নিজস্ব সংবাদদাতা:মেদিনীপুর শহরের লছি পোদ্দার কালী পুজোর ভাসান দেখতে আজও শহরের মানুষ ভিড় জমান রাস্তার দু’পাশে। পুরানো রীতি মেনে আজও প্রতিমাকে গরুর গাড়িতে তুলে সাজিয়ে গাড়ির সামনে বাড়ির পুরুষেরা চামর এবং পাখা নেড়ে বিসর্জন দিতে নিয়ে যান কংসাবতী নদী গান্ধীঘাটে। প্রতিমা গড়া থেকে বিসর্জন সমস্ত কিছু পালন করা হয় পুরানো রীতি মেনে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
আজও পুজোর আগে ঘোট ডুবাতে যাওয়া হয় সামনে পিছনে মোটা মোটা মশাল জ্বেলে। ঝড়-বৃষ্টি যাই হোক, প্রতিমা বিসর্জনে নিয়ে যাওয়া হবে গরুর গাড়িতেই। কালী পুজোর পরের দিন সকাল এগারোটা থেকে বিকেল পর্যন্ত মন্দির চত্ত্বরে চলে কবিগানের লাড়াই। দূর দূরান্ত থেকে লছি পোদ্দার কালীবাড়িতে বয়স্ক মহিলা পুরুষরা আসেন কবিগান শুনতে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
পুজোর পরেরদিন বিকেলে সমস্ত নিয়ম কানুন মেনে মন্দির থেকে বের করে দেওয়া প্রতিমা। পুজোর সময় বাড়ির পুরুষরা লাল ধূতি, লাল ওড়না, বিবাহিত মহিলারা লালপাড় শাড়ি, এবং অবিবাহিত মেয়েরা সবুজ পাড় শাড়ি পরবেন এটাই পরিবারের রীতি। প্রায় সাড়ে চার’শ আগে স্বপ্নাদেশে চালু হওয়া রীতি যা আজও অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছেন বর্তমান প্রজন্ম।
মেদিনীপুর শহরের হবিবপুরে শুরু হওয়া দে’ পরিবারের পুজোয় বর্তমানে লছি পোদ্দার কালীপুজো নামে পরিচিত। বর্তমানে পরিবারের সকলেই থাকেন মেদিনীপুরের বাইরে। কর্মসূত্রে কলকাতা সহ দেশের এবং দেশের বাইরে বিদেশে থাকেন পরিবারের সদস্যরা। কালীপুজোর আগে প্রায় সকলেই হাজির হয়ে যান মেদিনীপুরের বাড়িতে। পরিবার সূত্রে জানাগেছে, মেদিনীপুরের হবিবপুর এলাকায় এই দে’ পরিবারের অনেক জমি এবং বড় বড় ধানের গোলাছিল।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
প্রায় সাড়ে চার’শ বছর আগে পরিবারের সদস্য লছমী নারায়ন দে স্বপ্নাদেশে এই পুজোশুরু করেছিলেন। আগেকার দিনে যারা বড় বড় ধানের গোলার মালিক, ধানের আড়তদার ছিলেন তাঁদের পোদ্দার বলাহত। লছমী নারায়ন দে থেকেই এই কালীবাড়িই এখন লছি পোদ্দার কালীবাড়ি নামে পরিচিত। পুজোর দিন ঝাজার হাজার মানুষ আসেন এই পুজো দেখতে। সারারাত নিয়ম মেনে চলে পুজো অর্চনা। পরিবারে ছয় সেবায়েত বর্তমান। তাঁরা হলেন, অরবিন্দ দে, সনত কুমার দে, দিলীপ দে, অভিজিত দে, সৌরভ দে এবং জিৎনারায়ন দে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
পরিবারের সদস্যরা জানান, ‘পুরানো রীতি মেনে এখনো আমাদের প্রতিমা তৈরি শুরু হয় বিজয়া দশমীর দিন। কালীপুজোর দিন দুপুরে চক্ষুদান হয়। রাতে ঘট ডোবাতে যাওয়া হয় মশাল জ্বেলে। এখনও আটটি মশাল জ্বালা হয়। সামনে পিছিনে দুটি মোটা মশাল থাকে। তিনি বলেন, আগে এত বৈদ্যুতিক আলো ছিলনা। মশাল প্রদীপ জ্বেলেই পুজো হত। তাই আজ মন্দিরে বিদ্যুতের আলো থাকলেও পুজোর সময়, সব আলো বন্ধ করে তেল দেওয়ায় প্রদীপের ঝাড়, মোমবাতির ঝাড় জ্বেলেই চলে পুজোর মূল পর্ব।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
দে’ পরিবারের এক সদস্য বলেন, মায়ের গহনা পরানো, মায়ের চুল লাগানো ইত্যাদি করে বাড়ির পুরুষরা। পুজোর সমস্য মহিলা ও পুরুষদের নির্দিষ্ট পোশাক পরেই হাজির হতে হয়। তৎকালীন সময়ে গুরুত্ব দেওয়া লোকগানকে আজও গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাই মন্দিরের দালানে পুজোর পরেরদিন সকাল ১১টা থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে কবিগানের আসর। বিসর্জনে গরুর গাড়ি, গাড়ি টানার জন্য ভাড়া করা গাড়ওয়ান সবই মানা হয় পুরানো প্রথা থেকেই।‘
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
বিকেলে মন্দির থেকে প্রতিমা বের করা থেকে, সিন্দুরখেলা, গরুর গাড়িতে তোলা, পাখা ও চামর নাড়া নিয়ম মেনে সব করেন পরিবারের সদস্যরা। ভাসানে যোগ দিতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান রাস্তার দু’পাশে। স্থানীয় মানুষজন বলেন, অনেক মানত করেন বাজি পোড়ানোর জন্য। বিসর্জনে নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তার দু’পাশে মানষজন বাজি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রতিমা বিসর্জন দেখার জন্য রাস্তার এতমানুষের ভিড় হয় যে, হবিবপুর থেকে পঞ্চুরচক পরযন্ত এক কিলোমিটার রাস্তা যেতে প্রায় তিন ঘন্টা সময় লাগে। প্রতিমা নিয়ে নদী ঘাটে পৌঁছাতে অনেক রাত হয়ে গেলেও রীতি পালানে কোন খাটতি থাকেনা।