নিউজ ডেস্ক: রাজধানী জুড়ে জোরদার করা হল নিরাপত্তা। বন্ধ করা হল একাধিক মেট্রো স্টেশনের গেট। বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা। প্রজাতন্ত্র দিবসে দিন কৃষি আইন বাতিলের দাবীতে কৃষকদের ট্রাক্টর র্যালি ঘিরে ধুধুমার কাণ্ডেড় পরেই বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা।
নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে মোতায়েন করা হয়েছে ১৫ কোম্পানি সিআরপিএফ। লালকেল্লা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে আন্দোলনকারীদের। অশান্তি রুখতে লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশনের ঢোকা ও বেরনোর গেট বন্ধ রাখা হয়েছে। জামা মসজিদ মেট্রো স্টেশনের গেটও বন্ধ রয়েছে বলে জানানো হয়েছে দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশনের তরফে।
দিল্লি পুলিশ সূত্রে খবর, এই ঘটনায় ১৫টি মামলা রুজু হয়েছে। কৃষকদের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধে আহত হয়েছেন ৮৬ জন পুলিশকর্মী।
অশান্তি ঠেকাতে সিঙ্ঘু, টিকরি, গাজিপুর-সহ দিল্লির ৫টি সীমানায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজধানীতে হিংসার ঘটনায় ক্ষমা প্রার্থনা করেছে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা।
মোদি সরকারের তিনটি কৃষি প্রত্যাহারের দাবিতে, প্রজাতন্ত্র দিবসে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় দিল্লি। রাজধানীর রাস্তা দিয়ে ঝড়ের বেগে ছুটল একের পর এক ট্র্যাক্টর। মিছিলের চাপে ভেঙে পড়ল পুলিশের ব্যারিকেড। কোথাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া হয় পাথর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিবৃষ্টি করে পুলিশ। কৃষকদের ট্র্যাক্টর র্যালি শুরু হওয়ার কথা ছিল মঙ্গলবার সকাল দশটা থেকে। কিন্তু সকাল আটটা নাগাদই সিংঘু, টিকরি, গাজিপুরের দিক থেকে কৃষকরা ট্র্যাক্টর নিয়ে দিল্লির দিকে এগোতে শুরু করে। শুধু ট্র্যাক্টরই নয়, আন্দোলনকারীদের অনেকে ছিলেন ঘোড়ার পিঠে।
দিল্লি পুলিশের দাবী, আন্দোলনকারীদের আউটার রিং রোডে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু, তারা নির্ধারিত রুট ভেঙে আউটার রিং রোড দিয়ে দিল্লিতে ঢুকে পড়ে। একের পর এক জায়গায় তৈরি হয় রণক্ষেত্র পরিস্থিতি। দিল্লির আইটিও এলাকায় পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে দেয় কৃষকেরা। স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার যে জায়গায় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা তোলেন, প্রজাতন্ত্র দিবসের সকালে সেই খুঁটিতে চড়ে কৃষক সংগঠনের ঝান্ডা লাগিয়ে দেন হরিয়ানা-পাঞ্জাব সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা বিক্ষোভকারী কৃষকেরা।
সংবাদসংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, এক বিক্ষোভরত কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ চলাকালীন ট্র্যাক্টরটি উল্টে তাঁর মৃত্যু হয় বলে খবর। তবে কৃষকদের অভিযোগ, দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে ঢোকার মুখে তাঁদের পথ আটকায় পুলিশ। এমনকি গুলিও চালানো হয় বলে অভিযোগ। বিক্ষোভকারীদের দাবী, ট্র্যাক্টরটিতে সেই গুলি এসে লাগে। তাতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় ট্র্যাক্টরটি। তার নীচে চাপা পড়ে মৃত্যু হয় ওই কৃষকের।
প্রসঙ্গত, কালা কৃষি আইন বাতিলের দাবীতে প্রায় দুমাস ধরে দিল্লীর বিভিন্ন সীমান্ত আটকে বিক্ষোভ অবস্থানে সামিল হন কৃষকেরা। কেন্দ্রে সাথে কয়েক দফা বৈঠকেও মেলেনি সমাধান সূত্র। এরপর প্রজাতন্ত্রের দিন ট্রাক্টর র্যালির সিদ্ধান্ত নেয় কৃষক সংগঠনগুলি। এই বিষয়ে কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেও শীর্ষ আদালতের তীব্র ভৎর্স্যনার শিকার হতে হয় কেন্দ্রকে। রায় যায় কৃষকদের পক্ষে, এরপর দীর্ঘ টালবাহানার পর দিল্লী পুলিশের পক্ষ থেকে অনুমতি পান কৃষকেরা। ঠিক করে দেওয়া হয় ট্রাক্টর মিছিলের রুট ম্যাপ। কিন্তু নির্ধারিত দিনে সময়ের আগেই এবং রুট ভেঙ্গে মিছিল এগোতে গেলেই শুরু হয় ধুন্ধুমার পরিস্থিতির।