নিউজ ডেস্ক: লালকেল্লায় গেট ভেঙে নিজেদের সংগঠনের পতাকা লাগিয়ে দিল কৃষকদের একটি দল। পাশাপাশি একটি ধর্মীয় সংগঠনের পতাকাও লাগানো হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। এদিন সকাল থেকেই দিল্লির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা প্রকট হয়েছে। কৃষকদের ট্র্যাক্টর মিছিল ঘিরে তুলকালাম কাণ্ড দিল্লী ও দিল্লী লাগোয়া পার্শ্ববর্তী এলাকা জুড়ে। কৃষক ও পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ একাধিক স্থানে। কৃষকদে হটাতে পুলিশের লাঠিচার্জ। চলেছে জলকামান, ফাটানো হয়েছে কাঁদানে গ্যাসের শেল। পাল্টা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শুরু হয়ে যায় মিছিল। মানা হয়নি নির্ধারিত রুটও। এই কারণেই ধুন্ধুমার কাণ্ড।
২৬ শে জানুয়ারি কৃষি আইন বাতিলের দাবীতে কৃষকদের ট্রাক্টর র্যালি দিল্লীর রাজপথে। সেই মিছিল ঘিরেই অশান্ত রাজধানী শহর। বিক্ষোভকারী কৃষক নেতারা জানিয়েছেন, নির্ধারিত রুটে মিছিলের কথা থাকলেও কয়েকটি সংগঠন তা লঙ্ঘন করেছে। কৃষক নেতারা জানিয়েছেন, বৈঠকে নির্ধারিত রুট মেনে মিছিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কয়েকটি সংগঠনে আগেভাগেই মিছিল শুরু করে দিয়েছে। সঙ্গে নির্ধারিত রুটেও যেতে চাইছে না। কৃষক নেতা নরেশ নেতা বলেন, ‘এরা যুবপ্রজন্মের এবং আবেগে ভেসে গিয়েছে। আমরা সবাইকে শান্তিপূর্ণ এবং অহিংসাত্মক বিক্ষোভের আর্জি জানাচ্ছি।’
জানা যায়, এদিন সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ সিংঘু এবং টিকরি সীমান্তে ব্যারিকেড ভেঙে আউটার রিং রোডের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কৃষকদের মিছিল। যে রাস্তা মিছিলের নির্ধারিত রুটে নেই। রুট না মেনে ট্রাক্টর মিছিল এগিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে সঞ্জয় গান্ধী ট্রান্সপোর্ট নগরে পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে খণ্ডযুদ্ধ হয়। কৃষকরা জলকামানের গাড়ির মাথায় উঠে যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ।
অন্যদিকে, গাজিপুর সীমান্তে ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করছেন কৃষকরা। তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়েছে পুলিশ।
সরাই কালে খানে রিং রোডে পৌঁছে গিয়েছেন শয়ে শয়ে বিক্ষোভকারী কৃষক। তাঁরা মধ্য দিল্লিল আইটিওয়ের অভিমুখে যাচ্ছেন। যা নির্ধারিত রুটে ছিল না। কড়া নিরাপত্তা সত্ত্বেও পুলিশের তুলনায় কৃষকদের সংখ্যা ঢের বেশি ছিল। তাঁরা রিং রোডের দু’দিকের রাস্তার দখল নিয়ে নেন। ইন্ডিয়া গেট থেকে দূরত্ব মেরেকেটে চার কিলোমিটার হওয়ায় কৃষকদের এগোতে দেয়নি পুলিশ। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা ডিভাইডারের উপর ট্র্যাক্টর তুলে দেন। এরপর আইটিওতে দিল্লি পরিবহন নিগমে ভাঙচুর চালান বিক্ষোভকারী কৃষকরা। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে দেন। ভাঙচুর চালানো হয় পুলিশের গাড়িতেও। তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে সেখানেও কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ।
বিক্ষোভরত ৪১ টি কৃষক সংগঠনের মাথা সংযুক্ত কিষান মোর্চার এক নেতা জানান, কিষান মজদুর সংঘর্ষ কমিটির সদস্যরা ব্যারিকেড ভেঙেছেন। দিল্লীর বিভিন্ন প্রান্তে কৃষক বিক্ষোভে নেতৃত্ব প্রদানকারী ওই সদস্য জানিয়েছেন, পুলিশের সবুজ সংকেত পাওয়ার পর নির্দিষ্ট সময় ট্র্যাক্টর মিছিল শুরু করে সংযুক্ত কিষান মোর্চা। সোমবারই কিষান মজদুর সংঘর্ষ কমিটি জানিয়েছিল, দিল্লির অন্যতম ব্যস্ত আউটার রিং রোডে বিক্ষোভ দেখানো হবে। সেই রেশ ধরে মঙ্গলবার কৃষক সংগঠনের সভাপতি সতনম সিং পান্নু জানিয়েছেন, পুলিশের নির্ধারিত রুট মেনে চলবেন না। তিনি বলেন, ‘আউটার রিং রোডে আমরা ট্র্যাক্টর মিছিল করব। ব্যারিকেড সরিয়ে নেওয়ার জন্য দিল্লি পুলিশকে ৪৫ মিনিট সময় দিয়েছি।’
আর রুট ভঙ্গ করতে গিয়েই এমন রক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে, দিল্লীর একাধিক জায়গা। বিক্ষোভ এখন অব্যাহত। কৃষকদের সংগঠন গুলির সমন্বয়কারি নেতৃত্বের একজন নেতা যোগেন্দ্র যাদব বলেছেন, “আমরা সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি। মনে রাখতে হবে শান্তি পূর্ন আন্দোলনই আমাদের শক্তি। তবে ঘটনা এটাও যে এই সংগঠনগুলির মধ্যে একটি সংগঠন আমাদের মঞ্চের মধ্যে নেই। সেটা আমরা পুলিশকে জানিয়েওছি। আমরা এখনও আশাবাদী যে শেষ অবধি সব শান্তিপূর্ণ ভাবেই মিটে যাবে।” দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।