নিজস্ব সংবাদদাতা: সোমবার ফাঁকা মাঠ দেখে ঝাড়গ্রামের সভায় যাননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কিন্তু বাঁকুড়ার রাইপুরে গিয়েও সেই একই অভিজ্ঞতা। সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার সঙ্গে ভিড় হীন কর্মসূচি করতে হয়েছে। কয়েকদিন আগে ঝাড়গ্রামে একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল নাড্ডার। সেখানেও ফাঁকা মাঠ দেখে মঞ্চে ওঠেননি তিনি। মঙ্গলবার সেই ফাঁকা মাঠের শনি কাটলনা বিজেপির। এদিনও ফাঁকা মাঠেই সভা সারতে হল প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে। সব মিলিয়ে হঠাৎই যেন থমকে গেছে বিজেপি পালের হওয়া।
এদিন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গোয়ালতোড় হাইস্কুল ময়দানে শালবনি বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপির মনোনীত প্রার্থী রাজীব কুন্ডুর সমর্থনে নির্বাচনী জনসভায় আসেন রাজনাথ সিং । সভায় আরও এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী রায় চৌধুরী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিজেপি নেতা শুভজিৎ রায়, ধীমান কোলে, প্রদীপ লোধা এবং প্রার্থী রাজীব কুণ্ডু ইত্যাদি স্থানীয় নেতারা। না, তেমন উল্লেখযোগ্য ভিড় নজরে পড়েনি বরং নজরে পড়েছে প্রতিরক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী হওয়ার কারণেই বোধহয় নজিরবিহীন কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং তারই সাথে পাল্লা দিয়ে থাকা পুলিশ কর্মীদের। পুলিশের তরফে স্বীকারও করে নেওয়া হয়েছে নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রচন্ড রাজনৈতিক উত্তেজনা থাকায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য একটু বেশি পরিমানেই পুলিশ ঘটে মোতায়েন করা হয়েছিল।
ভিড় হীন মাঠেই রাজনাথ সিং পশ্চিমবাংলা তৃনমূলের দাদাগিরি থেকে বোমা-বন্দুকের শিল্পে পরিণত হয়েছে বলে কটাক্ষ করে গেছেন। তিনি বলে গেছেন, বিজেপি বাংলায় ক্ষমতায় এলে বোম শিল্প-কারখানা বাংলা থেকে বন্ধ হবে ।আমফানের দুর্নীতির তদন্ত হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
এদিকে ফাঁকা মাঠের অস্বস্তি আড়াল করতে পারেনি বিজেপি। বিজেপির পক্ষ থেকে বলার চেষ্টা করা হয় যে জঙ্গল ঘেরা বিভিন্ন গ্রামে তৃনমূলের পক্ষ থেকে চাপ তৈরি করা হয়েছে বিজেপির সভায় না আসার জন্য। যদিও এই অভিযোগ মানেনি তৃনমূল।
তবে বিজেপি তৃনমূলের এই টানাপোড়েনের বাইরেও আরও দুটি তত্ত্ব উঠে এসেছে তা’হল শালবনীর বিজেপি প্রার্থীকে ঘিরে দলের মধ্যে তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। প্রার্থী ঘোষনার পরেই বিদ্রোহ করে নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে রাস্তায় নেমে পড়েছিলেন প্রদীপ লোধা আর ধীমান কোলেরা। পরে ধরাধরি করে তাঁদের নিরস্ত্র করা হয়েছে বটে কিন্তু কর্মী আর সমর্থকদের মধ্যে সেই বিভাজনের শেকড় এতটাই প্রসারিত হয়েছে যে সভায় লোক আনার উদ্যোগই নেয়নি কেউ। সবাই অন্যজন লোক আনবে বলে দুধের পুকুর তৈরিতে জল ঢেলে গেছে। দ্বিতীয়ত দলের এর পাশাপাশি আরও একটি বড় কারণ হল সুশান্ত ঘোষ এই কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী হওয়ায় বামেদের সেই অংশ যারা বিজেপির আশ্রয়ে চলে গিয়েছিল তারা ফের ঘরে ফিরছে। তাঁরা মনে করছেন অন্তর্দ্বন্দ্ব বিপর্যস্ত এই দল তৃনমূল বিরোধী লড়াই লড়তে অক্ষম। ফলে একটি ব্যাপক অংশ ক্ষুব্ধ হয়ে দ্রুত সরে যাচ্ছে দলের পাশ থেকে।
এদিকে এই একই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নারায়নগড় বিজেপিকে। এখানে বিজেপি প্রার্থী রমা গিরির সমর্থনে প্রচারে এসেছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তাঁর সভার নির্ধারিত সময় ছিল বেলা ২টায়। কিন্তু কোনোও ভুল বোঝাবুঝির কারনে প্রচার করা হয় তিনটায় সভা। বেলদার স্টেডিয়াম ময়দানে যোগীর হেলিকপ্টার ঠিক ২টাতেই নামে। তখন মঞ্চে শুধু কর্মকর্তা এবং পুলিশ কর্মী আধিকারিকরা। এরপর ঘটনা জানতে পেরে তিনি মঞ্চের পেছনে ঘন্টাখানেক বিশ্রামের পর যখন সভামঞ্চে বক্তব্য রাখার জন্য ওঠেন তখনও মাঠের সেই পরিমান দর্শক নেই যতটা বিজেপি আশা করেছিল।
এদিনের প্রচন্ড খরতাপ মানুষের খোলা মাঠে সমাবেশে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রেও কিছুটা প্রতিবন্ধক হয়েছে বলে বিজেপি নেতাদের দাবি। নিজের বক্তব্যে যোগী আদিত্যনাথ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল নেতাদের তীব্র কটাক্ষ করে বলেছেন বাংলার এই পিছিয়ে পড়া উন্নয়ন থেকে উঠে আসতে হলে ডবল ইঞ্জিনের সরকার বা কেন্দ্রে রাজ্যে একই সরকার প্রয়োজন। তিনি মেদিনীপুর বাসীকে নিমন্ত্রণ জানিয়ে গেছেন তাঁর রাজ্যে নির্মিয়মান রাম মন্দির দেখতে যাওয়ার জন্য।