নিজস্ব সংবাদদাতা: এমনিতেই আলোর উৎসবের জন্য খ্যাতি আছে আইআইটি খড়গপুরের। দীপাবলির দিন আইআইটির পড়ুয়াদের সেই উৎসব দেখতে ভিড় ভেঙে পড়ে আইআইটি খড়গপুর ক্যাম্পাসে। ঘন্টা দুয়েক পুরো ক্যাম্পাসের প্রচলিত আলো নিভিয়ে দিয়ে জ্বলে ওঠে সার সার প্রদীপ মালা আর সেই আলোতেই ফুটে ওঠে ইতিহাস পুরান আর সাম্প্রতিক আলোচিত ঘটনাবলি। চন্দননগরের আলোর থেকে এর ব্যতিক্রম এই যে এই কয়েক কিলোমিটার ব্যস জুড়ে পুরো বিষয়টি সাজানো হয় লক্ষ লক্ষ মাটির প্রদীপ দিয়ে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
সেই আলোর উৎসবকেই এবার অন্যমাত্রা দিতে চলেছেন আইআইটি খড়গপুরের অধ্যাপক গবেষক সুমন চক্রবর্তী। সামান্য নুন মিশ্রিত ভেজা কাপড় থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। আমদিনের কাচা কাপড় শুকোতে দিয়েই সামান্য কৌশলে উৎপাদিত অচিরাচরিত শক্তি গ্রাম ভারতের উপার্জন আর বিদ্যুৎ দুয়েরই সাশ্রয় করবে বলে অধ্যাপক চক্রবর্ত্তী মনে করেন। তাকেই এবার খাতায় কলমে প্রয়োগ করতে চলেছেন তিনি এবং এই দিপাবলীতেই।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
এক টুকরো ভেজা কাপড়ই হয়ে উঠতে পারে অপ্রচলিত শক্তির উৎস। সামান্য নুন থেকে তৈরি হতে পারে বিদ্যুৎ। ঘরোয়া সরঞ্জামই মেটাতে পারে বিদ্যুতের ঘাটতি। এমনই দিশা দেখাচ্ছেন আইআইটি খড়গপুরের অধ্যাপক-গবেষকরা। কম খরচে বেশি শক্তি উৎপাদন তো বটেই, এই প্রক্রিয়া বৃহত্তর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারলে প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে আঁধার ঘুচবে চিরতরে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
সৌর বিদ্যুতের থেকেও কম খরচে এবং সহজে এই নুন ও ভেজা কাপড় থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব—এমনটাই জানিয়েছেন এই প্রকল্পের মুখ্য গবেষক আইআইটি খড়গপুরের মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ডঃ সুমন চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “নুন সব বাড়িতেই থাকে। জামাকাপড় শুকোনো দৈনন্দিন গেরস্থালির কাজের একটা বড় অঙ্গ। কাজেই এই দুই উপাদানকে যদি একসঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়, তাহলেই অবিশ্বাস্য ফল মিলবে। কম সময়ে এবং অবশ্যই কম খরচে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা যাবে।”
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
কীভাবে সম্ভব হবে এই প্রক্রিয়া? অধ্যাপক সুমন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, নুন মানেই তাতে থাকবে সোডিয়াম। অন্যদিকে, জামাকাপড়ে থাকে সেলুলোজ জাতীয় টেক্সটাইল। এই দুই মিলেই একটা চ্যানেল তৈরি করে। নুন জলে কাপড় ভিজিয়ে রাখলে দেখা যায়, স্যালাইন জলের আয়ন এই সেলুলোজ দ্বারা বাহিত হয়ে একটা ছোটো চ্যানেল তৈরি করে। কম পরিমাণে হলেও শক্তি উৎপাদিত হয়। এই শক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে অন্তত একটা এলইডি বাল্ব জ্বালানো সম্ভব। এইভাবে যদি অজস্র চ্যানেল তৈরি করা যায়, তাহলে শক্তি উৎপাদনের হারও বাড়বে।
অধ্যাপক বলেছেন, গ্রামেগঞ্জে যেখানে সোলার প্যানেল এখনও পৌঁছয়নি, অপ্রচলিত শক্তি উৎপাদনেরও নানাবিধ সমস্যা রয়েছে সেখানে এই সহজসরল প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। জানিয়েছেন, পরীক্ষার জন্য একটি প্রত্যন্ত এলাকাকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে ৩০০০ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে মাত্র ৫০টি কাপড় এবং নুন জলের চ্যানেল তৈরি করা হয়। এই চ্যানেলগুলোকে পরস্পর জুড়ে দিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেওয়া হয়। দেখা যায় একটা গোটা দিনে ১০ ভোল্ট বিদ্যুৎশক্তি তৈরি হয়েছে। এই শক্তি একটা বাল্ব বা এলইডি টিউব জ্বালানোর জন্য যথেষ্ট।
একবাটি নুন জল এবং একটা কাপড়, কয়েক মিলিওয়াট বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারে যাকে কাজে লাগালে আমাদের দেশের গ্রামগুলো আর অন্ধকারে থাকবে না। এই রাজ্যেরই অনেক জায়গায় এখনও বিদ্যুৎ শক্তি পৌঁছয়নি। এই প্রক্রিয়ার প্রয়োগ ঘটাতে পারলে সেই সমস্যা অচিরেই দূর হবে, বলেছেন অধ্যাপক সুমন চক্রবর্তী।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
বাংলায় এই প্রক্রিয়া সবচেয়ে আগে প্রয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “স্বাভাবিক পরিবেশে সহজ উপাদান দিয়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতেই যদি অন্ধাকর থেকে আলোর পথে আসা যায় তাহলে সেটাই এই গবেষণার সবচেয়ে বড় সাফল্য। আমাদের তরফ থেকে এই বাংলাকে দীপাবলির উপহার। ” এরকমই কিছু চমক এবার দেখার জন্য তৈরি হচ্ছে আইআইটি।