নিজস্ব সংবাদদাতা: ২০১৭ সালে তিনি তখন কংগ্রেস বিধায়ক। একটি নৌকাডুবির ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে পুলিশের হাতে বেধড়ক মার খেয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছিলেন। গায়ের জামা খুলে বাংলাকে দেখিয়েছিলেন রক্তাক্ত পিঠ। যদিও বেশিদিন সময় নেননি। যে তৃনমূল সরকারের পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন কয়েকদিনের মধ্যে সেই তৃনমূলেই যোগ দেন। তিনি অরিন্দম ভট্টাচার্য, কংগ্রেস থেকে নির্বাচিত হওয়া স্বত্ত্বেও বিধায়ক পদ ছাড়ার দায়বদ্ধতা দেখাননি। তৃনমূলও তখন সর্বগ্রাসী রূপ নিয়ে বিরোধী দল ভাঙাতে ব্যস্ত। নীতি নৈতিকতার বালাই ছিলনা তাদেরও। অরিন্দমের বিরুদ্ধে যে তৃনমূল কর্মীরা লড়াই করেছিলেন তাঁদের পেছনে ফেলে শান্তিপুরের তৃনমূল মুখ হয়ে ওঠেন অরিন্দমই। বুধবার ফের তৃনমূলকে ল্যাং মেরে বিজেপিতে ভিড়লেন অরিন্দম ভট্টাচার্য। আরও একটি উইকেট পড়ে গেল তৃনমূলের। কৈলাশ বিজয়বর্গীয় কিংবা দিলীপ ঘোষদের বক্তব্য ছিল, বিধানসভা নির্বাচনের আগে দল বাঁচাক তৃনমূল। বুধবার সেই নেতাদের বুকের ছাতি ফের চওড়া হল।
বুধবার দুপুরেই দিল্লি পৌঁছে গেছিলেন অরিন্দম ভট্টাচার্য। তারপর চলে যান দিল্লিতে বিজেপির সদর দপ্তরে। এরপর একটি অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক তথা কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের হাত থেকে বিজেপির পতাকা তুলে নেন তিনি। বিজেপিতে যোগ দিয়ে তৃনমূল ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন অরিন্দম। জানিয়েছেন, “তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর কোনও সুযোগ কাজের পাইনি। মানুষের জন্যে কাজ করতে চাই। আর সেই কারণেই তাঁর বিজেপিতে যোগ দিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলার লক্ষ লক্ষ যুবকের হাতে কোনও কাজ নেই। লকডাউনের সময় অনেক আশা নিয়ে ফিরেছিলেন তাঁরা। রাজ্যে ফিরলেও কোনও কাজ পাননি পরিযায়ীরা শ্রমিকরা। বাংলায় কাজ না পেয়ে ফের ভিনরাজ্যে যেতে বাধ্য হয়েছেন সেই যুবকরা।’ তিনি আরও বলেন,’পশ্চিমবঙ্গ মানেই আজ সকলের সামনে ভাসে দুর্নীতির ছবি। রাজ্য সরকারের কোনও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নেই। এখন নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বেই আত্মনির্ভর হবে বাংলা।’
এদিন শান্তিপুরের বিধায়কের সাথে তাঁর কিছু অনুগামীও বিজেপিতে যোগ দেন। শাসকদল তৃণমূলের কাছে বড়সড় ধাক্কা হিসাবেই মনে করা হচ্ছে। যদিও এই ব্যাপারে এখনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি তৃণমূল নেতৃত্বের। ২০১৬ সালে যে কয়েকজন হাতে গোনা বাম কংগ্রেস প্রার্থী ভোটে জিতেছিলেন অরিন্দম ভট্টাচার্য ছিলেন তাঁদেরই একজন। সেবার বাম-কংগ্রেসের ঘর ভেঙে ছিল তৃনমূল এবার তৃনমূলের ঘর থেকে একের পর এক বিধায়ক নেওয়া শুরু করেছে বিজেপি।
বিজেপির দাবি, আগামী বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল সরকার পড়ে যাবে। বহু মানুষ বিজেপিতে যোগ দিতে চাইছেন। শুধু তাই নয়, প্রত্যেকদিন তৃণমূল ছেড়ে নেতা-কর্মীরা বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। এরপরেই তৃণমূল বলবে, সাধারণ মানুষ তাঁদের পাশে রয়েছে? প্রশ্ন বিজেপির।
এদিন ফের কৈলাশ বিজয় বর্গীয় দাবি করেছেন, আরও বেশকিছু তৃনমূল বিধায়ক যোগাযোগ করছেন তাঁদের সাথে। দিল্লির সদর দপ্তরে কৈলাশ বলেন, “আগামী ৩০শে জানুয়ারি ফের বাংলা সফরে যাচ্ছেন অমিত শাহ। ওই সময় বিজেপিতে যোগদানের ভিড় পড়ে যাবে। তৃনমূল কংগ্রেস সিপিএম থেকে অনেকেই বিজেপিতে আসবেন।