নিজস্ব সংবাদদাতা: ১দিনের ব্যবধানে ফের ৩০০ গন্ডি পার করে দিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার করোনা সংক্রমন। আর গত ৫দিনের হিসেবে জেলার মোট সংক্রমন দাঁড়ালো ১২৫৮ জনে। অর্থাৎ জেলায় গত ৫ দিনে দৈনিক ২৫০ জন করে আক্রান্ত হয়েছেন। ২৫শে এপ্রিল জেলায় আরটি/পিসিআর পরীক্ষায় ২৪৯, আ্যন্টিজেন পরীক্ষায় ৪৩ এবং ট্রুনাট পরীক্ষায় ৩২ জন পজিটিভ বলে চিহ্নিত হয়েছে যা সব মিলিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩২৪ জনে। ২৩শে এপ্রিল এই সংখ্যাটা ছিল ৩৩১।রবিবারের এই হিসাব অনুযায়ী জেলার মধ্যে এগিয়ে রয়েছে মেদিনীপুর শহর, পরেই রয়েছে খড়গপুর এবং তার পরে রয়েছে দাসপুর থানা এলাকা। মেদিনীপুর শহরে ৯০, খড়গপুর শহরে ৮২ এবং দাসপুর থানা এলাকায় প্রায় ৪০ জন আক্রান্ত।
খড়গপুর শহরে ৮২ জন আক্রান্তের প্রায় অর্ধেকই রেল কর্মচারী অথবা তাঁদের পরিবার। কোথাও কোথাও সপরিবারেও আক্রান্ত হতে দেখা গেছে রেলকর্মীদের।রবিবার এঁদের সংখ্যা ৩৯জন। সংক্রমন মারাত্মক আকার নিয়েছে আইআইটি খড়গপুর ক্যাম্পাসে। ১৯ জনের নমুনা থেকে পজিটিভ এসেছে ১২জনের। এই১২ জনের ১১ই জনই মহিলা। ১ মহিলা বাদ দিয়ে বাকি আক্রান্তরা ক্যাম্পাসের মধ্যেই বাস করেন। এদিন শহরের সর্বোচ্চ আক্রান্তের খবর এসেছে তালবাগিচা ও মালঞ্চ থেকে। শুধু তালবাগিচা, ডিভিসি মায়াপুর মিলিয়ে আক্রান্ত ৬ জন। অন্যদিকে মালঞ্চ রেল আবাসন, মালঞ্চ ও বিবেকানন্দপল্লী মিলিয়ে আক্রান্ত ৬ জন। ইন্দা থেকে ৩ জন ও সাউথ সাইড থেকে ২জন আক্রান্ত পাওয়া গেছে। রাখাজঙ্গল কসমোসিটিতে আক্রান্ত ৫১ ও ৪৪ বছরের দম্পতি। এছাড়াও রবীন্দ্রপল্লী, রাজপুরা, ঝুলি, ভবানীপুর, নিমপুরা, দেবলপুর, পুরাতনবাজার সাঁজোয়াল, বুলবুলচটি, কৌশল্যা, শ্রীকৃষ্ণপুর, গোলবাজার, পাঁচবেড়িয়া, নর্থ ভবানীপুর, নিমপুরা, ঢেঁকিয়া এলাকার পাশাপাশি রেলের বিভিন্ন আবাসন এলাকা এবং আরপিএফ ব্যারাক থেকে আক্রান্তের খবর এসেছে।
মেদিনীপুর শহরকে কাবু করেছে পারিবারিক সংক্রমন। বেশ কয়েকটি পরিবারে একাধিক সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। যেমন ধর্মাতে মোট ৭ জন আক্রান্ত। যার মধ্যে ৫৪, ৩০, ২৬ বছরের মহিলা ও ৫০ ও ৬০ বছরের পুরুষ সহ একই পরিবারের ৫জন আক্রান্ত। বাড়মানিকপুরে ৩২ ও ১৯ বছরের মহিলা এবং ৪৬ বছরের পুরুষ আক্রান্ত। একই ভাবে কুইকোটায় আক্রান্ত ৫জনের ২জন একই পরিবারের ৫২ ও ২১ বছরের পুরুষ। হবিবপুরে আক্রান্ত ৫জনের ২জন একই পরিবারের ৬৫ ও ৫২ বছরের পুরুষ ও মহিলা। শরৎপল্লীতে ৩ জনের ২জন একই পরিবারের ৬১ ও ৬০ বছরের দম্পতি।
ওই জায়গা ছাড়াও একাধিক আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে বিধাননগর, মহাতাপপুর, মির্জাবাজার, আবাস, তোড়াপাড়া, মানিকপুর, রাঙামাটি, বল্লভপুর, অশোকনগর এলাকায়। এখানে ৩ থেকে ২জন করে আক্রান্ত। ১ জন করে আক্রান্ত পাওয়া গেছে সিপাহীবাজার, নতুনবাজার, জগন্নাথমন্দির, দেশবন্ধুনগর, তলকুই, বার্জটাউন, ক্ষুদিরামনগর, দেশপ্রাণপল্লী-পালবাড়ি, কর্নেলগোলা, মিত্রকম্পাউন্ড, বড়বাজার, মিঞাবাজার, তাঁতিগেড়িয়া থেকে। ৩ জন পুলিশ কর্মী সহ শহরে সুনির্দিষ্ট ঠিকানা উল্লেখ করা হয়নি এমন ২৭ জন আক্রান্ত। এক আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ থেকে।মেদিনীপুরব শহরের বাইরে কালগাঙে আক্রান্ত একই পরিবারের ২১ ও ১৭ বছরের যুবক ও কিশোর। খয়েরউল্লাচকে আক্রান্ত ২ জন। সদর মহকুমার শিরোমনি, খাসজঙ্গল, ডুমুরকোটা ও কইগেড়িয়াতে আক্রান্ত ৫জন।
