নিজস্ব সংবাদদাতা: পা থেকে মাথা অবধি সবারই বিশ্বাস যে বর্তমান ‘মা-মাটি-সরকার’য়ের আমলে সরকারি চাকরিতে বিপুল পরিমাণে দুর্নীতি হয়ে থাকে। বিরোধী দলগুলি তো এ দাবি আকছার করেই থাকে কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা আদালত বারংবার সরকারি চাকরিতে নিয়োগে অস্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং প্যানেল বাতিল অবধি করে দিয়েছে। কিন্তু এবার সদ্য দলত্যাগী মন্ত্রী রাজীব বন্দোপাধ্যায় যা বললেন তাতে তাঁর দাবি সত্য হলে নিঃসন্দেহে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ নিয়ে কিভাবে দুর্নীতি হয়ে থাকে তার একটি রূপরেখা পাওয়া যেতে পারে।
বুধবার আলিপুর দুয়ারের একটি সভায় মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন বনমন্ত্রী থাকা কালীন রাজীব বন্দোপাধ্যায় কী পরিমাণ দুর্নীতি করেছেন তার তদন্ত করবে রাজ্য সরকার। আর তারই পাল্টা মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে রাজীব দাবি করেছেন, বন সহায়ক পদে চাকরির ব্যাপারে ‘সব জেলায় জেলায় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কিছু কিছু কোটা’ দিতে বলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। আলিপুরদুয়ারে বুধবার মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘যে ছেলেটা আমাদের থেকে চলে গিয়েছে, সে বন সহায়ক পদে নিয়োগ নিয়ে কিছু কারসাজি করেছে। আমাকে অনেকে এই অভিযোগ করেছে। আমরা সেটা তদন্ত করে দেখছি।’ মমতার দাবি, ‘সে চুরি করে এখন বিজেপি–তে চলে গিয়েছে।’
বুধবার হুগলির গুড়াপের সভা থেকে তারই জবাব দিলেন অধুনা বিজেপি নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এদিন পাল্টা দুর্নীতির অভিযোগ করে বলেন, ‘কোথা থেকে সুপারিশ হয়েছে, দেখাতে পারি। পুরোটাই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ। তদন্ত হোক। কোনও অসুবিধা নেই।’ রাজীব হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘আমি মুখ খুললে বটগাছ নড়ে যাবে। সব রেকর্ড করে রেখেছি। প্যানডোরা বক্স খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এখন এটুকুই থাক। প্রয়োজনে আবার বলব।’
রাজীব আরও বলেছেন , ‘মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী জেনে রাখুন, এই বন সহায়কের নিয়োগ আমি নিরপেক্ষভাবে বোর্ডের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। ৮ অক্টোবর সকাল ১০টার সময় আমি আপনাকে মেসেজ করে বলেছিলাম, বীরভূমের এক বড় নেতা আমাকে ধমকি দিয়ে বলছে যে বন সহায়কের সব চাকরি তাঁকে দিতে হবে। আপনি তার পাল্টা ফোন করে আমাকে বলেছিলেন, সব জেলায় জেলায় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কিছু কিছু কোটা তুমি দিয়ে দাও। আজকে আমায় বলছেন কারসাজি করেছে। আমার কাছে সেই মেসেজের কপি আছে।’
একইসঙ্গে এদিন রাজীব পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘কোথা কোথা থেকে সুপারিশ এসেছে, আপনার কোন নেতা–মন্ত্রী, কোন বিধায়ক সুপারিশ দিয়েছে, কোন উচ্চ নেতৃত্ব সুপারিশ দিয়েছে, কালীঘাট থেকে কার সুপারিশ এসেছে আমি সব যত্ন করে রেখে দিয়েছি। আপনি এখন আলিপুরদুয়ারে রয়েছেন। আলিপুরদুয়ারে তৃণমূলের যিনি সভাপতি তাঁরই সুপারিশের প্রমাণ আমার কাছে আছে।’
রাজীব বলেন, ‘আপনাকে তদন্তও করতে হবে না। আমি একটা রাস্তা আপনাকে বলে দিচ্ছি। প্রয়োজন হলে ওই বন সহায়কের প্যানেল আপনি বাতিল করে দিন। তা হলেই বুঝে যাবেন আসলে কী ছিল। আমার কিচ্ছু যায় আসবে না।’
রাজ্য সরকার তথা তৃণমূল বিধায়ক, মন্ত্রীদের প্রতি তোপ দেগে রাজীব এদিন আরও বলেন, ‘আপনি যখন মুখ খুলিয়েছেন, তখন এটা জেনে রাখুন বিগত দিনে বিভিন্ন দফতরে যত চুক্তিভিত্তিক চাকরি হয়েছে, সেই তালিকা কোথা থেকে এসেছে, কীভাবে নিয়োগ হয়েছে, কারা কারা চাকরি পেয়েছে, কোথা থেকে কত সুপারিশ এসেছে, সেই কাগজও আমার কাছে মজুত রয়েছে। আমি সব তথ্য আপনাকে দিয়ে দেব। আপনি তদন্ত করুন।’
এদিন রাজীব বন্দোপাধ্যায় যা যা বলেছেন তা অনেকেই অনেকবার বলেছেন। তৃনমূল ছাড়ার পর পরই বিজেপির বর্তমান সাংসদ সৌমিত্র খাঁ দাবি করেছিলেন, এসএসসি নিয়োগের ক্ষেত্রে অভিষেক বন্দোপাধ্যায় কিভাবে কেস পিছু তাঁকে দিয়ে টাকা তুলিয়েছেন। সম্প্রতি এই একই দাবি করেছেন তৃনমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া শুভেন্দু অধিকারীও। কিন্তু নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বয়ং তৃনমূল সুপ্রিমো নিজেও হস্তক্ষেপ করেন এমন দাবি প্রথম উঠল যা কিনা করলেন রাজীব বন্দোপাধ্যায়।