শশাঙ্ক প্রধান : শনিবার রাতে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং থানার খড়ুই গ্রামের বিজেপির সভায় হামলার ঘটনায় ২তৃনমূল নেতা সহ ৪২জনের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় এফআইআর (FIR) দায়ের করল পুলিশ যা স্মরনারিত কালের মধ্যে হয়নি বলেই জানিয়েছেন বিরোধীরা। বিজেপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিধানসভা নির্বাচনের মুখে পুলিশকে নিরপেক্ষ হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন যে কড়া ভূমিকা নিয়েছে তার ফলেই বাধ্য হয়ে পুলিশ শাসকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে এই ধরনের কঠিন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে। বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, এতদিন শাসকদলের বিরুদ্ধে মুখ খুলে উল্টে বিরোধীদেরই পুলিশি হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছে।
উল্লেখ্য শনিবার রাতে খড়াই নামক ওই গ্রামে বিজেপির একটি সভা চলাকালীন হামলার অভিযোগ ওঠে তৃনমূল আশ্রিত দুষ্কৃতিদের বিরুদ্ধে যার নেতৃত্বে সবং পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধক্ষ্য এবং রাজ্যসভার সদস্য মানস ভূঁইয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ তরুণ মিশ্র এবং স্থানীয় ভেমুয়া অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি রাজীব শী ছিলেন বলে বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। অভিযোগ আরও যে এই ঘটনায় পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আরেক ডাকসাইটে তৃনমূল কর্মী লালমোহন ভূঁইয়া ছিলেন। বিজেপির পক্ষ থেকে এই তিনজন সহ ৪২ জন স্থানীয় তৃনমূল কর্মী নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। সবং পুলিশ সবার বিরুদ্ধেই খুনের চেষ্টা সহ প্রায় ৯টি ধারায় মামলা দায়ের করেছে। এরমধ্যে অন্ততঃ ৪টি ধারাই অজামিনযোগ্য বলে জানা যাচ্ছে। খুনের চেষ্টা সহ বাকি অজামিনযোগ্য অপরাধ যুক্ত ধারার মধ্যে রয়েছে মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র সহ হামলা।
শনিবারের ঘটনায় ২মহিলা সমেত ৬জন বিজেপি সমর্থক কর্মী আহত হয়েছেন যাঁদের মধ্যে একজন ৭০বছরের বৃদ্ধও রয়েছেন বলে বিজেপির দাবি। বিজেপির পক্ষে আরও জানানো হয়েছে আহত হওয়ার পরেও ওই মহিলা সহ বাকিদের প্রায় ২ঘন্টা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছিল। রবিবার ঘটনাস্থলে সাংবাদিকরা গেলে তাঁদের গোছা গোছা সুতলি দড়ির টুকরো হাতে তুলে নিয়ে দেখান মহিলারা। বারুদের গন্ধমাখা ওই পোড়া দড়ির টুকরো ব্যবহৃত বোমার বলেই জানিয়েছেন তাঁরা। বলেছেন রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ এই আক্রমন করা হয় যখন বিজেপি কর্মীরা মিটিং শেষে খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
খড়াই গ্রামের মহিলারা প্রশ্ন তুলেছেন, কেন মহিলারা এই হিংসার শিকার হবেন যেখানে তাঁরা সরাসরি রাজনীতি করেননা। আহত গৃহবধূরা চিৎকার চেঁচামেচি শুনে বাইরে এসেছিল তাঁদের মারা হয়েছে। মহিলারা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন যেখানে রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী স্বয়ং মহিলা সেখানে মহিলাদের গায়ে হাত দেয় কি করে তারই দলের লোকেরা? মহিলারা আরও অভিযোগ করেছেন যে এই এলাকায় তাঁদের কে ১০০দিনের কাজ দেওয়া হয়না।
ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার সকাল থেকেই থানা ঘেরাও করে বিজেপি কর্মী সমর্থকরা। বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভানেত্রী অন্তরা ভট্টাচার্য, সবং নেতা অমূল্য মাইতি প্রমুখদের নেতৃত্বে চলে থানা ঘেরাও। বিজেপি সমর্থকরা অভিযোগ করেন পুলিশ অভিযোগ নিতে টালবাহানা করছে। বেলা ১টা অবধি চলে ঘেরাও অভিযান। পরে বিজেপি কর্মীরা যখন জানতে পারেন পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে তখন তাঁরা ঘেরাও মুক্ত করে।
যদিও তৃনমূলের তরফে দাবি করা হয়েছে আদি বনাম নব্য বিজেপির সংঘাতকে তাঁদের বিরুদ্ধে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত রাজীব শী বলেছেন, ‘ওই গ্রামে আমাদের সংগঠন অত্যন্ত শক্তিশালী। তাই কেন আমরা ওখানে গন্ডগোল করতে যাব? বরং ওই এলাকায় আদি বনাম নব্যের দ্বন্দ্ব রয়েছে। ঘটনার সময় আমাদের কিছু কর্মী ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিল তাঁদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় বিজেপি কর্মীরা। আমাদের ৫জন কর্মী ওদের হামলায় আহত হয়েছেন।’ রাজীবের আরও অভিযোগ ওই গ্রামে একজন বিজেপি মনোভাবাপন্ন সেনাবাহিনীর জওয়ান রয়েছে। সে ছুটিতে বাড়িতে আসলেই এই ধরনের গন্ডগোলের বাতাবরণ তৈরি করে।
তৃনমূলের সবং ব্লক সভাপতি অমল পন্ডা বলেছেন শনিবার সরকারের একটি শ্রম মেলার অনুষ্ঠান ছিল যেখানে তরুণ বা রাজীব দুজনেই ছিল। এরপর ওরা কখন গিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে তবে বলতে পারব।বিজেপি একটি রাজনৈতিক দল। তাঁদের মিটিং করার অধিকার আছে। সেখানে আমাদের কর্মীরা হামলা চালাতে যাবে কেন?”
ঘটনা যাই হোকনা কেন এই ঘটনায় যথেষ্টই চাপে পড়ে গেল তৃনমূল কংগ্রেস। কারন যদি নির্বাচন কমিশনের চাপেই পুলিশ দুই নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর নিতে বাধ্য হয়ে থাকেন তবে সেই কমিশনের চাপেই পুলিশ এঁদের গ্রেপ্তার করতে বাধ্য থাকবে কারন নির্বাচনের প্রাক্কালে এই ধরনের অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করার জন্য কমিশনের বিশেষ নির্দেশিকা থাকে। গ্রেপ্তার হলে কিংবা গ্রেপ্তার এড়াতে গেলে ওই এলাকায় রাজনৈতিক কার্যক্রম পালনে অসুবিধায় পড়বে তৃনমূল কারন তাদের এতজন নেতাকর্মী জড়িত হয়ে গেছে।