অশ্লেষা চৌধুরী: নন্দীগ্রামে আজ মুখ্যমন্ত্রীর হাইভোল্টেজ সভা। তবে মমতার সভায় থাকছেন না শিশির-দিব্যেন্দু, অধিকারী পরিবারে অনুপস্থিতিতেই হতে চলেছে আজকের সভা। এমনকি শাসকদলের পক্ষ থেকে তাদের আমন্ত্রনও জানানো হয়নি বলে জানা গিয়েছে।
আজ পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে তেখালি ব্রিজের পাশেই জনসভা করবেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেলা সাড়ে ১২টায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি একটি প্রশাসনিক সভা করবেন। তারপর দুপুর ১টায় তিনি জনসভা করবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নন্দীগ্রামের এই জনসভায় থাকবেন না সদ্য পদ্ম শিবিরে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারীর বাবা শিশির অধিকারী ও ভাই দিব্যেন্দু।
অধিকারী পরিবারের সাথে একসময় সুসম্পর্ক বজায় থাকলেও শুভেন্দুর পদ্ম শিবিরে যোগদানের পর থেকেই সেই সম্পর্কের বাঁধন আলগা হতে শুরু করে। ছেলের পদ্ম শিবিরে যোগদানের পর থেকে দলীয় কোনও সভায় অংশ নিতে দেখা যায়নি শিশির অধিকারীকে। এরপর শিশির বাবুর আরও এক ছেলে সৌমেন্দুও দাদার পথ ধরেই পদ্ম শিবিরে যোগ দেন। যদিও তার আগে কাঁথি পরিষদ থেকে সৌমেন্দুকে সরানো হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি গোপনে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। এরপরেই অধিকারী পরিবারের সাথে শাসক দলের চাপা সংঘাত প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। এরপর গত মঙ্গলবার দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্যদ থেকে শিশির অধিকারীকে অপসারিত করে পর্ষদের নতুন চেয়ারম্যান করা হয় অখিল গিরিকে। এনিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও, তাঁর কথায় ধরা পড়েছে বিরক্তির সুর। বলেছেন, কিছু জানি না। আপনাদের কাছে শুনলাম। কেন এনেছিল, কেন সরাল জানি না। কাউকে ফোনও করব না। এর ২৪ ঘন্টা পেরোনোর আগেই ফের কোপ পড়ে অধিকারী পরিবারে, প্রশাসনিক ক্ষমতাচ্যুত করার পর শিশির বাবুর সাংগঠনিক ক্ষমতাও খর্ব করা হয়। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সভাপতির পদ থেকে অপসারিত হন শিশির অধিকারী। তাঁর জায়গায় নতুন দায়িত্ব পান সোমেন মহাপাত্র, জেনে একাধারে রাজ্যের মন্ত্রীও। এই অপসারনের পেছনে অবশ্য শিশির বাবুর অসুস্থতাকে দায়ী করেছে শাসকদল।
আর আজ দলনেত্রীর সভাতেও আমন্ত্রণ জানানো হল না শিশির অধিকারী ও দিব্যেন্দু অধিকারীকে। তবে, রবিবার সন্ধ্যায় অবশ্য শিশির অধিকারী বলেন, ‘আমার পায়ের ব্যথা এখনও ভালো হয়নি। ডাক্তার বেরোতে নিষেধ করেছে। তাই দলনেত্রীর সভায় যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও যেতে পারব না।’ তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী ফোন না ধরায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। তবে নন্দীগ্রামে মমতার সভায় অধিকারীদের সম্ভাব্য গরহাজিরা নিয়ে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘তাঁরা থাকবেন না তো আমার বলার কী আছে? হয়তো কারও হৃদয়ে ব্যথা, কারও পায়ে ব্যথা আছে। কী করে বলব, আসলে কোথায় ব্যথা।’
তবে আজ এত বছর পর নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর সভা ঘিরে প্রস্তুতি তুঙ্গে। সভাস্থলে তৈরি হয়েছে তিনটি মঞ্চ। একটি মূল মঞ্চ। অন্য দু’টির একটিতে শহিদ পরিবার ও অন্যটিতে তৃণমূল নেতৃত্বের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গোটা রাস্তা সাজানো হয়েছে ঘাসফুলের পতাকা, ব্যানার ও নেত্রীর ছবি দিয়ে। গোটা এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সভাস্থলের কাছে কড়া নজরদারি চালাচ্ছে পুলিশ।