ওড়িশা ভ্ৰমণ-৬
লিঙ্গরাজ মন্দির (ভুবনেশ্বর)
মীর হাকিমুল আলি
বিকেল গড়িয়ে পড়লো, শীতের বিকেলে সূর্যের আলো বিকেলটাকে হলুদ করে তুলেছে l আমরা তখন ওড়িশার রাজধানী ভুবনেশ্বরের পথে l মন্দিরের শহর ভুবনেশ্বর l চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছোট বড় মন্দির l আর সব গুলিই একই রকম গঠনশৈলী l তাদের মধ্যে লিঙ্গরাজ হলো এখানকার প্রধান মন্দির ও পর্যটন কেন্দ্র l
মন্দিরের অনেক দূরে আমাদের বাস দাঁড়ালো l অনেকটা হেঁটে হেঁটে চললাম মন্দিরের দিকে l দূর থেকে ছবি তুললাম কারণ মন্দিরের ভেতর ক্যামেরা বা মোবাইল ফোন নিষেধ l দূর থেকে মন্দিরের উচ্চতম চূড়া দেখা যাচ্ছিলো l রাস্তার ধারে আরো এক দুটো একই রকম মন্দির দেখতে পেলাম l জুতো, মোবাইল বাইরে রেখে ঢুকলাম মন্দিরের ভেতরে l ভেতরে তো অনেক বড়ো চত্বর l আর ছোট বড় মন্দিরে ভরা l
লিঙ্গরাজ মন্দিরের মিনারটি 180 ফুট উঁচু l মন্দিরটি কলিঙ্গ স্থাপত্যকলা এবং মধ্যযুগীয় ভুবনেশ্বর স্থাপত্য শৈলীতে নিৰ্মিত l এটি সোমবংশী রাজত্বকালে নিৰ্মিত এবং গঙ্গা শাসকদের হাতে বিকাশিত হয় l এটি দেউল শৈলীতে নিৰ্মিত যার চারটি ভাগ আছে l সেগুলো হচ্ছে বিমান, জগমোহন, নাট্যমন্দির এবং ভোগমণ্ডপ l ভাগগুলোর উচ্চতা ক্রমান্বয়ে বেড়েছে l মন্দির চত্ত্বরটি দেয়ালঘেরা l
এই মন্দির দেখার জন্য প্রতিদিন গড়ে 6000 জন আসেন l উৎসবের সময় তা বেড়ে লক্ষাধিক হয় l
লিঙ্গরাজ শব্দের আক্ষরিক অর্থ লিঙ্গের রাজা, হিন্দুমতে শিবের প্রতিরূপ l এখানে শিব ও বিষ্ণুর মিলিতরূপ হরিহরের পূজা করা হয় l
এগারো শতকের শেষ দশক থেকে মন্দিরটি টিকে আছে l ষষ্ঠ শতকে মন্দিরটি নির্মাণের প্রমান পাওয়া যায় কারণ সপ্তম শতকের কিছু সংষ্কৃত পুঁথিতে মন্দিরটির উল্লেখ আছে lমন্দিরটি নির্মাণ করেন সোমবংশী রাজা যযাতি l
মন্দিরটি পূর্বমুখী এবং চুনাপাথরে তৈরী l মান্দিরের প্রধান প্রবেশ পথটি পূর্বে হলেও উত্তর ও দক্ষিণে দুটি ছোট প্রবেশ পথ আছে l
হিন্দু কিংবদন্তি অনুসারে একটি ভূগর্ভস্থ নদী লিঙ্গরাজ মন্দিরের নীচে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিন্দুসাগরে এসে পড়েছে এবং বিশ্বাস করা হয় এর জলের দৈহিক ও আত্মিক অসুস্থতা দূর করার ক্ষমতা রাখে l
লিঙ্গরাজ মন্দিরের প্রধান উৎসব হচ্ছে শিবরাত্রি যা ফাল্গুন মাসে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় এবং এ সময়ে কয়েক হাজার ভক্ত মন্দির পরিদর্শণে আসে l মন্দির থেকে বেরোতে বেরোতে সন্ধ্যা হয়ে গেল l আজ আর ঘোরা নয়, হোটেলে ফিরতে হবে l বাসে উঠে বসলাম l
পরের পর্ব…….. ক্রমশ l