নিজস্ব সংবাদদাতা: ৮ দিনের জন্য করোনা-লক ডাউনের আওতায় আনা হল শালবনী ট্যাঁকশাল (BRB) টাউনশিপে। আপাতত বন্ধ করা হল নোট ছাপা। একটি বিশেষ সূত্রের খবর অনুযায়ী শালবনীর ওই নোট ছাপা কেন্দ্রের কলোনীতে ২০ এপ্রিল থেকে ২৮ এপ্রিল সম্পুর্ন বাজার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রায় আড়াই হাজার বাসিন্দার এই ছোট্ট টাউনশিপে মানুষজনকে পর্যাপ্ত কারন ছাড়া ঘরের বাইরে বেরুতে বারণ করা হয়েছে। জরুরি পরিষেবা ছাড়া সমস্ত বিভাগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ বাসিন্দাদের টাউন শিপে প্রবেশ কিংবা বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
টাউন শিপের ভেতরে থাকা শপিং কমপ্লেক্স বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । ঠিকাদার এবং বাইরে থেকে যারা বিভিন্ন কাজে ট্যাঁকশাল এলাকায় প্রবেশ করেন তাঁদের আপাতত ঢুকতে বারণ করা হয়েছে। এক আধিকারিক জানিয়েছেন নিরাপত্তা এবং সাফাইয়ের মত পরিষেবা ছাড়া মোটামুটি সব পরিষেবা বন্ধ রাখা হচ্ছে। বন্ধ রাখা হয়েছে নোট ছাপার কাজও।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, “একটি হিসাব অনুযায়ী শালবনী ট্যাঁকশাল কলোনির এখনও অবধি ২৯ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। আরও অন্ততঃ ১০ জন সম্ভাব্য করোনা উপসর্গে ভুগছেন। এমতাবস্থায় সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে বাধ্য হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। পরে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” এরই মধ্যে এক মহিলার মৃত্যু কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়েছে যদিও করোনা পরীক্ষায় তাঁর নেগেটিভ ফলাফল এসেছিল। ওই মহিলার বিভিন্ন উপসর্গ ছিল। অবস্থা সঙ্কট জনক হওয়ায় তাঁকে কলোনির বাইরে আনা হচ্ছিল বড় কোনও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে কিন্তু পথেই মারা যান তিনি। পরে ওই মহিলার স্বামী যিনি একজন আধিকারিকও বটে তাঁরও করোনা পরীক্ষা করা হয় তবে তিনিও নেগেটিভ এসেছেন। ট্যাঁকশালের এক কর্মীর কথায়, “আমরা এখন শুনতে পাচ্ছি যে আরটি/পিসিআর পরীক্ষাতেও দ্বিতীয় পর্যায়ের করোনার অস্তিত্ব ধরা পড়ছেনা। ফলে একটা আতঙ্ক তো আছেই।
যদিও ট্যাঁকশাল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে পর্যাপ্ত ব্যবস্থাই করা হয়েছে ওই এলাকায়। আইসিএম আর (ICMR) এবং কেন্দ্র ও রাজ্যের কোভিড প্রটোকল মেনেই উপসর্গ হীন বা স্বল্প উপসর্গদের হোম-আইসোলেশনে থাকতে বলা হচ্ছে। উপসর্গ বেশি হলে শালবনী করোনা হাসপাতালে কিংবা মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। অযথা আতঙ্কের কিছু নেই। একটি সূত্র মারফৎ জানা গেছে দিন দশেক আগে প্রথম একজন করোনা চিহ্নিত হওয়ার পরই তাঁর সংস্পর্ষে আসা ব্যক্তিদের করোনা পরীক্ষা করা হলে এক লপ্তে ৭ জনের পজিটিভ আসে। এরপর একে একে বেশ কয়েকজনের পজিটিভ আসতে শুরু করে যা সর্বশেষ ২৯জনে পৌঁছেছে।
এদিকে ট্যাঁকশাল এলাকায় করোনার বাড়বাড়ন্ত কিছুটা হলেও আতঙ্কগ্রস্ত করেছে শালবনীর বাজার এলাকার বাসিন্দাদের। তাঁরা জানিয়েছেন প্রায় ৮০০ পরিবার বসবাস করেন ওই কলোনি এলাকায়। তাঁদের নিত্য দিনের বাজার ঘাট চলে এই শালবনী বাজারেই। যেহেতু ওই কলোনি এলাকার বাসিন্দাদের বড় অংশই বিভিন্ন প্রদেশের এবং তাঁদের পৈতৃক বাড়িতে যাতায়াত লেগেই থাকে তাই বাইরে থেকে সংক্রমিত হয়ে আসার আশঙ্কা থেকেই যায়। এই বাসিন্দাদের নির্ভর করতে হয় কলোনির বাইরে থাকা শালবনী বাজারের ওপর। তাঁরা বাজার করতে বাইরে এসেছেন ফলে সংক্রমন বাইরে ছড়ানোর আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
শালবনীর বাসিন্দাদের আরও আশঙ্কা ওড়িশা সিমেন্ট লিমিটেড(OCL) বা জিন্দাল (JSW) কারখানা থেকেও কারন ওখানেও বহু কর্মী বাইরে বাজার করতে আসেন। ওই কারখানা গুলির কর্মীদের মধ্যেও সংক্রমন চিহ্নিত হয়েছে। ওসিএলে প্রায় ৮ জনের সংক্রমন ধরা পড়েছে গত কয়েকদিনে। সংক্রমিত হয়েছেন জিন্দালের কর্মীও। এমতাবস্থায় কারখানা গুলিতেও কঠোর করোনা বিধি মানা হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।