খড়গপুর মহকুমার গ্রামীন খড়গপুরের হাটসুলতানপুরে একই পরিবারের ৪০ বছরের এক পুরুষ ও এক মহিলা আক্রান্ত। এছাড়া গোকুলপুরে আক্রান্ত ২ জন। এছাড়া আক্রান্ত মিলেছে শ্যামরাইপুর, রাউৎমনি, শালকুন্ডা, কলাইকুন্ডা ধারেন্দা, ওয়ালিপুর, আম্বা, বরকরাঞ্জি শ্যামচক মিলিয়ে ১২জন আক্রান্ত।
ডেবরা থানার ভোগপুর বালিচক,কানুরাম, গোটগেড়িয়া, ডেবরা, পানিফলিয়া, বাঁশদা, আসনপুর, চকলাহানা আষাঢ়িতে একজন করে আক্রান্ত অন্যদিকে চকলালপুরে আক্রান্ত ৪৯ ও ৪৫ বছরের দম্পতি।
ডেবরার পরেই আক্রান্ত বেশি পিংলা থানায়। মালিগ্রাম, কদমবাগেড়িয়া, নারাঙাদীঘি, বেলরিয়া, পিংলা ও হান্দোলে একজন করে আক্রান্ত। ২ জন আক্রান্ত হয়েছেন জলচকে। সবঙয়ের বুড়াল গ্রামপঞ্চায়েতের শীতলদা ও উদ্ধবপুরে ২জন আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া দাঁতনের কোরিয়া জেনকাপুর, তকিনগর বেলদার পানিয়াড়া, নারায়নগড়ের নাড়মা এবং কেশিয়াবাড়ীর শ্রীরামপুর বাঘাস্তি ও দাসিসরিষায় ১জন করে আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে।
মেদিনীপুর সদর মহকুমার চন্দ্রকোনা রোড ফাঁড়ির একজন আক্রান্ত। সেরবেরা গ্রামের ৪ আক্রান্তের একই পরিবারের ২ বছরের শিশু এবং ৫৪ ও ২৬ বছরের মহিলা আক্রান্ত। দুর্লভগঞ্জে ৪ বছরের শিশুকন্যা এবং ৩০ বছরের দুই মহিলা ও ৫৫ বছরের মহিলা সহ ৪ জন আক্রান্ত। ডাবচা থেকে এক আক্রান্ত মিলেছে। কেশপুরের কেশপুর সদরে আক্রান্ত ২, ঝেঁতলায় একই পরিবারের ৩৭ ও ৩৫ বছরের ২যুবক ও আনন্দপুরে আক্রান্ত ১জন। গোয়ালতোড়ের পিংবনীতে একই পরিবারের ৪৩ ও ৩৬ বছরের দম্পত্তি ছাড়াও সীতারামপুর, বুলানপুর, ভালোবাসা জগারডাঙা থেকে ১জন করে আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেছে। শালবনীর ট্যাঁকশাল কলোনিতে ৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া রাউতারা, তিলাখুলি, ডাঙাপাড়ায় ১জন করে আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে।
ঘাটাল মহকুমার দাসপুরে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৪০ জন। সর্বাধিক আক্রান্ত দাসপুর সদরে। দুটি পরিবারের ৬ জন সহ ৭ আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে এখান থেকেই। এই ৬ জনের ২জন প্রৌঢ়ের বয়স ৫৬। ৬০, ৪৩, ২৬ বছরের তিন মহিলা এবং ১৯ বছরের যুবক রয়েছেন। এছাড়া পারিবারিক সংক্রমনের খবর এসেছে মামুদপুর (২৭পুং, ৫১ ম), রসূলপুর (২৩পুং,৪৬পুং), রাধাকান্তপুর (৭২পুং, ৪৫পুং)। একাধিক সংক্রমনের খবর এসেছে জোতঘনশ্যাম, সুজানগর থেকে। বাকি আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে কাশিয়াড়া, নাড়াজল, খঞ্জরপুর, কেলেগোদা, জোতকানুরামগড়, ভগবানচক, শ্রীবড়া, সাতপোতা, সয়লা, পলাশপাই, নিশ্চিন্তিপুর, চকচাঁইপাট, সুরথপুর, কাদিলপুর, হরেকৃষ্ণপুর, হুসেনপুর, ফকিরবাজার, কিসমৎকলড়া, শ্যামসুন্দরপুর, পদমপুর, গোপীনাথপুর, কান্তবাড়িয়া ইত্যাদি এলাকা থেকে।
ঘাটাল থানা এলাকার বীরসিংহে সর্বাধিক আক্রান্ত ৫ জন। কুশপাতায় ৩আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। খড়ার এবং কোন্নগরে ২জন করে আক্রান্ত। এছাড়া মহকুমা হাসপাতাল, চৌকা, বলরামপুর, দলপতিপুর, গোবিন্দনগর, কুরান থেকে আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। চন্দ্রকোনার কইগেড়িয়া, নেকড়বাগ তাতারপুর, গোঁসাইবাজার, রায়গঞ্জ, দেঘরা থেকে আক্রান্ত পাওয়া গেছে।