নরেশ জানা: ক্ষুদ্র অথবা মাঝারি চাষি আর ছোট ছোট জোত বা জমি প্রতিযোগিতার বাজারে মার খাচ্ছে বেশি। মজুরির দাম মারাত্মক কিন্তু জোত এত ছোট যে যন্ত্র নামিয়ে চাষ করার উপায় নেই। ফলে ভরসা সেই কৃষি শ্রমিক। অন্যদিকে মাঝারি কৃষক না’ হয় জমিতে যন্ত্র নামালো কিন্তু পেট্রোল, ডিজেলের দাম বাড়ছে হু-হু করে। সব মিলিয়ে বড় জোতের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা দায়। সেই ক্ষুদ্র জোত আর প্রান্তিক চাষির জন্য এবার মুশকিল আসান করল আইআইটি-খড়গপুরের ( IIT-Kharagpur) কৃষি ও খাদ্য প্রযুক্তি (Agriculturer & Food Engineerning) বিভাগের গবেষকরা। ক্ষেতের পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে এমন একটি কীটনাশক ‘স্প্রেয়ার’ যন্ত্র তৈরি করেছেন তাঁরা যা একদিকে যেমন অবলীলায় ছোট জোতের জন্য কার্যকরী তেমনি তা চলবে পুরোপুরি সৌরশক্তিতে। ফলে একদিকে যেমন পেট্রোল, ডিজেলের দাম থেকে রেহাই মিলবে অন্যদিকে ফলে ফুল,সবজির মত স্পর্শকাতর ফসল দূষণ দোষে অভিযুক্ত হবেনা।
আইআইটি-খড়গপুর ( IIT-Kharagpur) অধিকর্তা (Director) যিনি নিজেও কৃষিপ্রযুক্তি এবং শক্তি প্রযুক্তির দুনিয়ায় একজন নেতৃত্বপ্রদান কারি ব্যক্তিত্ব জানিয়েছেন, “ আমরা ইতিমধ্যেই ক্ষুদ্রসেচ, আচ্ছাদিত চাষ (shed net cultivation) এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরনে এমন কিছু পদ্ধতি ও প্রকরণ উদ্ভাবন করেছি যা বাংলার ২৩টি জেলার বিভিন্ন গ্রামে এবং পূর্বভারতের অন্য অনেক রাজ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০হাজারেরও বেশি কৃষক আমাদের প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। আমাদের লক্ষ্য আত্মনির্ভর ভারতের পথেই কৃষকদেরও নিয়ে যাওয়া। আমার বিশ্বাস এই উদ্ভাবনও সেই আত্মনির্ভরতাকেই আরও সুদৃঢ় করবে।”
গবেষকদের বক্তব্য বড় জোতে ট্রাক্টরে কিংবা হেলিকপ্টারে করে কীটনাশক ছড়ানোর সুবিধা রয়েছে কিন্তু ছোট জোত পুরোপুরি কায়িক শ্রম নির্ভর। হাতে করেই স্প্রে করতে হয়। এতে সমস্যা হল সব সময় সমান শক্তি প্রয়োগ করা সম্ভব হয়না ফলে কৃষি জমিতে কোথাও কম আবার কোথাও বেশি কীটনাশক পড়ে যায়। এতে অনেকসময় কীটনাশক স্প্রে করা হয় কিন্তু সঠিক পরিমান কীটনাশক যেখানে পড়লনা সেখানে কীটনাশক ছড়িয়ে যাওয়ার পরও পোকামাকড় দাপট দেখিয়ে যায়। আইআইটির গবেষকদের এই নতুন যন্ত্র সেই অসুবিধা দূর করবে।
আইআইটি- খড়গপুরের কৃষি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক হিফজুর রহমান যিনি তাঁর কয়েকজন সহযোগী গবেষকদের নিয়ে এই সাফল্য অর্জন করেছেন জানান, ‘ অত্যন্ত সহজ ব্যবহার যোগ্য এই কীটনাশক স্প্রেয়ারটি ব্যবহারকারীর পরিশ্রম কমিয়ে দেবে এবং স্বাচ্ছন্দের সঙ্গে এটি ব্যবহার করা যাবে। সৌরশক্তি চালিত এই গাড়িটি সর্বোচ্চ ২কিলোমিটার প্রতিঘন্টায় চলবে একবারের স্প্রে তে দেড়মিটার জায়গা জুড়ে কীটনাশক ছড়াতে সক্ষম হবে। এরফলে ৮১ শতাংশ পরিশ্রম, সময় এবং রাসায়নিক সাশ্রয় হবে।’
অধ্যাপক হিফজুর রহমান আরও বলেন,”ভারতে মোট কৃষকের ৮২ শতাংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষক। যাঁদের জন্য এই যন্ত্রটি সর্বাধিক উপাদেয়। ইতিমধ্যেই এই আবিষ্কার সরকারি পেটেন্টও পেয়ে গেছে।”
একটি তিনচাকা বিশিষ্ট ট্রলির মধ্যে সংস্থাপিত ট্যাঙ্কে রাখা থাকবে কীটনাশক। ডিসি বিদ্যুৎ চালিত পাম্পের সাহায্যে সেই কীটনাশক তুলে তা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করবে প্রোপেলিং ইউনিটটি। নীচে থাকা দুটি ব্যাটারি ডিসি বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে পুরো ইউনিটকে আর ট্রলির মাথায় বসানো সোলার প্যানেলটি শক্তি যোগান দেবে ব্যাটারি দুটিকে।