নিউজ ডেস্ক: শুক্রবার হুইল চেয়ারে করে এসএসকেএম থেকে বেরিয়ে এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় ৪৮ ঘণ্টা সেই হাসপাতালেই ভরতি ছিলেন তিনি। ইতিমধ্যে বাড়ীও পৌঁছে গিয়েছেন। বাড়ীতে হুইলচেয়ারে তাঁকে গাড়ি থেকে নামানো হয়েছে।
গত বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়ার কাছে নিজের অস্থায়ী ডেরায় ফেরার সময় চোট পান। বাঁ-পায়ে এতটাই যন্ত্রণায় অনুভূত হচ্ছিল যে চিকিৎসকদের পরামর্শে তড়িঘড়ি কলকাতায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। সেইমতো সেদিন রাত সাড়ে আটটা নাগাদ এসএসকেএমে ভরতি করা হয়েছিল।
শুক্রবার এসএসকেএমের মেডিকেল বুলেটিনে জানানো হয়েছে, ছয় সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড মমতার শারীরিক অবস্থা খতিয়ে দেখেছে। তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। যে চোট আছে, তা কিছুটা ভালো হয়েছে মনে করা হচ্ছে। ফোলাও কমেছে। কম আছে গোড়ালির ব্যথাও। তাঁর প্লাস্টার কেটে নয়া প্লাস্টার করা হয়েছে। তবে এখনই মুখ্যমন্ত্রীকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন না চিকিৎসকরা। আরও ৪৮ ঘণ্টা তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মমতা বাড়ী যাওয়ার জন্য একাধিকবার অনুরোধ জানান। তারই ভিত্তিতে আলোচনা করে মুখ্যমন্ত্রীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টার পর হুইলচেয়ারে করে উডবার্ন ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে আসেন মমতা। সঙ্গে ছিলেন ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিমরা। এদিন হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যাকে দেখতে পৌঁছান সমাজসেবী মেধা পাটকর। মমতাকে ধরে গাড়ির সামনের আসনে বসানো হয়। পিছনের আসনে বসেন অভিষেক। তারপর মমতার কনভয় কালীঘাটের দিকে রওনা দেয়।
SSKM হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকে। তাঁর হাঁটা চলাও সম্পূর্ণ বন্ধ। হাপসাতাল সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীকে ব্যথা কমার ওষুধ দেওয়া হয়েছে। পায়ের পাতা এবং গোড়ালি ফুলে রয়েছে। পায়ের প্লাস্টার খুলে পরীক্ষা করা হয়েছে দীর্ঘক্ষণ। তাঁকে বিশেষ ধরনের চপ্পল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রীর চিকিৎসায় তৈরি ছয় সদস্যের চিকিৎসক বোর্ডে রয়েছেন কার্ডিওলজির বিভাগীয় প্রধান ডাঃ শঙ্কর মণ্ডল, অর্থো বিভাগীয় প্রধান ডাঃ মুকুল ভট্টাচার্য, সার্জারি অধ্যাপক ডাঃ ডিকে সরকার, গ্যাস্ট্রোলজি বিভাগীয় প্রধান গোপালকৃষ্ণ ঢালি, নিউরো সার্জারি বিভাগীয় প্রধান শুভাশিস ঘোষ এবং অধ্যাপক ডাঃ বিমানকান্তি রায়।
তৃণমূল সাংসদ ডঃ শান্তনু সেন জানিয়েছিলেন, পরীক্ষার পর দেখা গিয়েছে তাঁর পায়ে পায়ের পাতায় চিড় ধরেছে। লিগামেন্ট, টিস্যুতেও চোট লেগেছে তাঁর। জানা গিয়েছে, তাঁর বাঁ পায়ের গোড়ালি ফুলে রয়েছে। চোট লাগা অংশে তীব্র ব্যথা রয়েছে বলেও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তাঁদের কথায়, ‘এই ধরনের আঘাতে সাধারণত দেড়-দু’মাস বিশ্রামে থাকার প্রয়োজন পড়ে।’ SSKM-হাসপাতালের অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বাঁ পায়ের গোড়ালি ও পায়ের পাতায় সিভিয়র ইনজুরি রয়েছে। ডানদিকের কাঁধে ও কব্জিতে চোট রয়েছে। ঘটনার পর থেকে তিনি ট্রমার মধ্যে রয়েছেন। ঘটনার পর থেকে বুকে ব্যাথা ও শ্বাসকষ্ট অনুভব করছেন। চিকিৎসক দলের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।’
উল্লেখ্য, বুধবার নন্দীগ্রামে গিয়ে আঘাত পান মুখ্যমন্ত্রী। চক্রান্ত করে তাকে ধাক্কা মারা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এরপরই তাঁকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয় এসএসকেএম-এ।