অশ্লেষা চৌধুরী: শাসক শিবিরে ভাঙন ধরাতে ধরাতে ক্লান্ত পদ্ম শিবির কী তবে এবারে থাবা বসাচ্ছে হাত শিবিরে! তাও খোদ প্রয়াত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের ঘরে। ঘটনা ঘিরে বঙ্গের রাজনৈতিক পারদ এখন তুঙ্গে।
সূত্রে জানা গিয়েছে, চৌরঙ্গী কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শিখা মিত্র হবেন- অমিত শাহর বার্তা নিয়ে সোমেন মিত্রর বাড়ীতে পৌঁছেছেন শুভেন্দু অধিকারী। ব্রিগেড সমাবেশ শেষে অমিত শাহর বার্তা নিয়ে সোমেন মিত্রর স্ত্রী শিখা মিত্রর কাছে সোজা হাজির হন শুভেন্দু অধিকারী। আর সেই থেকে একটাই প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে, তবে কী সোমেন মিত্রের স্ত্রী ও পুত্র এবার পদ্ম শিবিরে যোগ দিচ্ছেন? সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি সোমেন পুত্র সোহন। তিনি জানিয়েছেন, জোড়াসাঁকো এবং চৌরঙ্গী এই দুই আসনে সোমেন মিত্রর হাতে তৈরি করা কংগ্রেস প্রার্থী দেওয়ার জন্যে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে অনুরোধ করা হয়েছে। কি সিদ্ধান্ত নেয় দল তা দেখেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত।
পদ্ম শিবিরে তাদের যোগদানের জল্পনায় কিছুটা ঘি ঢেলেছেন সোমেন ভার্যা শিখাও। রবিবার সরাসরি নাম না করেই আকার ইঙ্গিতে বর্তমান প্রদেশ কংগ্রেস অধীর রঞ্জন চৌধুরী সম্পর্কে বিস্ফোরক অভিযোগ আনেন শিখা। অভিযোগ ওঠে লবি বাজির। তিনি জানান, ‘আমাদের কাছে একটা খবর ছিল, আমাদের বিধান ভবনে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তার পর আমি প্রদেশ ভবনে যাই। কংগ্রেসের বর্তমান নেতৃত্ব আমার ও আমার পুত্রের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছে। আসলে কেউ কেউ ভুলে গেছেন প্রদেশ কংগ্রেসের কোনও কার্য্যালয় ছিল না। সোমেন মিত্র অর্থাৎ ছোড়দা নিজে বিধান ভবন তৈরী করেন। আর আজ সেই সোমেন মিত্রর তৈরি করা প্রদেশ কংগ্রেস ভবনে বসেই তাঁর স্ত্রী-পুত্রের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হচ্ছে।‘ আক্ষেপ করে তিনি আরও বলেন, ‘কোনও কিছুই হয়নি। হঠাৎ করে এরকম একটা পরিস্থিতি তৈরি করে। আমি অবাক হয়ে যাই, যাঁরা সোমেন মিত্রর জন্য আজকে এখানে এসেছেন, যাঁদের লালন পালন করেছেন, তাঁরা দেখছি পদ পেয়ে খুব বাজে ব্যবহার করছেন। এটা কেন, কী জন্যে, আমি জানি না।’ কেউ কেউ পদ পেয়ে এসব করছেন। আমার কাছে খবর ছিল আমাদের নাকি বিধান ভবনে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
এরপরেই শিখা দেবী বলেন, ‘আমি নির্দিষ্ট করে কারও নাম বলতে চাই না। যাঁরা এখন কংগ্রেসের হর্তা-কর্তা-বিধাতা, তাঁরাই এ কাজ করছেন। এই ঘটনা খুবই দুঃখের আমার কাছে।’ শুভেন্দুর তাঁর বাড়ীতে আসা এবং সোহন সহ তাদের পদ্ম শিবিরে যোগদানের কথা প্রসঙ্গে কংগ্রেসের এহেন ব্যবহারে ব্যথিত শিখা দেবী স্পষ্ট উত্তর না দিলেও কথার প্যাঁচে বুঝিয়ে দেন, যদিও শুভেন্দুর সাথে তাদের পারিবারিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের এবং তিনি তাঁর ছোট ভাইয়ের মতন, তবুও এই ব্যাপারে এখনও কোনও কথা দেননি শিখা দেবী। কিন্তু আগামী দুদিনের মধ্যে সোনিয়ার সাথে কথা বলে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবেন।
প্রসঙ্গত, তৃণমূলের টিকিটে দু’বার বিধায়ক হন শিখা মিত্র। তখন ছোড়দা তথা সোমেন মিত্রও ছিলেন ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূলের সাংসদ। পরে ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে ঘাসফুল ছেড়ে সোমেন মিত্র ফিরে আসেন কংগ্রেসে। স্বামীর পথ অনুরণ করে শিখা দেবীও ফেরেন কংগ্রেসে। এবার অমিতের দুত হয়ে আসা শুভেন্দু শিখা ও সোহনকে পদ্ম শিবিরে টানতে কতটা সক্ষম হন!