নিউজ ডেস্ক: করোনা ভাইরাসের চোখ রাঙানিতে একের পর এক রাজ্যে কড়া হচ্ছে নিয়ম-কানুন। মহারাষ্ট্রে ১৫ দিনের কার্ফু জারি হয়েছিল। এবার দিল্লী, রাজস্থানও হাটল একই পথে; জারি করা হল উইকেন্ড ও নাইট কার্ফু। যোগী রাজ্যেও করোনা সংক্রমণের জেরে রবিবার লকডাউন ঘোষণা করা হল। পাশাপাশি মাস্ক না পড়লে ১০ হাজার টাকা জরিমানা পর্যন্ত হতে পারে বলে নির্দেশিকা জারি করল যোগী সরকার। বাংলাতেও করোনা মোকাবেলায় নেইয়া হচ্ছে সব রকম সচেতনতা ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।
বৃহস্পতিবার উপরাজ্যপালের সঙ্গে আলোচনা করে দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল উইকেন্ড কার্ফুর সিদ্ধান্ত নেন। এদিন বৈঠক শেষে কেজরিওয়াল জানান, দিল্লীতে কার্ফু জারি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‘সপ্তাহের শেষে মানুষ শপিং মল, বাজার, সিনেমা হলে ভিড় জমায়। তাই ওই দিনগুলোতে কার্ফু জারি করা হল। তবে জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। জিম, স্পা এবং অডিটোরিয়াম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিনেমা হলগুলি কেবল ৩০ শতাংশ দর্শক নিয়ে চালাতে হবে। কেবলমাত্র হোম ডেলিভারির অনুমতি দেওয়া হয়েছে, রেস্তোঁরাতে বসে খাওয়া যাবে না।‘
তিনি জানান, ‘সাপ্তাহিক বাজারগুলোতে যাতে ভিড় না হয় তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রত্যেক বাজারের মধ্যে প্রশাসন আরোও কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। মাস্ক এবং সামাজিক দূরত্ববিধি যাতে মেনে চলা হয় সেদিকে নজর রাখা হবে।‘ পাশাপাশি করোনার কারণে হওয়া ভয়াবহ পরিস্থিতির কথাও তুলে ধরেন এদিন কেজরিওয়াল, জানান, বেশ কয়েকটি হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য শয্যা সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। সেইসঙ্গেই তিনি এদিন দিল্লীবাসীর কাছে অনুরোধ করেন, সরকারের জারি করা সমস্ত নিয়ম মেনে চলার।
করোনা আবহে আরও কঠোর হল যোগী আদিত্যনাথের সরকার। এবার থেকে মাস্ক ছাড়া বেরোলেই গুনতে হবে ১০ হাজার টাকার জরিমানা। পাশাপাশি আগামী রবিবার সমগ্র উত্তরপ্রদেশে সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করল রাজ্য সরকার। শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে রাজ্যের শীর্ষ আধিকারিকদের বৈঠকে রবিবার লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাজ্যের ‘টিম-১১’-র সদস্যরা ছাড়াও জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এদিন।
রাজ্য সরকার জানিয়েছে যে, রাজ্যের সমস্ত বাজার, অফিস, জিম, অডিটোরিয়াম ও সিনেমা হল বন্ধ থাকবে। কেবলমাত্র অত্যাবশ্যক পরিষেবাগুলিকে লকডাউনের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। এদিন সারা রাজ্যজুড়ে স্যানিটাইজেশনের কাজ হবে। সেইসঙ্গেই ঘোষণা করা হয়েছে, মাস্ক না পরলে প্রথমবার এক হাজার ও দ্বিতীয়বার এই নিয়ম ভাঙলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।
অন্যদিকে একই পথে হেঁটেছে গেহলেট সরকারও। ১৬ এপ্রিল থেকে ১৯ এপ্রিল সোমবার পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬ টা থেকে পরের দিন ভোর ৫ টা পর্যন্ত নাইট কার্ফু লাগু জারি করা হল রাজস্থানে; আগামী ৩০ এপ্রিল অবধি এভাবেই চলবে। মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট বৃহস্পতিবার ট্যুইট করে জানিয়েছেন, ”রাজ্যের ক্রমবর্ধমান করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে আগামীকাল অর্থাৎ শুক্রবার থেকে সোমবার পর্যন্ত চারদিন নাইট কার্ফু জারি থাকবে।” এই নাইট কার্ফু চলাকালীন কঠোরভাবে করোনা বিধি মেনে চলতে হবে। কোনওভাবে যাতে জনসমাগম না হয় সেজন্য সব ধরনের জনসংযোগ অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। সেইসঙ্গেই যেকোনও ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে বা বিয়েতে ৫০ জনের বেশি লোককে নিমন্ত্রণ করা যাবে না বলেও জানানো হয়েছে। এছাড়াও নির্দেশ জারি করা হয়েছে, বাইরের রাজ্য থেকে রাজস্থানে আগত সকল ব্যক্তির করোনা টেস্ট আবশ্যক। পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ হলে তবেই মিলবে এই রাজ্যে ঢোকার ছাড়পত্র।
এদিকে বঙ্গেও নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা; পুর ও নগর উন্নয়ন দপ্তরের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হছে, গত বছরের তুলনায় এবছর বাড়ানো হবে সেফ হোম এবং কোয়ারেন্টিন কেন্দ্রের সংখ্যা। সূত্রের দাবী গত বছরের তুলনায় এই বছর সেই কেন্দ্রের সংখ্যা ২০ শতাংশ বাড়ানো হতে পারে। ইতিমধ্যেই সেই মর্মে শুরু হয়ে গেছে প্রস্তুতি। বৃহস্পতিবারের স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিসংখ্যানের দিক থেকে দেখলে বর্তমানে মোট সেফ হোম ২০০। সেফ হোমে মোট বেডের সংখ্যা ১১,৫০৭ এবং তাতে রোগীর সংখ্যা ৪৬। অন্যদিকে বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ৯৮৩৯ জন।