নিজস্ব সংবাদদাতা: ফ্লপ নয়, সুপার ফ্লপ অমিত শাহের নির্ধারিত সভা। মাঠ ভরলনা অর্ধেক পরিমানও। সভার পেছনের দর্শকাসন তো দুরের কথা ভরলনা সামনে রাখা চেয়ারও আর সেই খবর পেয়েই সভা এড়িয়ে গেছেন অমিত শাহ এমনটাই খবর মিলেছে বিজেপির অন্দরমহল সূত্রে। মাঠ না ভরার কারন হিসাবে তৃনমূলের জোর জবরদস্তিকেই দায়ি করে মুখ রক্ষা করতে চাইছে বিজেপি যদিও ঘটনার পেছনে অন্য কারনকেই দায়ি করেছেন বিজেপির একটি অংশ।
উল্লেখ্য রবিবার খড়গপুরে রোড-শো করার পর সোমবার ঝাড়গ্রামের জামদা সার্কাস ময়দানে শাহের সভা হবে বলে পূর্বনির্ধারিত ছিল। যে কারনে রবিবার রাতে খড়গপুর শহরেই থেকে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ওদিকে শাহর সভাকে ঝাড়গ্রামে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছিল বিজেপি। সভার পাশাপাশি জঙ্গলমহলের জন্য বিজেপির বিশেষ কর্মসূচি সিধু-কানহু-বিরসা মুন্ডা যাত্রারও উদ্বোধন করার কথা ছিল তাঁর। সব মিলিয়ে নেতা কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল চূড়ান্ত। যদিও যতই সময় গড়িয়েছে ততই সেই উৎসাহ চুপসে গেছে পাংচার হওয়া টিউবের মতই।
এরপরই সভাস্থল থেকেই বিভিন্ন গ্রামে ফোন করে মানুষজন যোগাড় করার চেষ্টা চালানো হয়। চেষ্টা করা হয় অন্তত চেয়ারগুলো যাতে ভরানো যায়। কিন্তু শেষ অবধি সেই চেষ্টা কাজে লাগেনি। খাঁ খাঁ করতে থাকে পঞ্চাশ ভাগ মাঠই। উপস্থিত মানুষজন ক্রমশই অধৈর্য হয়ে পড়তে থাকেন কারন সভার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেছিল অনেকক্ষণ। শেষ অবধি ঘোষণা করা শাহের কপ্টারে যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে আসতে পারবেননা তিনি। ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখবেন তিনি।
কেন লোক হলনা এর উত্তরে শাসকদল তৃনমূলকে দায়ি করেছে বিজেপি। বিজেপি নেতারা বলছেন, সভাস্থল থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অতটা রাস্তা হেঁটে আসতে সমস্যায় পড়ছেন অনেকে তাই আসতে পারেননি সভাস্থলে। কেউ কেউ বলেছেন তৃনমূলের হুমকির কারণেই লোক গ্রাম থেকে আসতে পারেনি। যদিও এসব স্বত্ত্বেও এর আগে বিজেপি মাঠ ভরিয়েছে।
ঘটনা হচ্ছে কয়েকদিন আগেও এই ঝাড়গ্রাম শহরেই ফ্লপ হয়েছিল বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার সভা। মানুষ না থাকায় সেবারও মঞ্চে ওঠেননি নাড্ডা। তার আগে গোপীবল্লভপুরে শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজীব ব্যানার্জীর সভাতেও লোক দেখা যায়নি প্রত্যাশামত। বিজেপির এক নেতা জানিয়েছেন, “জঙ্গলমহলে বিজেপির এই ভাটা শুরু হয়েছে শুভেন্দু অধিকারী দলে আসার পর থেকেই। মাওবাদী আমল এবং তৃনমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বামপন্থীদের একটা বড় অংশ বিজেপিতে ভিড়েছিল। তাঁরা প্রত্যাশা করেছিল বিজেপি ক্ষমতায় আসলে মাওবাদীদের হাতে খুন হওয়া পরিবার, তৃনমূলের হাতে অত্যাচিরত, গ্রামছাড়া হতে হওয়া পরিবার, পুলিশের মিথ্যা মামলার বিচার পাবেন তাঁরা। তাই তাঁরা আমাদের দলে এসেছিলেন পিল পিল করে। এঁরা এতটাই আমাদের ওপর আস্থা রেখেছিলেন যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বহু জায়গাতে এরা বামপন্থীদের প্রার্থী হতে দেননি। এঁদের বিশ্বাস মাওবাদীদের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী এবং তৃনমূলের গাঁটছড়া ছিল। সেই শুভেন্দু আমাদের দলে আসায় ওই বিপুল সংখ্যক মানুষ আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এটা শুধু জঙ্গলমহলে নয়, নন্দীগ্রাম, হলদিয়া, খেজুরিতেও এই একই ঘটনা ঘটছে।”
এদিন ভার্চুয়াল বক্তব্যে অমিত শাহ নিজেও না আসার জন্য সেই হেলিকপ্টার বিভ্রাটকেই কারন দেখিয়েছেন। বলেছেন, নির্বাচন শেষে ফের ঝাড়গ্রামে আসবেন তিনি। দিয়েছেন একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতিও। যার মধ্যে ঝাড়গ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় বানানো, আদিবাসীদের উন্নয়েন ১০০ কোটির তহবিল গড়া হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। তৃণমূলের প্রতি অভিযোগের আঙুল তুলে বলেছেন এই আমলে বাংলা উন্নয়নের বদলে পাতালে পৌঁছে গিয়েছে।