নিজস্ব সংবাদদাতা: পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনী করোনা হাসপাতালের চারতলার বাথরুমের জানলা গলে পালাতে গিয়ে নিচে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হল এক কোভিড রোগির। শুক্রবার মধ্যরাতের পর ঘটনাটি ঘটেছে বলেই পুলিশের অনুমান। শনিবার ভোর রাতে ওই রোগীর মৃতদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষী ও কর্মীরা। পরে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মৃতের নাম চিত্তরঞ্জন বেরা। ঘাটাল মহকুমার দাসপুর এলাকার বাসিন্দা ৫৬ বছরের বেরা ২২শে এপ্রিল করোনা সংক্রমন নিয়ে শালবনী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, শুক্রবারই আগেও একবার পালানোর চেষ্টা করেছিলেন বেরা। নিজের ব্যাগপত্র নিয়ে চারতলা থেকে নিচে নেমে এসেছিলেন বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্য। তখন হাসপাতাল কর্মীরা তাঁকে ধরে ফের ফেরৎ পাঠান। এরপর রাত দেড়টার পর থেকেই ওই রোগীকে তাঁর বেডে পাওয়া যাচ্ছিল না। তারপর থেকে রোগীর খোঁজখবর শুরু হয়। খবর দেওয়া হয় পুলিশেও। ওই রোগী ততক্ষনে বাথরুমে ঢুকে পড়েন নিজের ব্যাগপত্র নিয়ে। এক নিরাপত্তা রক্ষী সূত্রে জানা গেছে বাথরুমের জানলাগুলি একজন মানুষ গলে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। অনুমান করা হচ্ছে সেখান দিয়েই গলে নেমে পড়েন নিচের সানসেটে। সেখানে নিজের ব্যাগ রেখে দু’হাত দিয়ে ঝুলে নিচের সানসেটে পা রাখার চেষ্টা করেন কিন্তু সফল হননি এবার। হাত ফস্কে সোজাসুজি পড়ে যান নিচে, কংক্রিটের চাতালে।
হাসপাতালের কর্মীরা জানিয়েছেন, মাঝরাতে হাসপাতালে কিছু একটা পড়ে যাওয়ার শব্দ হয়। যদিও তখন বিষয়টি ভাবনার মধ্যেই আসেনি তাঁদের। এর কিছু পরে খোঁজাখুঁজির করতে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের পূর্ব দিকে পড়ে রয়েছেন ওই রোগী। পুলিশ জানিয়েছে, সানসেট থেকে ওই রোগীর ব্যাগটি উদ্ধার হয়েছে। ব্যাগ নিয়ে কেউ নিশ্চয় আত্মহত্যা করতে যাবেনা। ফলে মনে করা হচ্ছে পালানোর চেষ্টাই করেছিলেন ওই রোগী। আর যেহেতু এর আগেও তিনি পালাতে গিয়ে ধরা পড়েছেন তাই সেই সম্ভাবনাই প্রবল।
হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে দাসপুর থানা এলাকায় ওই রোগীর বাড়িতে তাঁর নিখোঁজ হওয়ার খবর দেওয়া হয়। শনিবার সকালে রোগীর দেহ উদ্ধারের খবর জানানো হয় তাঁর পরিবারকে। খবর পেয়েই তাঁর পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে পৌঁছন। পুলিশ জানতে পেরেছে যে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই কিছুটা মানসিক বিপর্যস্ত ছিলেন। প্রায় অন্যমনস্ক হয়ে পড়তেন। ঘটনায় দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
তবে ঘটনার পেছনে হাসপাতালের কর্মী, নিরাপত্তারক্ষীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষর দেওয়া কর্মী তালিকার সংখ্যা অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে পর্যাপ্ত কর্মী এবং নিরাপত্তারক্ষী রয়েছেন শালবনী করোনা হাসপাতালে। গতবছরই এই হাসপাতালে এক করোনা রোগী আত্মহত্যা করেছিলেন। তারপরেও এই ঘটনা ঘটে কী করে? যদিও কর্মীদের বক্তব্য কেউ চারতলার বাথরুমে গিয়ে সেখানকার জানলা গলে পালানোর চেষ্টা করবেন এমনটা ভাবাই যায়না।