নিজস্ব সংবাদদাতা: বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ৬ হাজারে জেতা বিধায়ক আসনটিতে তৃনমূলের প্রদীপ সরকারে জিতিয়ে ছিলেন ২০হাজার ভোটে। মাত্র বছর খানেক আগের সেই ভোট যুদ্ধে শুভেন্দু অধিকারীর সেনাপতি ছিলেন ৫২ জন তৃনমূল কর্মী। খড়গপুর শহরের ৩৫টি ওয়ার্ডে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সেই ৫২জনকে উপ নির্বাচনের পরেই পুরষ্কার স্বরূপ তুলে দিয়েছিলেন একটি করে স্মার্টফোন। বলেছিলেন, ‘আসছে বছর আবার হবে।’
সেই আসছে বছর মানে ২০২১ সাল, বিধানসভা নির্বাচনের আর কয়েকটা মাস। এবার চিত্রটা ফের বদলে দেওয়ার। এবার দিলীপ ঘোষের আসন দিলীপ ঘোষ তথা বিজেপিকেই ফিরিয়ে দেওয়ার লড়াই শুরু করলেন বিজেপি। শুক্রবার সন্ধ্যায় খড়গপুর শহরের ১৮নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে মিলিত হতে এসেছিলেন শুভেন্দু। দিলীপ ঘোষের আহুত সেই সভায় শুভেন্দু পেয়ে গেলেন সেই ৫২জনের ৩৪ জনকেই!
বৃহস্পতিবার কেশপুরের সভা থেকেই শুভেন্দু ঘোষণা করেছিলেন, খড়গপুর সদরে বিজেপির জেতা আসনে তৃণমূলকে যেমন জয় পাইয়ে দিয়েছিলেন ঠিক তেমনই বিজেপিকে খড়গপুর ফিরিয়ে দেবেন তিনি। সেই ঘোষনার ২৪ঘন্টার মধ্যেই সেই লড়াই শুরু করে দিলেন তিনি আর সেই লড়াইয়ে প্রথম দিনেই পুরানো শিবিরের ৩৪ জন যোদ্ধাকে পেয়ে রীতিমত উচ্ছসিত শুভেন্দু। যদিও মুখে সে কথা প্রকাশ করেননি শুভেন্দু, কথা হয়েছে চোখে চোখেই।
শুভেন্দুর নিজস্ব টিমের সেই ৩৪ জনের একজন ১৮নম্বর ওয়ার্ডের এক তরুণ তুর্কি, হিন্দিভাষী যোদ্ধা জানালেন, ‘দাদা কো সাথ আ্যয়সি হি বাত থা। ফিল হাল হাম লোগ খুল্লাম খুল্লা আমনা সামনা নেহি হোঙ্গে। কিঁউকি আপ জানতে হো কী টিএমসি বালো হামে ঝুটমুট ফাঁসা সকতা। ইলেকশন ঘোষিত্ হোনে কি বাদ হি হামলোগ ময়দান পে উতরেঙ্গে।’ ( দাদার সাথে আমাদের এমনি কথা হয়েছে। এখুনি আমরা খোলাখুলি প্রকাশ্যে আসবনা। কারন আপনি তো জানেনই যে তৃনমূল আমাদের মামলায় ফাঁসিয়ে দিতে পারে। )
এদিকে শুক্রবার শুভেন্দুর এই খড়গপুর অভিযানকে ব্যর্থ করার জন্যই ১৮নম্বর ওয়ার্ডেই বিজেপির সভা থেকে ৪০০মিটারের মধ্যেই পাল্টা সভা করে তৃনমূল এমনই অভিযোগ করেছে বিজেপি। তৃনমূলের সভার সেই মাইক বাঁধা হয় শুভেন্দু-দিলীপের সভার গায়ে। ফলে বিজেপির সভার কথা শুনতে যথেষ্ট অসুবিধা হচ্ছিল। এই অবস্থা দেখে দিলীপ মজা করে শুভেন্দুকে বলেছেন, ‘দেখুন কেমন চ্যালা তৈরি করেছিলেন যে অপরের সভা পন্ড করার এমন কু-বুদ্ধি বের করে।” শুভেন্দু সভার বিজেপি সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনার এত জোরে শ্লোগান দিন যে পূজার চেয়েও যেন আওয়াজ বেশি হয়।” এদিন আক্ষরিক অর্থেই ভিড় উপচে পড়েছে শুভেন্দু-দিলীপের সভায়। ১৮নম্বর ওয়ার্ডের একটি বড় কর্মী বাহিনী যাঁরা প্রদীপ সরকারের হয়ে নির্বাচন লড়েছিলেন তাঁদের উপস্থিত থাকতেও দেখা গিয়েছে।
একবছর আগে বিজেপির প্রার্থী প্রেমচন্দ ঝার বিরোধিতা করেছিলেন এমন বিজেপি কর্মী সমর্থকদের কৌশলে কাজে লাগিয়েছিলেন শুভেন্দু। বিজেপির সেই অংশকেও ফেরাতে তৎপর হয়েছেন তিনি। খড়গপুর তৃনমূলে বিজেপির যেমন দুটি গোষ্ঠী সক্রিয় তেমনই তৃনমূলে সক্রিয় ৫টি গোষ্ঠী যার দুটি গোষ্ঠীর নেতা কর্মীরা আবার এদিন তৃনমূলের সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। শুভেন্দুর লড়াই এখন তৃনমূলের ঘরের অনৈক্যকে বজায় রেখে বিজেপির ঐক্যকে ফিরিয়ে আনা। সেই কাজটিতে প্রথম দিনেই কী একটু এগিয়ে গেলেন শুভেন্দু? ৩৪ জনের তালিকা পকেটে পুরে সেই হাসিটাই বোধহয় হেসে গেলেন তিনি।