নিজস্ব সংবাদদাতা: সাময়িক বিরতি দিয়ে ফেব্রুয়ারি থেকে করোনার যে দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে তার গ্রাফ ক্রমশঃ উর্ধমুখী এবং বড় কথা যে এই পর্বে চেনাজানা ছন্দের বাইরে গিয়েই করোনা তার প্রভাব বিস্তার করছে। গ্রাম বা শহর, বৃদ্ধ বা তরুণ অথবা কিশোর কোনও নিয়মই মানছেনা এই সংক্রমন। গত ৩দিনে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ৯৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। যার মধ্যে ২৮ জনই রয়েছেন খড়গপুর শহরে আর এই ২৮ জনের ১৫ জনই আবার আইআইটি হাসপাতালের সংগৃহীত নমুনা থেকে সংক্রমিত।
আইআইটি খড়গপুর (IIT Kharagpur) ক্যাম্পাসে ৮ই এপ্রিল আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫জন। যার মধ্যে ক্যাম্পাসের মধ্যে অবস্থান করেন এমন ৬৪ ও ৩৪ বছরের দুই পুরুষ এবং ৫০ বছরের এক মহিলা ছিলেন। বাকি দুজনের বাড়ি তালবাগিচায়। ২৯ এবং ৩০ বছর বয়সী আক্রান্তদের ওই দুজনই মহিলা। মাঝের একটা দিন বাদ দিয়ে ১০ই এপ্রিল একই সঙ্গে ১০ জন আক্রান্তের খোঁজ মেলায় এখানে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাফে দ্বিগুন হয়েছে। এই ১০ জনের মধ্যে ৮ জনই ক্যাম্পাসের বাসিন্দা যার মধ্যে ২৯ এবং ৩৩ বছরের ২ মহিলা এবং ২৮, ২৯, ৩৬, ৬০, ৩৪, ৬৪ বছর বয়সী ৬ জন পুরুষ রয়েছেন। ক্যাম্পাসের বাইরে হিজলী কো-অপারেটিভ এলাকার বাসিন্দা এক ৮০ বছরের , ডিভিসি এলাকার বাসিন্দা ৯০ বছরের বাসিন্দা রয়েছেন।
আইআইটি খড়গপুরের বাইরে খড়গপুরে তিনদিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ জন। যেমন ঝুলি সোনামুখীতে
৫৬ ও ২৫ বছরের দুই পুরুষ, টাটা মেটালিকে ৩০ ও ৫৮ বছরের দুই পুরুষ। বড় আয়মাতে ৩২ বছরের পুরুষ ব্যক্তি। মালঞ্চা নিমপুরা ৪৭, নিউটাউন ৩৯ এবং ইন্দা এলাকায় ৪৯ ও ৬৯ বছর বয়সী পুরুষ ব্যক্তি আক্রান্ত । এছাড়াও ওল্ড সেটেলমেন্ট এলাকায় ৪৭ ও পীরবাবা এলাকায় ৫০ পুরুষ ব্যক্তি আক্রান্ত। খড়গপুর শহরে আরও এক ৩২ বছরের যুবক আক্রান্ত।
খড়গপুর শহরের পরই আক্রান্তের সংখ্যায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মেদিনীপুর শহর। এখানে গত তিনদিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২১ জন। যেমন অরবিন্দ নগর ৬১ বছরের পুরুষ ও ৪৭ ও ৫০ বছরের মহিলা আক্রান্ত হয়েছেন। বার্জটাউন ৩২ ০ ৬৮ বছরের পুরুষ এবং ৬১ বছরের মহিলা আক্রান্ত হয়েছেন। পালবাড়ি ৫০ বছরের পুরুষ, ৪৯ বছরের মহিলার সংক্রমন হয়েছে। শরৎপল্লীতে ৩৮ বছরের পুরুষ এবং স্টেডিয়াম রোড ৭০ বছরের বৃদ্ধ ও তোড়াপাড়ায় ৬২ বছরের বৃদ্ধের দেহে জীবাণু পাওয়া গেছে। সংক্রমনের খবর এসেছে মেদিনীপুর শহরের ধর্মা ২০ (পুরুষ), মাইতি হ্যাচারি কমপ্লেক্সে ২৪ (পুরুষ), সঙ্গতবাজার ২৫ (পুরুষ), মিঞাবাজার ৭( মহিলা), বড়বাজার ২২ (পুরুষ), ডিরোজিও নগর ২৭ (পুরুষ ) , কর্নেলগোলা ৩২ (মহিলা), বিধাননগর ৪৮ (মহিলা), বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় ৫১ বছরের পুরুষ ২২ বছরের তরুণী আক্রান্ত হয়েছেন।
দুই শহরের বাইরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর ২ ব্লক এলাকায় সংক্রমণ শঙ্কা জাগানোর মতই। খেপুত গ্রামপঞ্চায়েতের একটি গ্রামে ৮ জন বিভিন্ন বয়স যেমন ২৩,১৮,৯, ১৮,১২,১৮,১৮,১৬ বছরের পুরুষ ও ৩৭ বছরের মহিলা মিলিয়ে ৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। জগন্নাথপুরে আক্রান্ত একই পরিবারের প্রৌঢ় ও তরুণ।
দাসপুর ১ ব্লকের করুনাচক ৩৭ বছরের পুরুষ, হরিরামপুর ৪০ বছরের পুরুষ , নুনিয়াগোদা বছরের
৭০ মহিলা, রানিচক ৫১ বছরের পুরুষ, সাগরপুর ৩৮ বছরের পুরুষ আক্রান্ত। ঘাটাল ব্লকের
কুশপাতা ১৭ বছরের মহিলা, বাড় আনন্দি ২৭ বছরের পুরুষ, কিসমৎ দীর্ঘগ্রাম ৩০ বছরের পুরুষ ও মান্দারপুর ৩৫ বছরের পুরুষ আক্রান্ত হয়েছেন।
সংক্রমনের খবর এসেছে গোয়ালতোড়ের ঝলঝলি
ফতেসিংপুর থেকেও। একই পরিবারের ২৫, ৩৪ ও ৩৫ বছরের ৩ মহিলা আক্রান্ত হয়েছেন। গড়বেতার রসকুন্ডু ৫২ ও লেদাগামারে ২১ বছরের মহিলা আক্রান্ত।
ডেবরা থানাতেও সংক্রমন বাড়ছে। গত তিনদিনে বরাগড় ৩৬ বছরের পুরুষ, ও ভোগপুর, বালিচকে ৫৬ বছরের মহিলার দেহে সংক্রমন মিলেছে। হাইপাটে আক্রান্ত ৬৬,২৭ ও ২৫ বছর বয়সী ৩ পুরুষ। বুড়িগেড়িয়া অর্জুনিতেও ৫৩ বছরের পুরুষ ও বালিচক ৬৭ বছরের পুরুষ আক্রান্ত। এছাড়া কেশিয়াড়িতে ২৬ বছরের মহিলা ও দাঁতনের খড়খাইতে ৪১ বছরের এক পুরুষ আক্রান্ত হয়েছেন। করোনার আক্রমন শালবনীর চকতারিণী ও সিআরপিএফ ক্যাম্পে আক্রান্ত হয়েছেন ২জন।
করোনার এই দ্বিতীয় পর্যায়ে একটা বিষয় লক্ষ্য করার মত যে অপেক্ষাকৃত কমবয়সীদের মধ্যে প্রকোপ বেশি। হয়ত করোনার প্রথম ঢেউয়ের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বেশি বয়সের মানুষজন সাবধান হয়েছেন, বেশি বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেননা। অন্যদিকে জীবিকার তাড়নায় কমবয়সী তরুণ তরুণীদের কর্মক্ষেত্রে যেতে হচ্ছে বলেই তাঁরা বেশি সংক্রমিত হয়ে পড়ছেন। জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের পরামর্শ মাস্ক পরা এবং বারেবারে হাত ধোয়ার মধ্যেই করোনাকে প্রতিহত করা সম্ভব।