নিজস্ব সংবাদদাতা: নন্দীগ্রামের নতুন সঙ্কটের মুখে পড়ল তৃনমূল কংগ্রেস। নন্দীগ্রামের প্রার্থী তথা তৃনমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জীর নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুপিয়ান সহ ৪৬জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পাশাপাশি তাঁদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সোমবার হলদিয়ার অতিরিক্ত মুখ্য দায়রা বিচারপতি বা এসিজেএম শেখ সুপিয়ান ছাড়াও আবু তাহের, স্বদেশ দাস অধিকারী, খোকন শিট,শ্রীকান্ত পাইক সহ একগুচ্ছ তৃনমূল নেতার বিরুদ্ধে এই পরোয়ানা কার্যকরী করার নির্দেশ দিয়েছে যাকে ঘিরে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে নন্দীগ্রামে। খবর পাওয়ার পর পুরো নন্দীগ্রামেই তৃনমূলের নির্বাচনী কার্যালয় গুলিতে কার্যত চূড়ান্ত নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। এই অবস্থায় পরবর্তী রণকৌশল নির্ধারণ করতে জোর সক্রিয়তা শুরু হয়েছে পার্টির রাজ্য স্তরে।
উল্লেখ্য ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলন চলার সময় ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছিল।যেহেতু তৃনমূল নেতারাই ওই কমিটির মাথায় ছিলেন তাই মামলা গুলিতে তাঁরাই আসামি হন। এরকমই একটি মামলা(কেস নম্বর ২৩৭, ২০০৭,নন্দীগ্রাম থানা) যা কিনা মারধর করা ইত্যাদি সংক্রান্ত। ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর এই মামলাটি নিয়ে নাড়াচাড়া করা হয়নি। শাসকদলের নেতারা অভিযুক্ত বলে পুলিশও বিষয়টি নিয়ে এগোয়নি। কার্যত ধামাচাপা পড়ে যায়। কিন্তু এবছর বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সমস্যা হতে পারে মনে করে মামলাটি হঠাৎই প্রত্যাহার করে নিয়েছিল রাজ্য সরকার। আর তার বিরুদ্ধেই সম্প্রতি হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন আইনজীবী ও বিজেপির নন্দকুমারেে প্রার্থী নীলাঞ্জন অধিকারী।
গত ৫ই মার্চ কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতি আর রাধাকৃষ্ণণ ও অরিজিৎ ব্যানার্জির ডিভিশন বেঞ্চ আগের রায় খারিজ করে নতুন করে মামলা চালু করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি রাজ্য সরকারকে ভৎর্সনা করে জানায় যে এই ধরনের অপরাধ মূলক মামলা প্রত্যাহার করে নিলে আইন ও বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে যায়। মামলা ফের নিম্ন আদালত বা হলদিয়া আদালতে চালু হয়। সোমবার হলদিয়া আদালতে সেই মামলার শুনানি হয়। আদালত অভিযুক্তদের জামিন খারিজ করে তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে এবং পুলিশকে দ্রুত এই গ্রেপ্তারি কার্যকর করার নির্দেশ দেয়। এরফলে নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন পুলিশ এই নির্দেশ কার্যকরি করতে বাধ্য থাকবে। কারন কমিশনের নির্দেশ রয়েছে যে শান্তিপূর্ণ ও অবাধ নির্বাচনের স্বার্থে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের নির্বাচনের আগে গ্রেপ্তার করতে হবে। এই ধরনের মামলায় সচরাচর নির্বাচন শেষ হওয়ার আগে জামিন পাওয়া মুশকিল।
এদিকে শেখ সুপিয়ান মমতা ব্যানার্জীর নির্বাচনী এজেন্ট হওয়ায় প্রার্থী ব্যতিরেকে একমাত্র তিনিই সভা সমিতি মিছিল ইত্যাদির অনুমতি করাতে পারেন। পোলিং এজেন্ট, কাউন্টিং এজেন্ট তিনিই নিয়োগ করতে পারেন। পাশাপাশি প্রার্থী ছাড়া একমাত্র তিনিই পারেন ভোটের দিন সমস্ত বুথকেন্দ্রে যেতে। কোনও অনিয়ম বেনিয়ম হলে কমিশনকে অভিযোগ জানাতে।তাঁর অনুপস্থিতিতে নির্বাচনের এই টেকনিক্যাল দিকটি দারুন ধাক্কা খাবে। পাশাপাশি প্রথম সারির নেতারা গ্রেপ্তার কিংবা আত্মগোপন করলে ভোট প্রচারে দারুন বিপাকে পড়তে পারে দল। কারন সেনাপতিহীন যুদ্ধ হয়ে যাবে বিষয়টি। বিশেষ করে ভোটের দিন ইভিএম মেশিন অবধি নিজেদের সমর্থকদের আনার ক্ষেত্রে একটা সমস্যা দেখা দেবে। এই খবর আসার পর থেকে নন্দীগ্রামে তৃনমূলের নির্বাচনী কার্যালয়গুলিতে চূড়ান্ত স্তব্ধতা বিরাজ করতে দেখা গেছে।
উল্লেখ্য কিছুদিন আগেই এই একই পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হয়েছে তৃণমূলকে। তৃনমূল নেতা কুরবান আলি খুনে অভিযুক্ত পাঁশকুড়ার বিজেপি নেতা আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে মামলা প্রত্যাহার করে তাঁকে নিজেদের স্বপক্ষে ভোটের প্রচারে নামাতে চেয়েছিল তৃনমূল। অন্ততঃ আনিসুর তেমনটাই দাবি করেছিল। সেই মত জেল থেকে ছাড়াও পান তিনি কিন্তু কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ফের হাইকোর্ট সেই রায় বদল করে অনিসুরকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিলে ফের তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আনিসুর বর্তমানে জেলেই রয়েছে।