অশ্লেষা চৌধুরী: রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের রাজ্য সরকার বিরোধী ক্ষোভকে উসকে দিয়ে সপ্তম বেতন কমিশন প্রসঙ্গ তুললেন মোদী। বছর চারেক আগে থেকেই সপ্তম পে কমিশনের আওতায় কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা বেতন পেলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মীরা এখনও ষষ্ঠ বেতন কমিশন আওতায় পড়ে রয়েছেন। আর এটা তাঁদের জন্য একটি বিরাট ক্ষতর মতই দগদগ করছে। আর সেই ক্ষততেই যেন নুনের ছেটা দিলেন প্রধানমন্ত্রী
রবিবার হলদিয়ার সভা থেকে একাধিক ইস্যুতে মমতার সরকারের সমালোচনায় সরব হন প্রধানমন্ত্রী। সেই ধারা বজায় রেখেই সপ্তম বেতন কমিশনের প্রসঙ্গও টেনে আনেন। মোদী বলেন, ‘সপ্তম বেতন কমিশনও দেশের বিভিন্ন রাজ্যে লাগু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এখনও লাগু হয়নি। এমনকী আমায় তো বলা হয়েছে যে এখানকার সরকার তো নিজেদের কর্মচারীদেরও সময় মতো বেতন দিতে পারছে না।’
এমনিতেই মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) এবং বেতন কমিশনের সুপারিশ নিয়ে রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের মধ্যে ক্রমশ ক্ষোভ বাড়ছে। দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে ২০১৬ সালের জুনেই সপ্তম বেতন কমিশনে ছাড়পত্র দিয়েছিল মোদী সরকার। সেই পথে হেঁটে মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, গোয়া, মধ্যপ্রদেশের সরকারি কর্মচারীরাও সপ্তম বেতন কমিশল কার্যকর করেছে। কিন্তু বঙ্গে তখনও ষষ্ঠ বেতন কমিশন কার্যকর হয়নি। দীর্ঘ টালবাহানার পর গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ষষ্ঠ বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন পেতে শুরু করেন বঙ্গের সরকারি কর্মচারীরা। সেই সময় কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘভাতার ফারাকও ক্রমশ চওড়া হয়েছে। রাজ্যের কোষাগারে শূন্য বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার দাবী করলেও তাতে চিঁড়ে তো ভেজেইনি বরং ক্ষোভের আঁচ পেয়ে গত বছর মমতা ঘোষণা করেন, চলতি বছরের শুরু থেকেই তিন শতাংশ হারে ডিএ পাবেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা। করোনাভাইরাস কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা প্রদান স্থগিত রাখলেও ভোটের আগে মমতার সেই ঘোষণায় অবশ্য ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। সেই পরিস্থিতিতে বিধানসভা ভোটের আগে মোদী মোক্ষম ‘ক্ষত’ খুঁচিয়ে ঘা করতে চেয়েছেন বলে মত রাজনৈতিক মহলের।
পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময় রাজ্যের কর্মচারীদের সময় মতো বেতন না দেওয়ার যে অভিযোগ তুলেছেন মোদী, তা নিয়ে শাসকদলের পক্ষ থেকে এখনও কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে আগে একাধিকবার মমতা দাবী করেছেন, হাজার টানাটানি সত্ত্বেও করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার কারও বেতনে কোপ বসায়নি। মাসের ১লা তারিখেই বেতন পেয়ে গিয়েছেন রাজ্য সরকারি কর্মচারী।
রবিবার হলদিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর সভা ছিল রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রথম সভা। এই সভায় কৃষকদের যেমন ক্ষমতায় আসলে প্রধানমন্ত্রী কিষান নিধির বকেয়া মেটানোর কথা বলেছেন, বলেছেন রাজ্যের নীতির জন্যই কৃষকরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। পাশাপাশি এরাজ্যে একগুচ্ছ শিল্প প্রতিষ্ঠার নাম করে বেকার যুবকদের মন পেতে চেয়েছেন। এবার সরকারি কর্মীদের পাশে পেতে এটাও ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন যে বিজেপি ক্ষমতায় আসলেই সপ্তম বেতন কমিশন কার্যকরী করা হবে।