অশ্লেষা চৌধুরী: দ্বাদশ শ্রেণিতে উঠলেই পাওয়া যাবে ট্যাব, তরুণদের আকর্ষণ করতে বাজেটে নির্বাচনী চমক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেই সাথেই বিনামূল্যে রেশন ও পার্শ্বশিক্ষকদের মন জয় করতে কল্পতরুর ভূমিকায় মুখ্যমন্ত্রী।শুক্রবার ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশ করার সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আগামী অর্থবর্ষ থেকে প্রতিবছর দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ট্যাব দেওয়া হবে। যাতে তাঁদের পড়াশোনার সুবিধা হয়। এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘তরুণের স্বপ্ন’।
এদিন তিনি আরও ঘোষণা করেন, শুধু চলতি বছরের ৩০ জুন অবধি নয়। তার পরেও বিনামূল্যে রেশন মিলবে বাংলায়। একইসঙ্গে ‘মা’ নামে এক নতুন প্রকল্পের সূচনার কথা এদিন ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, রাজ্য জুড়ে তৈরি করা হবে ‘মা’ নামে কমন কিচেন। যেখান থেকে সামান্য কিছু অর্থ ব্যয় করে দু’বেলার খাবার পাবেন সমাজের দুঃস্থ মানুষজন। পাশাপাশি এদিন রাজ্যে আরও ২২০০ পার্শ্বশিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারেও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশ করার সময় মুখ্যমন্ত্রী জানান, আমাদের কল্যাণমূলক কর্মসূচি চলছে চলবে।’ এদিন রাজ্যে পিছিয়ে পড়া জনজাতিদের আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রথমেই তাঁদের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের স্বার্থে একাধিক ব্যয় বরাদ্দর কথা ঘোষণা করা হয় বাজেটে। তিনি ঘোষণা করেন, তফশিলি জাতি, আদিবাসী ও দুঃস্থ মানুষদের জন্য ১০০টি নতুন ইংরেজি মাধ্যম স্কুল তৈরি করবে সরকার। যে সমস্ত এলাকায় তফশিলি জাতি, আদিবাসী ও দুঃস্থ মানুষের সংখ্যা বেশি সেই সমস্ত অঞ্চলে আগামী তিন বছরে ১০০টি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল তৈরি করা হবে। এর জন্য আগাম অর্থবর্ষে ৫০ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
এছাড়া অলচিকি ভাষার জন্য ৫০০টি নতুন স্কুল ও দেড় হাজার প্যারা টিচার নিয়োগ করা হবে। আগামী ৫ বছরে এই কাজ করা হবে। এর জন্য আগামী অর্থবর্ষে ১০০ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ করা হল। নেপালি, হিন্দি, উর্দু, কামতাপুরী, কুর্মালি ভাষার জন্য ১০০টি নতুন স্কুল করা হবে। এর জন্য ৩০০ প্যারা টিচার নিয়োগ করা হবে। এই বাবদ ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। চা–বাগান এলাকায় আগামী ৫ বছরে ১০০টি সাদ্রি ভাষার বিদ্যালয় স্থাপন করার প্রস্তাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এর জন্য ৩০০ জন প্যারা টিচার নিয়োগ করা হবে। এর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা।
এখানেই শেষ নয়, রাজবংশী ভাষার ২০০টি বিদ্যালয়কে অনুমোদন দেবে এবং আর্থিক সাহায্য করবে সরকার। এর জন্য আগামী অর্থবর্ষে বরাদ্দ করা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা এবং কিছু মাদ্রাসা স্কুল আছে যেগুলি সরকারি অনুমোদিত কিন্তু আর্থিক সাহায্য পায় না, সেগুলিকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করার জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সেইসাথেই তিনি পার্শ্বশিক্ষকদের বার্ষিক ৩% ইনক্রিমেন্ট এবং অবসরকালীন প্রাপ্ত টাকা ১ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে ৩ লক্ষ করার ঘোষণা করেন।
প্রসঙ্গত, করোনা মহামারীর জেরে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমদিকে তিনমাস, পরে আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয় এই কর্মসূচি। ২০২১ সালের ৩০ জুন অবধি বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার কথা ঘোষণা করে সরকার। এদিন বাজেটে ঘোষণা হওয়ার পর থেকে এটি আগামীদিনেও একইভাবে চলবে বলে জানানো হয়। স্বাভাবিকভাবেই এতে উপকৃত হবে বহু মানুষ। আবার অপরদিকে করোনার কারণে প্রায় ১ বছর ধরে বন্ধ স্কুল। ক্লাস চলছে অনলাইনে। ফলে প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাসকারী পড়ুয়াদের বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কারণ প্রত্যেকের কাছে স্মার্টফোন নেই। সেই কারণেই পড়ুয়াদের স্বার্থে মাস দেড়েক আগে দ্বাদশ শ্রেণির সাড়ে ৯ লক্ষ পড়ুয়াকে ট্যাব প্রদানের কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এত ট্যাব জোগাড়ে সমস্যা হওয়ায় প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। আর এবারে আগামী বছর থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে উঠলেই পড়ুয়ারা পাবে ট্যাব, ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে, নির্বাচনের আগেই এমন ধরণের ঘোষণা স্বাভাবিক ভাবেই নানান রকম প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।