অশ্লেষা চৌধুরী: শুভেন্দু অধিকারী দলে থাকবেননা জানত তৃনমূল, মিহির গোস্বামী দলে থাকবেনা তাও জানত তৃনমূল এমন কী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের লাগাতার দল বিরোধী মন্তব্যের পরেও তাঁকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়নি তৃনমূল কারন স্নায়ুর লড়াইয়ে তৃনমূল চেয়েছিল এঁদের শহিদ হতে না দিয়ে বরং ‘মীরজাফর’ মার্কা পাল্টা প্রচারের সুবিধা নিতে। কিন্তু সেই স্নায়ুর চাপ বেশিদিন ধরে রাখা সম্ভব হলনা তৃনমূলের পক্ষে। শুক্রবার সকালে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ তৃনমূলের মানসিক দৃঢ়তার দেওয়ালে এতটাই আঘাত এনেছিল যে তাঁর পদত্যাগের ৮ঘন্টার মধ্যেই দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বালির বিধায়ক বৈশাখী ডালমিয়াকে বহিষ্কার করা হল। গত কয়েকদিন ধরেই তৃণমূল ছাড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন বৈশালী কিন্তু তাঁকে সেই সুযোগ না দিয়েই বহিষ্কার করা হল। গত তিন-চার মাস ধরে চলা দলের ডামাডোলের বাজারে বৈশালী ডালমিয়াই হলেন প্রথম বিধায়ক যাকে বহিষ্কার করল দল। এরফলে দলত্যাগ বিরোধী আইন অনুযায়ী বৈশালীর বিধায়ক পদ ছাড়ার কোনোও বাধ্যবাধকতা রইলনা বৈশালী ডালমিয়াকে বহিষ্কারের এই সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “তৃণমূলের মধ্যে মুষলপর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে।”
বেশ কিছুদিন ধরেই বেসুরো বাজছিলেন বৈশালী। মাস দুয়েক আগে তৃনমূলকে কটাক্ষ করে প্রথম মুখ খুলে বলেছিলেন, “এঁরা (তৃনমূল )প্রধানমন্ত্রীকেই বহিরাগত বলে।” উল্লেখ্য বেশ কিছুদিন ধরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃনমূলের নেতারা এরাজ্যে সংগঠনের জন্য আসা বিজেপির নেতাদের বহিরাগত বলছিলেন। বৈশালীর সেই কটাক্ষের পরেও তাঁকে বহিষ্কার তো দুরের কথা সামান্য তিরস্কার করার কথাও ভাবেনি তৃনমূলের নেতারা। এরপরও লাগাতার দল বিরোধী মন্তব্য করে গেছেন তিনি।
শুক্রবার সকালে রাজীবের ইস্তফার পর দলের অভ্যন্তরীন বিষয় নিয়ে ফের প্রকাশ্যে সুর চড়ান বৈশালী। রাজীবের পাশে দাঁড়িয়ে দলের কিছু নেতার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে সরব হন তিনি। বিশেষ করে নাম না করে মন্ত্রী অরূপ রায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফা প্রসঙ্গে বৈশালী এদিন নাম না করে মন্ত্রী অরূপ রায়কে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, ‘সবার প্রতি তাচ্ছিল্য ভাব প্রকাশ করেন উনি। মন্ত্রিত্ব একটা আলঙ্কারিক পোস্ট। জনগণ সেটা দেয়নি। কিন্তু জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমরা সবাই সমান।’
এছাড়াও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফার প্রতিক্রিয়ায় বৈশালী বলেছিলেন যে, “রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রীত্ব ত্যাগে আমাদের অনেকটাই ক্ষতি হয়ে গেল। সেটা শুধু দলের ক্ষতি নয়, সাধারণ মানুষের জন্যও ক্ষতি হল। এইরকম একজন দায়িত্ববান মন্ত্রী যে দল ছাড়লেন সেটা বিরাট চিন্তা ও দুঃখের বিষয়। সত্যি কাজ করা অসুবিধা হচ্ছে। প্রত্যেকে যেমন দলকে ভালবাসে তেমন নিজের আত্মমর্যাদাও রয়েছে। যাঁদের আত্মমর্যাদা রয়েছে তাঁরা কোনও সময় অপমান নিতে পারেন না।”
শুধু তাই নয়, এর আগে লক্ষ্মীরতন শুক্লার মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফার দিনেও দলের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন বালির বিধায়ক। বলেছিলেন, উইপোকারা দলকে কুরে কুরে খাচ্ছে। দলের বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ করতে থাকেন তিনি। তারই মাঝে জল্পনা ওঠে যে বৈশালীও দলত্যাগ করতে পারেন। কিছুদিন আগে থেকেই বৈশালীর নানা আচরণ রাজনৈতিক মহলে জল্পনার জন্ম দেয়। আর তার দল ত্যাগ করার আগেই তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করল তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি।
এই বিষয়ে অরূপ রায় বলেন, “দলের সঠিক সিদ্ধান্ত। যাঁরা দলের বিরুদ্ধে কথা বলে, দলকে বারবার বিব্রত করার চেষ্টা করে, এমন কাজ করে যাতে দলের দুর্নাম হয়, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত। আমার বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ থাকতেই পারে। দলের বিরুদ্ধে নানা কথে বলেন কেউ, দল বিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, দলের নীতি মানেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা সঠিক।”
অন্যদিকে, বৈশালীর এই বহিষ্কার নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বঙ্গ বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, “তৃণমূলের মধ্যে মুষলপর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে। অনেক কিছুই বাকি আছে এখনও। অনেক ঘটনাই ঘটবে। কারণ কেউ ইচ্ছা করে থাকতে চাইছে না। আর কাউকে ওরা রাখতে চাইছে না। এই করতে করতে পার্টিটা ফাঁকা হয়ে যাবে। পরিবর্তন যত এগিয়ে আসছে, ততই পার্টির মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব দেখা যাচ্ছে। আর সেটা গুলি অবধি চলছে। এই দলটা যতদিন থাকবে পশ্চিমবঙ্গে শান্তি আসবে না। যেভাবে চারদিক থেকে জুটিয়ে পার্টিতে এনেছিল সেইভাবে ফাঁকা হয়ে যাবে।”