অশ্লেষা চৌধুরী: বিদ্রোহটা অনেক আগেই ঘোষণা করেছিলেন, এরপর দল ত্যাগ। এবার নির্বাচনের মুখে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি হুঁশিয়ারি বিজেপি নেতা রাজীবের। দিলেন নির্বাচন কমিশনের কাছে নালিশ ঠোকার হুমুকি। নবান্নে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবের বৈঠকের বিরুদ্ধেই কমিশনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেন তিনি।
সোমবার বালি হল্টের সভা থেকে রাজ্যের সদ্য প্রাক্তন বনমন্ত্রী তথে বিজেপি নেতা বলেন, “নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার পর কীভাবে রাজ্যের সচিবালয়ে মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবকে নিয়ে রাজনৈতিক কথা বলেন? এটা কি নির্বাচনী বিধিভঙ্গ নয়? কমিশনকে জানাব।”
এখানেই থেমে না থকে তিনি আরও বলেন, “উনি বহিরাগত বহিরাগত বলে গলা ফাটান কিন্তু নিজে নবান্নতে তেজস্বী যাদবকে পাশে নিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য রাখছেন। স্বপ্ন দেখছেন ক্ষমতায় আসার।” রাজীব অভিযোগ করে বলেন, “বাঙালি-অবাঙালি বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাদেশিকতার বিষ ঢালছেন, যা সাম্প্রদায়িকতার থেকেও মারাত্মক। বিভাজনের রাজনীতি উনি করছেন বাংলার মাটিতে।”
মমতার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে এদিন রাজীব বলেন, “আমাদের যখন ত্রিপুরায় প্রচারে পাঠাতেন, অসমে পাঠাতেন তখন কি আমরা সেখানে বহিরাগত ছিলাম?” এরপরেই তৃণমূলের অভ্যন্তরের পরিস্থিতিও তুলে ধরতে মরিয়া রাজীব বলেন, “ঐ দলটায় কোনও গণতন্ত্র নেই, স্বাধীনতা নেই। শুধু একজনের কথায় হ্যাঁ-তে হ্যাঁ আর না-তে না মেলাতে হয়।”
শুভেন্দু অধিকারী পদ্ম শিবিরে যোগদানের সময় থেকেই রাজীব বেসুরো বাজতে শুরু করেছিলেন। তবে পদ্ম শিবিরে যোগ দিয়ে শুরুর দিকে তাঁর বক্তৃতার অংশ ছিল উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, শিল্পায়ন ইত্যাদি প্রভৃতি। এমনকি যেদিন তিনি পদত্যাগ পত্র দেন, সেদিনও মমতার ছবি হাতেই তাকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, দলনেত্রীর জন্যই তিনি এতটা দূর আসতে পেরেছেন। তিনি কাউকে কোনও ব্যক্তিগত আক্রমণ করবেন না। কিন্তু তাল কাটে আলিপুরদুয়ারের সভা থেকে যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, বনসহায়ক পদে নিয়োগে কারসাজি হয়েছে। সেইদিনই বিকেলে ধনেখালির সভা থেকে দিদির বিরুদ্ধে ঝাঁঝালো আক্রমণ শুরু করেন রাজীব। তারপর যত দিন এগোচ্ছে মমতা এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে সমালোচনা ও আক্রমণের তিরে শান দিচ্ছেন রাজীব।
প্রসঙ্গত, বিহারের নেতা তেজস্বী, বিহার ভোটে লড়ে এনডিএ-কে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। যদিও সোমবার মমতা বলেছেন, তেজস্বীরই জেতার কথা ছিল। গোলমাল করে হারানো হয়েছে। আর তেজস্বী বলেছেন দিদির পাশেই রয়েছেন তিনি। এবারে শাসকশিবির যখন কথায় কথায় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে অমিত শাহ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, অমিত মালব্য, অরবিন্দ মেননকেও বহিরাগত, গুজরাতি মাফিয়া ইত্যাদি বিশেষণে ভূষিত করে আক্রমণ শানাচ্ছে, তখন তেজস্বী প্রসঙ্গে পদ্ম শিবিরই বা চুপ থাকবে কেন!