নিজস্ব সংবাদদাতা: “আজকে মাইকটা সত্যি খারাপ ছিল। এই মাইকে ভাষণ দেওয়া সম্ভব নয়। একদিনেই আমার গলা বসিয়ে দিয়েছেন। যে করেছেন ঠিক করেননি। নো দিজ ইজ নট ফেয়ার!” ২৯ মিনিটের বক্তৃতা শেষ করে নন্দীগ্রামের বটতলা সংলগ্ন সভামঞ্চে দাঁড়িয়েই কথা গুলো বললেন মমতা ব্যানার্জী। চণ্ডীপুর থেকে নন্দীগ্রাম যাওয়ার পথে নন্দীগ্রামে ঢোকার মুখেই একটি দু-কামরার বাড়ি ভাড়া করা হয়েছে। তার থেকে আরও একটু আগে হেলিপ্যাড। এই হেলিপ্যাডে নেমেই তিনি নন্দীগ্রামে প্রচারে আসবেন। ওই বাড়িতেই তিনি থাকবেন আপাতত ভোটের সময়। পরে তিনমাসে একবার আসবেন এবং বছর খানেক পরে একটা কুঁড়ে ঘর বানিয়ে নেবেন তিনি। এমনটাই ভাবনা আছে তাঁর। অবশ্যই যদি তিনি ভোটে যেতেন। না জিতলে তাঁর আসার প্রয়োজন কী?
যে বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন সেই বাড়িতেই আজ, মঙ্গলবার রাত্রিবাস করবেন তিনি, নন্দীগ্রামে প্রথম রাত্রিবাস তাঁর। এখান থেকেই বুধবার ফের হেলিকপ্টারে চেপে হলদিয়া যাবেন মনোনয়নপত্র জমা দিতে। তার আগে এই কর্মীসভায় দাঁড়িয়ে ‘জনতা’র কাছে অনুমতি চেয়ে নিলেন নন্দীগ্রামের জন্য মনোনয়ন দেওয়ার। বললেন, ‘আপনারা যদি বলেন মনোনয়ন দেব, নচেৎ নয়।’ ‘জনতা’ অনুমতি দিলেন। বলা হচ্ছে কর্মীসভা তার মধ্যে জনতা কোত্থেকে এল? আর যদি তাঁরা জনতাই হয় তখন প্রশ্ন উঠবেই, এত কম মানুষ কেন? ১৮ই জানুয়ারি তেখালির জনসভাতে যে ভিড় হয়েছিল সেই ভিড়ও হলনা কেন?
উত্তরটা মঞ্চ থেকেই দিলেন মমতা নিজেই, বললেন, এটা জনসভা নয়, কর্মীসভা। অনেকে ভাবছেন ভিড় নেই কেন? আমরা দুটো বিধানসভা এলাকার ১০হাজার কর্মীকে ডেকেছিলাম। তাঁর নিজের ভাষায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এটা আমাদের কর্মীসভা। কেউ কেউ হয়তো গুলিয়ে ফেলছে পাবলিং মিটিংয়ের সঙ্গে। বুথ ধরে ধরে দশ হাজার বুথ কর্মীকে এখানে ডেকেছি, তাদের সঙ্গে মিলিত হব বলে। ব্লক প্রেসিডেন্ট, অঞ্চল প্রেসিডেন্ট, পঞ্চায়েত সমিতির সকলে এখানে রয়েছেন। নন্দীগ্রামের দুটো ব্লকেই দুটো মিটিং করব।” বেশ, তাহলে জনতা নয় নন্দীগ্রামের হয়ে মনোনয়ন দেওয়ার অনুমতি নিলেন কর্মীদের কাছে। যাঁদের অনুমতি দেওয়া আর না দেওয়ায় কিছু যায় আসেনা। নন্দীগ্রামের লোক সংখ্যা কয়েক লক্ষ। তাঁর তুলনায় ওই ১০হাজার যার মধ্যে খেজুরিও আছে কত শতাংশ?
যাইহোক কথা হচ্ছিল মাইক নিয়ে। সভার শুরুতেই মালুম হচ্ছিল যে, মাইক সমস্যা করছে। গেইন আসছে। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, গ্রামের মাইক, হয়তো একটু খারাপ আছে। পরে আমরা দেখে নেব।” কিন্তু পরে তাঁর বোধহয় মনে হয়েছে মাইকটা ইচ্ছাকৃতভাবেই খারাপ দেওয়া হয়েছে। তাই রেগে গেলেন এবং বলেই ফেললেন, ‘কাজটা ঠিক করলেননা।’ এপর্যন্ত নয় ঠিক আছে কিন্তু ‘দিস ইজ নট ফেয়ার!’ এই কথাতেই মালুম হচ্ছে কেউ কি তবে আন ফেয়ার খেলতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বলে তিনি মনে করছেন? তানিয়া ভরদ্বাজ, শিলাদিত্য কিংবা অম্বিকেশের মতই ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছেননা তো?
তিনি বলেছেন, “বিজেপি এখানে বিভেদ করতে চাইছে। ৭০-৩০ খেলতে চাইছে। হিন্দু কার্ড খেলতে চাইছে।” আর তারপরই তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনিও হিন্দু বাড়ির মেয়ে। চন্ডীপাঠ করেই বাড়ি থেকে বের হন। এরপর অনেক গুলো মন্ত্র আউড়ে দিলেন। সেই যে কয়েকটা তিনি আকছার বলে থাকেন। তারপর বললেন সোনাচুড়া যাবেন সিংহবাহিনী আর বাসুলি মায়ের মন্দিরে। মানে শুরুতেই ৭০ হয়ে গেলেন তিনি।
বিজেপি হিন্দু কার্ড খেলবে তাই আগে ভাগেই হিন্দু হয়ে যাওয়া ভালো। আর সেই জন্য আগামীকাল বুধবার হলদিয়ায় মনোনয়ন পেশ করার পর রাতেও নন্দীগ্রামে থাকবেন। তারপর বৃহস্পতিবার শিব চতুর্দশীর পুজো সেরে কলকাতায় ফিরবেন।”
বোঝাই যাচ্ছে এই ক’দিন ৭০ভাগেই বেশি সময় দেবেন। হয়ত ৩০ভাগেও দেবেন কারন সমস্ত ধর্মগুরুর কাছেই এদিনের সভা থেকে সমর্থন চেয়েছেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছিন্ন করতে এখন ধর্মগুরুরাই বড় ভরসা। যদিও তিনি বলেছেন, ধর্ম নিয়ে খেলাটা ঠিক নয়।