নিজস্ব সংবাদদাতা: উন্নাও কান্ডে নাবালিকাকে খুন ও ধর্ষণে অভিযুক্ত প্রাক্তন বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারের স্ত্রীকে প্রার্থী করল বিজেপি। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে ফতেপুর চৌরাসি ত্রিতয়া থেকে তাঁকে প্রার্থী করেছে গেরুয়া শিবির। উল্লেখ্য ২০১৭ সালের ৪ জুন এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছিল কুলদীপ সেঙ্গারের বিরুদ্ধে। সেই সময় অভিযোগ জানালেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে দাবি করেছিল সেই নাবালিকা। কিন্তু বিচারের আশা প্রায় ছেড়ে দিয়ে ৮ এপ্রিল উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বাড়ির সামনে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেন তিনি। তারপরই ধর্ষণের অভিযোগ সামনে আসে। কিন্তু, পরদিনই ‘রহস্যজনক পরিস্থিতিতে’ লক-আপে মৃত্যু তাঁর বাবার। যদিও তাঁকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে।
তবে এখানেই শেষ হয়নি। পরিবার-সহ তাঁকে সেঙ্গার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে জুলাইয়ে সুপ্রিম কোর্টে চিঠি লেখেন যুবতী। সেই মাসেই রায়বরেলিতে আইনজীবী ও দুই কাকিমার সঙ্গে যাওয়ার সময় তাঁদের গাড়িতে ধাক্কা মারে একটি বেপরোয়া লরি। সেটির নম্বর প্লেট কালি লেপে দেওয়া ছিল। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর এক কাকিমার। যিনি এই মামলায় অন্যতম সাক্ষীও ছিলেন। গুরুতর জখম হন যুবতী নিজেও। তাঁকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে দিল্লির এইমসে নিয়ে আসা হয়। সেপ্টেম্বরে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়। তাঁর পরিবার অভিযোগ করে, যুবতীকে খুন করতেই পরিকল্পিতভাবে ওই ধাক্কা মারা হয়েছিল।
পরবর্তীকালে,আদালত উন্নাওয়ের নির্যাতিতার বাবার রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় সংযোগ থাকায় ২০২০ সালে কুলদীপ সিংহ সেঙ্গার দোষী সাব্যস্ত করে। সেই সময় তাকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। ১০ বছরের হাজতবাস হয়েছে তার। পাশাপাশি ১০ বছরের সাজা শুনিয়েছে আদালত। এ ছাড়াও, নাবালিকা ওই কিশোরীকে ধর্ষণের দায়ে তাকে যাবজ্জীবনের সাজা দিয়েছে আদালত।
গোটা ঘটনায় তোলপাড় হয় সারা দেশ। ঘটনার তদন্তভার নেয় সিবিআই। তারপর দীর্ঘ মামলা চলার পর ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন কুলদীপ সিংহ সেঙ্গার। এরফলে ওই বিজেপি বিধায়কের পদ চলে যায়। দেশ জুড়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে বিজেপি তাকে দল থেকে বিতাড়িত করে। যদিও সেঙ্গারের সঙ্গে বিজেপির গোপন বোঝাপড়া রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। এ বার বিজেপি তার স্ত্রী সঙ্গীতা সেঙ্গারকে ভোটের টিকিট দিল। উন্নাও জেলা পঞ্চায়েতের বিদায়ী চেয়ারপার্সন সঙ্গীতা।
উত্তরপ্রদেশে আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে ৪ দফায় পঞ্চায়েত নির্বাচন যার ফলাফল প্রকাশ পাবে সব বিধানসভা নির্বাচনের মতই আগামী ২ মে। ২০১৬ থেকে উন্নাওয়ের জেলা পঞ্চায়েত চেয়ারপার্সন হিসেবে কাজ করছেন সঙ্গীতা। আগে কোনও দলের প্রতীকে পঞ্চায়েত নির্বাচন হত না উত্তরপ্রদেশে। এ বারই তার সূচনা। সেই মতো বৃহস্পতিবার ৫১ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিজেপি। তাতেই জায়গা পেয়েছেন সঙ্গীতা।
প্রসঙ্গত,স্বামী বিতাড়িত হলেও, বিজেপি-র সঙ্গে সঙ্গীতার ঘনিষ্ঠতা আগের মতোই বজায় রয়েছে। যে ববাঙ্গারমউ বিধানসভা কেন্দ্রে ২০১৭ সালে জয়ী হয় কুলদীপ, উপনির্বাচনের সময় সেখানে বিজেপি প্রার্থী শ্রীকান্ত কাটিয়ারের হয়ে প্রচার করতে দেখা যায় সঙ্গীতাকে।এ বার তাঁর হয়ে প্রচারে নামার কথা গেরুয়া শিবিরের প্রথম সারির নেতাদের।