঠে থাকার কথা ছিল তাঁরই কিন্তু সবার আগে মাঠ ছেড়ে দিলেন তিনিই। সারা বাংলা জুড়ে যখন তৃনমূল কর্মীরা জয়ের উল্লাসে মেতে উঠেছেন, যখন টিভির চ্যানেলে চ্যানেলে তৃনমূলের জয় আর বিজেপির পরাজয় নিয়ে চুল চেরা বিশ্লেষনে বিভিন্ন দলের ছোট বড় মাঝারি নেতারা আর বিশেষজ্ঞর দল তখন অত্যন্ত নীরবে নিজের বর্তমান পেশা থেকে অবসর নিলেন সবুজ জয়ের প্রধান কারিগর প্রশান্ত কিশোর ওরফে পি কে। জানিয়ে দিলেন আর ভোট কুশলীর পেশায় থাকবেন না তিনি এবার অন্য কিছু নিয়ে থাকবেন।
সাফল্যের শীর্ষে থাকতে থাকতে এই জায়গা ছেড়ে দেওয়াটা একমাত্র কিছু সাহসী খেলোয়াড়দের মধ্যেই দেখা যায় যাঁরা ব্যাট উঁচু করে ময়দান ছেড়ে দেওয়ার সাহস দেখাতে পারেন। রবিবার, তৃনমূল যখন সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে গেছে ঠিক তখনই এক ইংরেজি টেলিভিশন চ্যানেলে আলাপচারিতায় বসে পিকে জানিয়ে দিলেন, ভোট কুশলীর কাজ আর তিনি করবেন না।
অথচ অনেকেই বিশেষ করে বিজেপি ধরে নিয়েই ছিল অন্যরকম ভাবে যেতে হবে তাঁকে। বিজেপি বাংলার ভোটে ২০০র কাছাকছি আসন পাচ্ছে ধরে নিয়েই বিজেপি নেতারা আগাম কটাক্ষ করেই বলেছিলেন এবার বাক্স প্যাঁটরা বাঁধুন প্রশান্ত কিশোর। কারন বিজেপিরা নেতারা যখন নির্বাচনের আগে ২০০ আসন পাওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন, তখন পিকের পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছিল বিজেপি যদি ১০০ আসন বাংলায় পায়, তাহলে তিনি নিজের পেশা বদলে নেবেন। সেই বিজেপিকে তিনি ১০০ র অনেক আগেই দাঁড় করিয়ে দিলেন। তারপরও প্রশান্ত কিশোর এই পরিসর ছেড়ে দিচ্ছেন বলে জানিয়ে দিলেন। তিনি বলেছেন, আই প্যাকের অন্যরা এই কাজ চালিয়ে যাবেন। ঘটনায় সত্যি হতবাক অনেকেই।
যদিও প্রশান্ত কিশোরের জয় এই প্রথম নয়, পাঞ্জাবের অমরিন্দর সিং, তামিলনাড়ুর স্ট্যালিনকে ভরাডুবির হাত থেকে কুর্সিতে এনেছেন তিনি ঠিক যেমনটা লোকসভায় ভরাডুবি হওয়া বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তুলে আনলেন। প্রশান্ত কিশোরকে ছাড়া এ লড়াই জেতা কার্যত অসম্ভব ছিল তৃনমূলের পক্ষে জেতা। দিদিকে বলো থেকে, বাংলার গর্ব মমতা হয়ে বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়। সঙ্গে স্বাস্থ্য সাথী থেকে দুয়ারে সরকার আর একেবারে শেষ বেলায় দুয়ারে রেশন আর বাংলার মায়েদের হাতে ৫০০টাকা হাত খরচ সবই তাঁর তৈরি পরিকল্পনা বলেই মনে করা হচ্ছে। আর এই পরিকল্পনার কাছেই ফেল করে গেছে মোদি-শাহ এক্সপ্রেস। বাংলার জয় করতে কার্পটে বম্বিংয়ের মত প্রচার করেছে বিজেপি, বহু সভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। নিয়ে আসা হয়েছে যোগী আদিত্যনাথকে, এমনকী নেমেছেন মহাগুরু মিঠুন চক্রবর্তীও। কিন্তু তা স্বত্ত্বেও অনেক আগেই থেমে গেছে বিজেপির বিজয় রথ। এমনই ছিল প্রশান্ত কিশোরের পরিকল্পনা। এই পাহাড় প্রমান সাফল্যের পর যেখানে তাঁর জন্য ভোট কুশলী হওয়ার অফার উপচে পড়ত সেখানে নিজেই সরে গেলেন তিনি!
২০১৮ সালে জনতা দল ইউনাইটেডে যোগ দিয়েছিলেন প্রশান্ত কিশোর। ২০১৯ শে তৃনমূলের সঙ্গে কাজ করতে চুক্তিবদ্ধ হন তিনি। তার আগে লোকসভা ভোটে ধাক্কা খায় তৃনমূল কংগ্রেস। পিকে দায়িত্ব নেওয়ার পরেই বিধানসভার উপনির্বাচন। তিনটি আসনেই তৃনমূলের জন্য জয় ছিনিয়ে আনেন পিকে। সেটাই ছিল বাংলায় তাঁর আ্যসিড টেস্ট। স্পষ্ট বক্তা পি কে ২০২০ সালে পার্টি প্রধানের সমালোচনা করার জন্য জনতা দল ইউনাইটেড থেকে বহিষ্কৃত হন। ২০১৯ সালে প্রশান্ত কিশোর ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের জন্যই তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের চুক্তি হয়। আর ২৯৪টি আসনেই তৃনমূলের প্রার্থী নির্বাচনে ভূমিকা নেয় তাঁর সংস্থা আইপ্যাক। সে নির্বাচন যে কতটা সঠিক ছিল তা প্রমাণ করে দিয়ে গেলেন।