অশ্লেষা চৌধুরী: “যতক্ষণ পর্যন্ত কন্ঠ চলবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমার কন্ঠকে রুদ্ধ করার দুঃসাহস যেন কেউ না দেখায়,” পুরুলিয়ার জনসভা থেকে হুইল চেয়ারে বসেই হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোমবার পুরুলিয়ার বলরামপুরে ও ঝালদায় জোড়া সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিনের সভা থেকে বিরোধীদের তীব্র আক্রমণ শানান মমতা। বিরোধীদের আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘আমি ভাঙি, তবু মচকাই না। আমার কঠ রুদ্ধ করার দুঃসাহস যেন কেউ না দেখায়। “বিরোধীদের নিশানা করেই এদিন সভায় উপস্থিত জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তাঁর আশঙ্কা, তিনি যদি না থাকেন তাহলে ভোট লুট করে নিয়ে যাবে বিরোধীরা। তিনি বলেন, “আমি অসুস্থ, চিকিৎসকেরা আমাকে বারন করেছিলেন যেন আমি বাইরে না বেরোই, কিন্তু আমি মার খাওয়া লোক, আগে অনেকবার মার খেয়েছি, আমার কিছু, হবে না। আমি প্রয়োজন হলে হুইল চেয়ারে বসেই প্রচার চালাব।“
কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের উদ্দেশ্যে তোপ দেগে বলেন, বাংলার ওপর আক্রমণ করা তাদের নিত্যদিনের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে, প্রতিদিন বাংলার নামে কুৎসা করে বেরোচ্ছে। বাংলার মানুষের ভোটে লোকসভা নির্বাচনে জিতেছে, আর বাংলার নামেই কুৎসা, আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। কৃষকদের আন্দোলনের প্রসঙ্গও তুলেও কেন্দ্র সরকারকে আক্রমণ করেন মমতা।
তিনি আরও বলেন, বিজেপি গ্যাসের দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে। টাকা দিয়ে ভোট কিনতে চাইছে বিজেপি। বিজেপি এত টাকা কোথা থেকে পেল- প্রশ্ন করেন তিনি। অভিযোগ করে বলেন, নোটবন্দি করে টাকা কামিয়েছে বিজেপি। ব্যাঙ্ক-কয়লা সব বিক্রি করে দিয়েছে, মিথ্যা বলে পুরুলিয়া লোকসভায় জিতেছে বিজেপি। কংগ্রেস ও সিপিএম বিজেপির দালাল। অভিমান করে যাঁরা ঘরে বসে আছেন, তাদের বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি বিজেপিকে ভোট না দেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি। সেইসঙ্গেই যদি চলার পথে কোনও ভুল করে থাকেন তিনি, তাঁর জন্য ক্ষমাও চেয়ে নেন এদিন মমতা।
এদিন পুরুলিয়ার জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “একদিন তো পুরুলিয়ার দিন কেউ তাকিয়েও দেখেনি, না ছিল একটু জল, না ছিল একটু রাস্তা, না ছিল একটু হসপিটাল, না ছিল পড়াশোনা, না ছিল ভালোবাসা। আজ পুরুলিয়ায় রাস্তার পর রাস্তা হয়েছে। মেয়েরা কন্যাশ্রী পাচ্ছে, রূপশ্রী পাচ্ছে, দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা ট্যাব পাচ্ছে, এক কোটি ছেলেমেয়েরা সবুজ সাথী সাইকেল পেয়েছে, যারা বাকি আছে, তারাও পেয়ে যাবে।“
মুখ্যমন্ত্রীর আরও সংযোজন, “আমি রাস্তার একজন ফাইটার, আমি স্ট্রিট ফাইটার, সারা জীবন মানুষের জন্য আন্দোলন করে এসেছি, এখনও করছি। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছি বলে আমার কোনও একটা বিশেষ চেয়ার নেই, আমি জনগণের চেয়ারে বসেই কাজ করি।“ সেইসঙ্গেই এদিন সভা মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি উপস্থিত সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন, কারণ পায়ে প্লাস্টার থাকার জন্য তিনি দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিতে পারবেন না বলে। সেইসাথেই নন্দীগ্রামে বুধবার তাঁর সাথে ঠিক কী হয়েছিল সেই কোথাও তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী।