নিজস্ব সংবাদদাতা: আট বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর ফের ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখিয়েছিল অনেকেই। সাবিনাদের সমাজে নিকাহ কোনও নতুন ব্যাপার নয়। কিন্তু দু’হাতে সে সব ঠেলে সরিয়ে কঠোর জীবন বেছে নিয়েছেন খড়গপুর শহরের গোলবাজার সংলগ্ন আজাদ বস্তির বাসিন্দা বছর তিরিশের সাবিনা বিবি। সাবিনা জানান স্বামী যখন মারা যান তখন আমার বয়স ২২ আর আমার ছেলের বয়স ৬, মেয়ের বয়স ১বছর। অনেকেই বলেছিল বিয়ে করে বিবি বানিয়ে রাখবে কিন্তু তাহলে আমার ছেলে মেয়ে দুটো ভেসে যেত। ওদেরকে জীবনে দাঁড় করানোর জন্যই আর বিয়ে করিনি কারন আমি কারও বিবি হতেই পারি। ঘর সংসারের কাজ করে জীবন কাটিয়ে দিতে পারি কিন্তু আমার ছেলে মেয়েদের দ্বিতীয় স্বামী তাঁর ছেলে মেয়ে না ও মনে করতে পারে।
ওদের মুখের দিকে তাকিয়েই আর বিয়ে করিনি।স্বামী নেহাৎই দিনমজুর ছিল তাই সে মারা যাওয়ার পর অথৈ জলে পড়েছিল সাবিনা। শুরু করেছিল লোকের বাড়িতে বাড়িতে পরিচারিকার কাজ কিন্তু সেখানেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় ভরন্ত যৌবন। কোথাও মালিকের চোখে লোভের চাহুনি তো কোথাও মালকিনের চোখে সন্দেহ আর অবিশ্বাস। আত্মসম্মান নিয়ে টিকে থাকাই দায়। এরপর এ কাজ সে কাজ ছেড়ে টোটো চালানোই পেশা। না, নিজের টোটো কেনার ক্ষমতা নেই অগত্যা অনেক বলে কয়ে এক টোটো মালিকের কাছ থেকে দিন ভাড়ায় টোটো নেওয়া। যদিও কাজটা সহজ হয়নি মোটেই। প্রায়শই টোটো আর অটোর ঝামেলায় থমকে যায় দিন গুজরান।
দুমুঠো খাওয়ার জোটা তো দুরের কথা মালিকের ভাড়া ওঠেনা। মালিক হুমকি দেয় টোটো কেড়ে নেওয়ার। আবার কখনও ভুল করে অটোর রুটে ঢুকে পড়লে কাঁচা খেউড় সহ পুরুষত্ব ঝরে পড়ে অটোওয়ালাদের। মায় মারতে অবধি ছুটে আসে তারা। এই সব নিত্য ঝামেলার মধ্যেই খড়গপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে গোলবাজার কিংবা ইন্দা হয়ে ভরা জন সমুদ্রের মাঝখান দিয়ে সওয়ারি নিয়ে টোটো ছুটে চলে সাবিনার। ভিড়ের মাঝে পিঠে বইয়ের ব্যাগ নেওয়া ছোট ছোট ছেলে মেয়ে দেখলে সাবিনা দেখতে পায় তার ছেলে মেয়েরাও স্কুলে যাচ্ছে! তার ছেলে আর মেয়ে যে এখন ক্লাশ সেভেন আর থ্রী তে পড়ে। তাদের আরও, আরও পড়ানোর জন্য সাবিনার টোটো দিন রাত ঝড় বৃষ্টি আর শীত গ্রীষ্মে ঘুরে চলে খড়গপুরের অলিতে গলিতে।