নিউজ ডেস্ক: রাজ্য জুড়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যেন তোলপাড় করে দিচ্ছে সব কিছু। এই প্রথমবার রাজ্যে একদিনের নিরিখে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়ালো ১০ হাজারের গণ্ডি। রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০,৭৮৪ । গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মোট করোনায় বলি হয়েছেন ৫৮ জন। এর মধ্যে কেবলমাত্র মহানগরীতেই দৈনিক সংক্রমণ ২,৫৬৮, মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের এবং দ্বিতীয় স্থানে উত্তর ২৪ পরগনা; সেখানে আক্রান্ত ২,১৪৯ জন ও করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের।
রাজ্যে করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউ মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৬,৮৮,৯,৫৬ এবং করোনায় মৃতের সংখ্যা ১০,৭১০ জন। রীতিমত আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে রাজ্য জুড়ে। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই বৃহস্পতিবার বঙ্গে ষষ্ঠ দফার নির্বাচন। ইতিমধ্যেই করোনার লাল চোখ চিন্তায় ফেলেছে নির্বাচন কমিশন সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলিকেও। দলমত নির্বিশেষে একের পর এক প্রার্থীর শরীরে থাবা বসাচ্ছে এই মারণ ভাইরাস। করোনা আক্রান্ত হয়েছেন সুজন চক্রবর্তী, মদন মিত্র, মমতা বালা ঠাকুর খড়দার তৃণমূল প্রার্থী কাজল সিনহা, বেলেঘাটা আইডি-তে ভর্তি।
বনগাঁ লোকসভার প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরও বেলেঘাটা আইডি-তে চিকিৎসাধীন। এদিকে মঙ্গলবার তৃণমূলের মৌসম নূরেরও করোনা টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। মদন মিত্রের করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে বুধবারেই। তাঁকে এসএসকেএম থেকে অ্যাপোলো গ্লেনেগলস হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শরীরে ব্যাপক অক্সিজেনের ঘাটতি হচ্ছে কামারহাটির তৃণমূল প্রার্থীর। বাইরে থেকে অক্সিজেন না দিলে, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ৪০-এ নেমে যাচ্ছে। সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে চার লিটার অক্সিজেন লেগেছে তাঁর। পাশাপাশি, তাঁর নিউমনিয়া হয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে।
রাজ্য জুড়ে যেন করোনার কারণে ত্রাহি ত্রাহি রব। এমতাবস্থায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ছুটি বাতিল করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার রবীন্দ্রসদনে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে বৈঠকে বসেন ১৫টি সরকারি হাসপাতালের শীর্ষ কর্তারা। সূত্রের খবর সেখানে সিদ্ধান্ত হয় ৭-৮দিনের মধ্যেই কলকাতা ও শহরতলিতে বাড়ানো হবে ১ হাজার করোনা বেড। এছাড়াও এম আর বাঙুর হাসপাতালে এই মুহূর্তে রয়েছে ৭২০ বেড। সেখানে আরও বেড বাড়ানো হবে। শম্ভুনাথ পন্ডিত, বাঙুর ইন্সটিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সেস, পিজি পলিক্লিনিক এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উত্তীর্ণকে নিয়ে কম্পোজিট কোভিড হাসপাতালের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি আরও বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার ও রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর; যেমন- রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে নতুন নির্দেশিকা জারি করে বলা হয়েছে, ‘সংক্রমিতের উপসর্গ তীব্র হলে, তবেই হাসপাতালে ভর্তি নিতে হবে। মৃদু উপসর্গ থাকা রোগীদের সেফ হোমে পাঠাতে হবে। সঙ্কটজনক নাকি মৃদু উপসর্গ, স্বাস্থ্য দফতরের কল সেন্টারের মাধ্যমে যাচাই করতে হবে। ১২ ঘণ্টা নয়, করোনা চিকিত্সা পরিষেবায় যুক্তদের ৮ ঘণ্টা ডিউটির ব্যবস্থা।‘ এমনকি করোনা চিকিৎসাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জরুরি নয় এমন অপারেশন ১৫ দিনের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।