অশ্লেষা চৌধুরী: শীতলকুচি কাণ্ডে এবার বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে কমিশনের কোপে বিজেপি নেতারা; রাহুলের প্রচারে ৪৮ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞা জারির পাশাপাশি বঙ্গ বিজেপি সভাপতিকেও নোটিশ ধরালো কমিশন। বুধবার সকাল ১০ টার মধ্যে জবাব না দিলে এক তরফা ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে।
শীতলকুচি কাণ্ডে প্রাক্তন বিজেপি রাজ্য সভাপতি তথা হাবড়ার বিজেপি প্রার্থীর বক্তব্যের জেরে তাঁর সব রকম প্রচার নিষিদ্ধ করে কমিশন। মঙ্গলবার দুপুর ১২ টা থেকে ১৫ এপ্রিল বেলা ১২ টা পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা রাহুল সিনহা কোনও প্রচার করতে পারবেন না। দিতে পারবেন না কোনও বিবৃতিও। শীতলকুচি কাণ্ডে তিনি বলেছিলেন, “ওখানে চার জনের বদলে আট জনকে গুলি করে মারা উচিৎ ছিল। বিজেপিকে ভোট দিচ্ছে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের ১৮ বছরের ছেলেরা বুথের লাইনে গুলি চালাচ্ছে। মমতা এদের নেত্রী হয়ে বসে আছেন। কেন্দ্রীয় বাহিনী যোগ্য জবাব দিয়েছে।”তিনি আরও বলেন, ‘ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছেলেকে, শুধু বিজেপি করার অপরাধে যারা গুলি করে মারে, তাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যারা কেন্দ্রীয় বাহিনীর দিকে বোম ছুঁড়ে মানুষকে ভোট দিতে আটকাচ্ছে, তাঁদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিন শেষ হয়ে গেছে। এখন মস্তানরাজ কায়েম করে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করার চেষ্টা করছেন।’
কমিশনের মতে তাঁর এই বক্তব্য, আদর্শ নির্বাচন বিধি ভঙ্গ করে। সেইসঙ্গে ১৯৫১-র জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৩ এ ধারা লঙ্ঘন করে। সেই কারণেই রাহুলের বিরুদ্ধে কড়া এবং নজিরবিহীন পদক্ষেপ নিল নির্বাচন কমিশন।
এদিকে একই ঘটনায় বঙ্গ বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষকেও নোটিশ করে কমিশন। যদিও বঙ্গ বিজেপি সভাপতি জানিয়েছেন, কমিশনের নোটিশ এখনও হাতে পাননি। নোটিশ দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন তিনি।
শীতলকুচি কাণ্ড প্রসঙ্গে রবিবার বরানগরের প্রচার সভা থেকে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন বঙ্গ বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘শীতলকুচিতে দুষ্টু ছেলেরা গুলি খেয়েছে। এই দুষ্টু ছেলেরা থাকবে না বাংলায়। কেউ আইন হাতে নিলে এটা সারা বাংলায় হবে। ১৭ তারিখও কেন্দ্রীয় বাহিনী বুথে থাকবে। কেউ বাড়াবাড়ি করলে, জায়গায় জায়গায় শীতলকুচি হবে।’ সেন্ট্রাল ফোর্স হাতে বন্দুক নিয়ে ঘুরতে আসেনি। কেউ লাল চোখ দেখাতে পারবে না বলেও এদিন হুঁশিয়ারি দেন দিলীপ। শুধু বরানগর থেকেই নয়, এর আগেও শীতলকুচির ঘটনায় মমতাকে তীব্র আক্রমণ শানান দিলীপ ঘোষ। দিলীপ বলেন, “উনি পাপ করছেন, অন্যায় করছেন। মানুষকে উস্কে দিচ্ছেন। তার প্রচার বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ। মমতার বিরুদ্ধে মামলা করা উচিৎ। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই এই নোটিশ কমিশনের; বুধবার সকাল ১০ তাঁর মধ্যে দিলীপ জবাব না দিলে কমিশন এক তরফা ব্যবস্থা নেবে বলেও জানিয়েছে স্পষ্ট।
প্রসঙ্গত, সোমবারই তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোট প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে নির্বাচন কমিশন। এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকছে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অর্থাৎ সোমবার রাত ৮ টা থেকে মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত। অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদর্শ নির্বাচন আচরণবিধি, সেইসঙ্গে ১৯৫১-র জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ১২৩ (৩) ও ৩ এ ধারা এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৬, ১৮৯ ও ৫০৫ ধারা লঙ্ঘন করেছেন। তিনি উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন, যা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির পক্ষে ক্ষতিকারক এবং তা নির্বাচনী প্রক্রিয়া ব্যাহত করার সামিল। এরপর থেকেই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে শুধু মমতা কেন, দিলীপ রাহুল সায়ন্তনের প্রতিও কড়া ব্যবস্থা নিক প্রশাসন। মঙ্গলবার সকালেও বাম নেতা অশোক ভট্টাচার্য নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তবে দুই বিজেপি নেতার প্রতি কড়া পদক্ষেপ নিয়ে নির্বাচন কমিশন সেই প্রশ্নের উত্তর দিল বলেই মত অনেকের।