অশ্লেষা চৌধুরী: ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তথা যুব তৃণমূল সভাপতির সভায় আমন্ত্রণ না পেয়ে বেজায় চটলেন জয়নগরের সংসদ। ক্ষোভ ব্যক্ত করে প্রতিমা দেবী বলেন যে ২০১৬ সালের পর থেকে তাকে তার দলীয় কোন সভায় উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় না। এমনকি ডাকা হয় না। ২০১৯ সালে শুধুমাত্র একটি সভায় তাকে ডাকা হয়েছিল। আর আজ নিজের সংসদীয় এলাকাতেও তার সাথে এহেন আচরণ।
যুব তৃণমূল কংগ্রেসের দক্ষিণ ২৪ পরগনার সভাপতি তথা ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লার বিরুদ্ধে ক্ষোভ ব্যক্ত করে তিনি বলেন যে , তাকে ক্যানিং পূর্ব কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয় না। যদিও ওই বিধানসভা কেন্দ্রটি তারই সংসদীয় এলাকার মধ্যে পড়ে। তিনি আরও বলেন যে, এদিনের সভার ব্যাপারে একটা চিঠি তার সিকিউরিটির কাছে দেওয়া হয়েছিল। তাতে সাংসদ হিসাবে তার নাম লেখা ছিল না। ক্ষুদ্ধ প্রতিমা মন্ডল আরও বলেন কোন দোকান উদ্বোধন করার জন্য এলাকার লোকদের কাছে যে চিঠি দেওয়া হয়ে থাকে ওই চিঠি ছিল সেরকমই।
উল্লেখ্য, রবিবার কুলতলিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এদিনের সভা থেকে তিনি শুভেন্দু, শোভন দলত্যাগী নেতা সহ গেরুয়া শিবিরের অন্যান্য নেতাদেরও একের পর এক তোপ দাগেন। কিন্তু এই সভাতে তার দলীয় সাংসদের অনুপস্থিতি ঘিরেই তৈরি হয়েছে জল্পনা।
প্রসঙ্গত জয়নগর সংসদীয় এলাকার মধ্যেই পড়ে কুলতলি। বাকি ছয় বিধানসভা কেন্দ্রগুলি হল গোসাবা, বাসন্তী, জয়নগর, ক্যানিং পশ্চিম, ক্যানিং পূর্ব এবং মগরাহাট পশ্চিম। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডায়মন্ড হারবারের সভাতেও উপস্থিত ছিলেন না ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়করা। এঁরা হলেন, ডায়মণ্ডহারবারের দীপক হালদার, মহেশতলার দুলাল দাস এবং সাতগাছিয়ার তৃণমূল বিধায়ক সোনালী গুহ। সাতগাছিয়ায় অভিষেকের সভাতেও দেখা যায়নি দীপক হালদার ও দুলাল দাসকে। এই দুই বিধায়ক দুবারই অভিযোগ করেছিলেন, তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি ওই সভায়। পরে অবশ্য দীপক হালদারকে দেখা গিয়েছিল শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে।
আর এদিন ক্ষুদ্ধ তৃণমূল সাংসদ প্রতিমা মন্ডলের সাক্ষাৎকার আবারও নতুন করে জল্পনার জন্ম দিল। সংবাদ মাধ্যমে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘২০১৪-তে তিনি একলক্ষের বেশি ভোটে জয়ী হয়েছিলে। আর ২০১৯-এ সেই ব্যবধান ছিল সাড়ে তিনলক্ষের কাছাকাছি। তিনি মানুষের ভোটে জিতেছেন। জনগণ তাঁকে নির্বাচিত করেছে। তাঁদেরই তিনি প্রথমে সম্মান জানাতে চান। আর দলের যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে ডাকবে। আর ২০১৪ সালে দল ভাবলে তিনি ফের মানুষের কাছে যাবেন।‘
বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, শাসক শিবির যেন ততটাই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। একের পর এক বেসুরো বাজতে শুরু করেছেন সকলে। কখনও কেউ ইস্তফা দিচ্ছেন, তো কখনও দল কাউকে বহিষ্কার করছে। বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করার সুযোগ ছাড়ছে না পদ্ম শিবির। বার বার শাসকদলকে দলের পরিবর্তে পিসি-ভাইপো প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি বলে কটাক্ষ করছেন তারা। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শা বঙ্গে আসার দিন শুভেন্দু সহ এক ঝাঁক বিধায়ক-সাংসদ পদ্ম শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন। এবার চলতি মাসে শেষের দিকেই ফের বঙ্গ সফরে আসবেন অমিত শা। তার আগেই শুক্রবার রাজ্যের মন্ত্রীত্ব ছেড়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ অভিষেকের সভায় আমন্ত্রণ না পেয়ে ক্ষুদ্ধ সাংসদ প্রতিমার বেসুরো মন্তব্য, এছাড়াও আরও দু’ডজন এমন বেসুরো তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের নাম ঘোরা ফেরা করছে রাজনৈতিক মহলে, যা ইঙ্গিত দিচ্ছে চলতি মাসেও ডিসেম্বরের ঘটনারই পুরাবৃত্তি হয়তো ঘটতে চলেছে!