নিউজ ডেস্ক: মুখ্যমন্ত্রীকে কড়া চিঠি নির্বাচন কমিশনের। মঙ্গলবার রাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন উপ নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচন কমিশনকে অকারণে দোষারোপ করছেন, যা অতি দুর্ভাগ্যজনক বলে জানান নির্বাচন কমিশন।
বাঁকুড়ার জনসভা থেকেও মঙ্গলবার মমতা অভিযোগ করে বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন কে চালাচ্ছেন? অমিত শাহ চালাচ্ছেন না তো? আমরা চাই নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। কিন্তু অমিত শাহ নির্বাচন কমিশনের কাজে হস্তক্ষেপ করুক, এটা আমরা কিছুতেই মানব না।’’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজ্যে বসে চক্রান্ত করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবকে কেন নোটিস? নির্বাচন কমিশনের কাজে কেন হস্তক্ষেপ? কেন সরানো হল তাঁর চিফ সিকিওরিটি অফিসারকে? এইসকল প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলেন কমিশনের উদ্দেশ্যে। এরপরই তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, অমিত শাহ হারবে বলে বাংলায় বসে চক্রান্ত করছে। ভাঙা পা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে ধর্না দেব।
এরপরেই মঙ্গলবার কমিশনের তরফে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন উপ নির্বাচন কমিশনার। তাতে লেখা হয়েছে, ‘কমিশনের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে আজগুবি গল্প বলছেন তিনি।’ কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষকের রিপোর্ট উল্লেখ করা জানানো হয়েছে, সেই সময় ঘটনাস্থলে পুলিশের উপস্থিতি কম ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়ের গতি কমে গেলেও পুলিশকর্মীদের দেখা মেলেনি। পর্যবেক্ষদের রিপোর্টের ভিত্তিতে রবিবার পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে বদলি করে কমিশন। সাসপেন্ড করা হয় মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা আধিকারিক বিবেক সহায়কে। কেন তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে চার পাতার চিঠিতে তার ছ দফা কারণ উল্লেখ করেছে কমিশন।
কমিশন চিঠিতে বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরেছে, যেমন- মুখ্যমন্ত্রী জেড প্লাস সিকিউরিটি পান। তাঁর যে প্রোগ্রাম ছিল, তা ঘন ঘন বদলানো হয়েছে। মূল প্ল্যানে কেন স্থির থাকার জন্য বিবেক সহায় পরামর্শ দেননি। বিবেক সহায় নিজে বুলেট প্রুফ গাড়িতে বসেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী বসেছিলেন সাধারণ গাড়িতে। কেন তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে বুলেট প্রুফ গাড়িতে বসার জন্য বোঝানোর চেষ্টা করেননি? মুখ্যমন্ত্রী সিট বেল্ট খুলে চলন্ত গাড়ির পাদানিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কেন তাঁকে আটকাননি বিবেক সহায়? মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি যখন ভিড় রাস্তার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল, তখন কেন সিকিউরিটি কভার দেওয়া হয়নি। দরজা খুলে মুখ্যমন্ত্রী যখন দাঁড়িয়ে ছিলেন, তখন গাড়ির চালক কেন গাড়ি থামাননি। কেন মোটর ভেহিকেল আইন ভেঙেছেন? তাঁর কি যথাযথ ট্রেনিং ছিল না?
প্রসঙ্গত, নন্দীগ্রামে গিয়ে গত বুধবার চোট পেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, কয়েকজন তাঁকে ভিড়ের মাঝে ঠেলে দিয়েছিল, তিনি নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানোর কথাও বলেছিলেন তিনি সেইসময়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। সরিয়ে দেওয়া হয় পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা শাসক, পুলিশ সুপারকে, সাসপেন্ড করা হয় মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা আধিকারিক বিবেক সহায়কে।